পৌরশহর থেকে সরানো হলো দূর পাল্লার বাস, ক্ষুদ্ধ যাত্রী-মালিক পক্ষ

অনলাইন ডেস্ক:

যানজট নিরসন ও সাধারণ মানুষের চলাচল সহজ করার লক্ষ্যে সাতক্ষীরা পৌরশহরের সঙ্গীতা মোড়ে অবস্থিত দূরপাল্লার সব পরিবহন সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) কোনো পরিবহনকে কাউন্টারের সামনে থেকে যাত্রীদের বাসে উঠতে দেওয়া হয়নি। বুধবার সকাল থেকে পৌরশহরের সব পরিবহন কাউন্টার বন্ধ দেখা যায়।

জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) সকাল অভিযান চালিয়ে ট্রাফিক পুলিশ এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে। এতে শহরের যানজট লাঘব হয়েছে। তবে হঠাৎ দূরপাল্লার পরিবহন শহর থেকে সরিয়ে দেওয়ায় সাময়িক দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলার যাত্রীরা।

সাতক্ষীরা শহরের যানজট নিরসনের লক্ষ্যে সোমবার (৩ এপ্রিল) জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বিশেষ সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। সভায় জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, পুলিশ প্রশাসন, বিআরটিএ কর্মকর্তা, ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা ও জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় যানজট নিরসনের লক্ষ্যে শহর থেকে দূরপাল্লার পরিবহন কাউন্টার সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া সাতক্ষীরা পৌরসভার মধ্যে অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ, যত্রতত্র পার্কিং ও যাত্রী ওঠানামা বন্ধ, সাতক্ষীরা পৌরসভা কর্তৃক অনুমোদিত অটোরিকশা ভ্রাম্যমাণভাবে পৌরসভার মধ্যে চলাচল এবং অনিবন্ধিত অটোরিকশা পৌরসভার মধ্যে চলাচল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাতক্ষীরা জেলা ট্রাফিক পুলিশ মঙ্গলবার সকাল থেকে পৌর শহরের সঙ্গিতার মোড়, পশু হাসপাতালের মোড় ও মাওয়া চাইনিজ রেস্টুরেন্ট মোড়সহ অন্য পয়েন্টে অবস্থিত বিভিন্ন দূরপাল্লার পরিবহন কাউন্টারে অভিযান চালায়।

অভিযানকালে পরিবহন সংশ্লিষ্টদেরকে জানানো হয়, শহরের মধ্যে শুধুমাত্র টিকিট বিক্রি করা যাবে। কিন্তু রাস্তার পাশ থেকে কোনো গাড়ি ছেড়ে যেতে পারবে না। দিনভর এভাবে শহরজুড়ে ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতির কারণে শহর থেকে ঢাকাসহ অন্য জেলায় দূরপাল্লার কোনো পরিবহন ছেড়ে যায়নি।

এদিকে শহর থেকে হঠাৎ দূরপাল্লার পরিবহন সরিয়ে দেওয়ায় সাময়িক ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। তারা নির্ধারিত সময়ে কাউন্টারে এসে গাড়ি না পেয়ে বিকল্প ব্যবস্থায় তারা প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে শহরের বাইপাস সড়কের মোড়ে গিয়ে গাড়িতে উঠেছেন।

এসপি গোল্ডেন লাইনের ম্যানেজার মিলন কুমার রায় বলেন, সন্ধ্যার পর কাউন্টারের সামনে থেকে কয়েকটি ছোট গাড়িতে করে যাত্রীদের বাইপাস সড়কে নিয়ে বাসে তোলা হয়েছে। এভাবে যাত্রীদের যেমন সমস্যা হচ্ছে তেমনি প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে আমরাও বিপাকে পড়েছি। সকালে আমাদের মালিকপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে আমরা গাড়ি চালাবো কি-না।

হানিফ পরিবহনের ম্যানেজার মুকুল হোসেন মঙ্গলবার রাতে জানান, কোনো প্রকার পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ কাউন্টারের সামনে পরিবহন রাখা বা শহর থেকে গাড়ি ছাড়তে না দেওয়ায় আমরা বিপাকে পড়েছি। এতে যাত্রীরাও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। শুধু মঙ্গলবারের টিকিট বিক্রি করেছি। বুধবার সকালে বসে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। বুধবার থেকে সব পরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ বলেন, যানজট নিরসনে শহর থেকে দূরপাল্লার বাস অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া দরকার। কিন্তু এজন্য তাদের কিছুটা সময় দিতে হবে। এ ঘটনায় মালিক পক্ষরা ক্ষুব্ধ হয়েছে। বুধবার সাতক্ষীরা থেকে দূরপাল্লার সব পরিবহন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হতে পারে। তবে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি।

সাতক্ষীরা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাহমিদ চয়ন বলেন, বুধবার সকালে আমাদের মালিকদের একটি সভা আছে। সেখান থেকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে। জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করে সমস্যার বিষয়গুলো তাদের জানানো হবে।

সাতক্ষীরা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) শ্যামল কুমার চৌধুরী বলেন , সাতক্ষীরা শহরকে যানজট মুক্ত করতে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সভায় শহরের মাঝে যেসব আন্তঃজেলা পরিবহন কাউন্টার তৈরি হয়েছে সেগুলো সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আমরা ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে সেই সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করছি। পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত শহরের ভেতর থেকে কোনো পরিবহনে যাত্রী নেওয়া যাবে না।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)