কালিগঞ্জের ফতেপুরে সুদখোর জলিলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা :

অভাবগ্রস্ত মানুষের দুর্বলতার সুযোগে চড়া সুদে ঋন দিয়ে সর্বশান্ত করার এক জলন্ত নাম আব্দুল জলিল। তিনি সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার ফতেপুর গ্রামের গরুর গাড়ি চালক মৃত ফজর আলী মোড়লের ছেলে।

স্থানীয়ভাবে জানা গেছে ৬ সন্তানের জনক ফজর আলী মোড়লের ছেলে আব্দুল জলিল পৈতৃক সূত্রে সোয়া এক বিঘা জমি পান। সৌদিতে থাকা ভগ্নিপতি একই গ্রামের শফিকুলের টাকা সুদে খাটিয়ে কয়েক বছরের মধ্যে সে নিজের ভাগ্য পরিবর্তণ করে নেয়। ১৯৭৮ সালে ১৬ বিঘা জমি আত্মসাতের লক্ষ্যে প্রকাশ্যে দিবালোকেস্থানীয় অঘোর প্রামানিকের ঘরবাড়ি ও পূজার বেদি ভাঙচুর করে দেশ ছাড়া করার অভিযোগ রয়েছে জলিল ও তার স্বজনদের বিরুদ্ধে।

সুদের টাকা নিয়ে চেক দেওয়ার পরও সুদাসলে পরিশোধের যন্ত্রনায় ২০১২ সালে দেশ ত্যাগ করা শম্ভু বিশ্বাসের জমি ২০১৪ সালে জাল দলিল করে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সুদখোর জলিলের বিরুদ্ধে। একইভাবে গোবিন্দ বিশ্বাস চড়া সুদে দেড় লাখ ও রামপ্রসাদ বিশ্বাস এক লাখ টাকা নিয়ে প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে রয়েছে। জলিল তাদের বাড়িঘর লিখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে চলেছে।

ফতেপুর গ্রামের চিত্তরঞ্জন বিশ্বাস জানান, ব্যবসায়ে লোকসান হওয়ায় একই গ্রামের আব্দুল জলিলের কাছ থেকে ২০১০ সালে পরবর্তী প্রতি হাজারে মাসিক ৪০ টাকা সুদ দেওয়ার শর্তে তিনি কয়েক দফায় সাত লাখ টাকা ঋণ নেন। গ্রান্টার হিসেবে তার স্ত্রী বাসন্তী বিশ্বাস ও ছেলের কাছ থেকে জনতা ব্যাংক বাঁশতলা বাজারের ১৩টি চেক ছাড়াও কয়েকটি অলিখিত নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে সাক্ষর করিয়ে নেয়া হয়।

শম্ভু দেশ ছাড়ার পর জলিল তাদের উপর আস্থা না রাখতে পেরে তাকে জমির দলিল বন্দক রেখে কালিগঞ্জের একটি ব্যাংক থেকে লোন করিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেয়। ওই টাকা দিয়ে সুদাসল ১০ লাখ টাকা পরিশোধ করে দিলে ১৩টি চেক ফেরৎ দেওয়ার কথা বলা হয়। একপর্যায়ে ২০১৭ সালের ১৫ জুন Íরে মধ্যে পূর্ণাঙ্গ দলিল করে দেওয়ার শর্ত লিখে ২০১৬ সালের ২১ ডিসেম্বর তার ও স্ত্রী বাসন্তীকে কালিগঞ্জের দলিল লেখক শফিকুল ইসলামের সেরেস্তায় নিয়ে কয়েকটি লেখা কাগজে সাক্ষর করিয়ে নেয় জলিল।

পরে তারা জানতে পারেন যে তাদের বসতবাড়ি, কৃষি জমি ও বাঁশতলা বাজারের তিনটি দোকানসহ ৩৬ শতক জমি ৩০ লাখ টাকায় জলিল ও তার আত্মীয় রহিমের কাছে বিক্রির জন্য ২৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার ৫১৬৯ নং বায়না পত্র দলিল করিয়ে নেওয়া হয়েছে। প্রতিবাদ করায় জমি রেজিষ্ট্রি দলিল করে দিলে ১৩টি চেক ফেরৎ দেবে বলে তাদেরকেব জানায় দলিল। চেক ফেরৎ না দেওয়ায় ও বিনা টাকায় বায়নাপত্র দলিল করে নেওয়ার পর সহায় সম্বল কেড়ে নিয়ে তাদেরকে পরিকল্পিতভাবে বিতাড়িত করা হবে এমন আশঙ্কায় তারা ওই জমি , বাড়ি ও দোকান ২০১৭ সালের ৭ ডিসেম্বর ছেলের নামে লিখে দেন।

বিষয়টি জানতে পেরে পরদিন জলিল তাদের নামে আইনজীবী নোটিশ পাঠান। একপর্যায়ে তাদের বিরুদ্ধে কালিগঞ্জ সহকারি জজ আদালতে দেঃ ৮/১৮ নং মামলা করেন জলিল ও রহিম। চেক,নন জুডিশিয়াল স্টাম্প ও জাতীয় পরিচয়পত্রসহ বিভিন্ন কাগজপত্র ফেরৎ পেতে ২০১৭ সালের ২০ মার্চ নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে জলিলের বিরুদ্ধে পিটিশন ১২৯১/১৭ নং মামলা করা হয়। ৯৮ ধারায় নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে কাগজপত্র উদ্ধারের জন্য ১২৯১ /১৭ নং মামলার নোটিশ পাওয়ার আট মাস পর জলিল তাদের (চিত্ত) বিরুদ্ধে আদালতে আট লাখ টাকার তিনটি চেক ডিসঅনারের মামলা করে।

এরপর জলিল , রহিম, শফিকুল, মামুন, মেহেদী, লাকী খাতুন গাছ গাছালি কাটতে না দেওয়া, তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, বকাড়ি ঘর ও দোকান জবরদখল করতে দেশ থেকে বিতাড়িত করার হুমকি দেওয়ায় থানায় এ পর্যন্ত মোট ১৫টি সাধারণ ডায়েরী করা হয়। এরপরও একের পর এক হুমকি ধামকির ঘটনার ধারাবাহিকতায় গত ১৫ মে বিচিারধীন মামলার বাঁশতলা বাজরের দোকানের নষ্ট হওয়া টিনের চাল পরিবর্তণ করতে গেলে আদালতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার কথা বলে জলিল সদলবলে বাধা দেয়। বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও পুলিশকে অবহিত করার পরও জলিলের হুমকি অব্যহত রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, শুধু সংখ্যালঘু নয়, সংখ্যাগুরু স¤প্রদায়ের অনেকেই সুদখোর জলিলের কাছ থেকে টাকা নিয়ে জর্জরিত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অবিলম্বে সুদখোর জলিলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে এলাকার কয়েকটি হিন্দু পরিবারকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।

জানতে চাইলে জলিল মোড়ল তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অঘোর প্রামানিক ও শম্ভু বিশ্বাসকে ভারতে বিতাড়িত করে তাদের জমি জাল দলিল করে লিখে নেওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়। বরং টাকা নিয়ে চেক দেওয়া ও বায়না পত্র দলিল করে দিয়ে ছেলের নামে জমি লিখে দিয়ে তার সঙ্গে প্রতারণা করেছে চিত্ত বিশ্বাস। আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার কারণে তিনি চিত্ত বিশ্বাসের দোকানের টিন পরিবর্তনে বাধা দিয়েছেন। তাতে তার দোকান ও বাড়ি নষ্ট হলেও কিছু করার নেই।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)