বটিয়াঘাটায় অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে বাগদা চাষে সাফল্য

অমলেন্দু বিশ্বাস (খুলনা) বটিয়াঘাটা থেকে-
খুলনা বটিয়াঘাটা উপজেলায় আধানিবিড় বাগদা চিংড়ি খামার করে কোটি কোটি টাকা আয় করছেন চিংড়ি খামারিরা। বটিয়াঘাটা সাত ইউনিয়ন ও ৬৩ ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এই উপজেলা। ২০১৫ সাল থেকে বটিয়াঘাটায় আধানিবিড় বাগদা চিংড়ি প্রযেক্ট শুরু হয় সিমিত আকারে কিন্তু জেলা ও উপজেলা মৎস্য অফিসের পরামর্শে খামারিদের মুখে এখন আনন্দের হাসি। তাই দেখে উপজেলাব্যাপী শুরু হয় ব্যাপক হারে পুকুর খনন।
২০২১ সালে এই উপজেলা থেকে ২৮৯,৪ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়। যার বাজার মুল্য প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। বর্তমানে ৮০ জন মৎস্য খামারি ২২০ টা পুকুর,১০ নার্সারি ও ৯ টি রিজার্ভ পুকুরের মাধ্যমে আধানিবিড় বাগদা চিংড়ি খামার করে মৎস্য চাষ করছে। জানাগেছে, প্রতি হেক্টর জমির পুকুরে দেড় লাখ ভাইরাস মুক্ত পোনা ছাড়তে হয়। ৪/৫ মাস পরে ঐ মাছ বিক্রি উপযোগী হয়। এই পদ্ধতিতে প্রতি হেক্টর জমিতে ৬/৭ মেঃ টন মাছ উৎপাদন হয়। ১ হাজার টাকা কেজি দরে যার বাজার মুল্য ৫০ লাখ টাকা। সেক্ষেত্রে খামারিদের ব্যয় হবে ২০/২৫ লাখ টাকা। প্রতি বছর একজন খামারি আধানিবিড় পদ্ধতিতে ২ বার মাছ উৎপাদন করতে পারে। এই পদ্ধতিতে মাছ উৎপাদন করে দেশে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে বটিয়াঘাটার মৎস্য খামারিরা। ইতি মধ্যে বিশিষ্ট শিল্পপতি ও চিংড়ি খামারি প্রফুল্ল রায় জাতীয় রৌপ্য পুরস্কার পেয়েছেন।
এছাড়া জেলা পর্যায় পুরস্কার পেয়েছে অগনিত খামারি। সুরখালী এলাকার ” সানন্দুস এ্যগ্রো ফার্ম” এর পরিচালক মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন, আধানিবিড় বাগদা চিংড়ি খামার করে গত কয়েক বছর বেশ লাভ পেয়েছি। তবে চলতি বছরে শুধু পানির অভাবে বেশ অসুবিধা হয়েছে। আমি ৯ টি পুকুরের বাগদার চাষ করছি। তবে জেলা ও উপজেলা মৎস্য অফিসার সব সময় খোঁজখবর নেন। যে কারণে আমাদের খামারে তেমন সমস্যা হয় না। খলশিবুনিয়া এলাকার ” মালতি মৎস্য খাবার ” এর পরিচালক পঞ্চানন গাইন বলেন, আমি ১১ টা পুকুরে আধানিবিড় বাগদা চিংড়ি চাষ করছি। জেলা মৎস্য অফিসার জয়দেব স্যার ও উপজেলা মৎস্য অফিসার মামুন স্যার সব সময় আমার খামার সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। এছাড়া মৎস্য চাষ সম্পর্কে প্রশিক্ষন দেন,যে কারণে আমি জেলা পর্যায় পুরস্কার পেয়েছি। এই পদ্ধতিতে অনেক লাভ। আশা করি সমগ্র উপজেলায় মৎস্য চাষিরা এই চিংড়ি চাষে ঝুকবেন। ইতি মধ্যে আমার খামার দেখতে, সচিব, ডিসি, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও ইউএনও স্যার এসেছিলো।
বটিয়াঘাটা উপজেলার সিনিয়র মৎস্য অফিসের ২০২২ সালের তথ্য অনুসন্ধানে দেখা যায়,৯ টি রিজার্ভ পুকুর, ১০ টি নার্সারি, ২২০ টি পুকুরের মাধ্যমে ৭৯.৬৩ হেক্টর জমিতে ভাইরাস মুক্ত “এস পি এফ ” পোনার মাধ্যমে বাগদা চিংড়ি চাষ করছে। যা মাছ উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ৩০৮.৮৩ মেট্রিক টন। মেসার্স আর এস এ্যকোয়া কালচার মোঃ শফিকুল ইসলামের পুকুরের সংখ্যা ২৪ টি, প্রফুল্ল রায়ের ১৮ টি, মুনসুর আলী চৌধুরীর ১৪ টি, পঞ্চানন গাইনের ১১টি, ব্রজেন গাইনের ৯ টি, ধৃত সুন্দর রায়ের ৯ টি, তাপস মন্ডলের ৭টি, জয়দেব সরকারের ৪টি, পারভেজ শেখের ১৪ টি, মোঃ সিরাজুল ইসলাম এর ৯ টি, মনোজ বৈরাগীসহ ৮০ জন মৎস্য খামারি ২৩৯ টি পুকুরে মাছ উৎপাদন করছেন।
এ বিষয় উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্ত মোঃ মনিরুল মামুন বলেন, অল্প জায়গায় প্রযুক্তির মাধ্যমে অধিক মাছ উৎপাদন করা যায়। আশা করি চলতি বছরে এই উপজেলায় আধানিবিড় চিংড়ি চাষ করে মৎস্য খামারিরা প্রায় ৩৫/ ৪০ কোটি টাকা আয় করবে। সার্বিক বিষয় জেলা মৎস্য অফিসার জয়দেব পাল বলেন, আধানিবিড় চিংড়ি চাষ এটা বিজ্ঞান সন্মত প্রযুক্তি। অল্প জমিতে অধিক মাছ উৎপাদন করা যায়। এই পদ্ধতিতে হেক্টর প্রতি ৪ থেকে ৫ হাজার কেজি মাছ উৎপাদন করা যায়। যে কারণে চাষিরা এই চিংড়ি খামারের দিকে আগ্রহ হচ্ছে।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)