সাতক্ষীরায় হিন্দু ছাত্রীর সঙ্গে প্রেম মেনে না নেওয়ায় বন্ধুর হাতে বন্ধু খুন

আসামী কলেজ ছাত্র মোবাশিশরকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার নির্দেশ–

নিজস্ব প্রতিনিধি:

প্রতিবেশী এক হিন্দু স্কুল ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলার বিরোধকে কেন্দ্র করে কলেজ পড়–য়া বন্ধুকে নির্যাতন ও শ্বাসরোধ করে হত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে মোবাশিশর হোসেন নামের এক কলেজ ছাত্রকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদÐ কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান সোমবার দুপুরে এক জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করেন।

মৃত্যুদÐাদেশ প্রাপ্ত আসামীর নাম মোবাশিশর হোসেন (২৩)। সে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বৈকারঝুটি গ্রামের আব্দুল মজিদ মোড়লের ছেলে ও আশাশুনি ডিগ্রী কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।

মামলার বিবরনে জানা যায়, আশাশুনি উপজেলার বৈকারঝুটি গ্রামের শঙ্কর সরকারের ছেলে চন্দ্রশেখর সরকার ও একই গ্রামের মোবাশিশর হোসেন ছোটবেলা থেকে একই সাথে পড়াশুনা করতো। শোভনালী নকুড়া বিলে তাদের একটি করে মাছের ঘের রয়েছে। চম্পাফুল আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে একই সাথে এসএসসি পাশ করার পর চন্দ্রশেখর সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে ও মোবাশিশর হোসেন আশাশুনি ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হয়। নবম শ্রেণীতে পড়াশুনা করাকালিন মোবাশিশর এর সাথে একই গ্রামের পঞ্চম শ্রেণীতে পড়–য়া ইন্দ্রানী ঘোষ ওরফে পাপিয়ার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একজন হিন্দু মেয়ের সঙ্গে একজন মুসলিম যুবকের প্রেম মেনে নিতে পারেনি চন্দ্রশেখর।

একপর্যায়ে চন্দ্রশেখর ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর পাপিয়ার সঙ্গে দেখা করিয়ে দিতে বলে মোবাশিশরকে। দেখা করিয়ে না দিলে বিষয়টি সকলকে জানিয়ে দেবে বলে হুমকি দেয় চন্দ্রশেখর। এরই একপর্যায়ে ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাড়ি থেকে চন্দ্রশেখরের ঘেরের বাসায় এসে দীর্ঘক্ষণ গল্প করে মোবাশিশর। রাত ১২টার পর চন্দ্রশেখরকে গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করলে ধ্বস্তাধ্বস্তির একপর্যায়ে সে ঘেরের বাসার খাট থেকে নীচে পড়ে যায়। পরে তাকে আবারো শ্বাসরোধ করে হত্যার পর ঘেরের পানির মধ্যে ফেলে লাশ গুম করার চেষ্টা করে মোবাশিশর। এরপর সে চম্পাফুল গ্রামের আইনজীবী সহকারির সাতক্ষীরার বাসায় আত্মগোপন করে।

স্বজনরা খবর দিলে পুলিশ ওই বছরের ১৯ অক্টোবর নিজেদের ঘের থেকে চন্দ্রশেখরের লাশ উদ্ধার করে। ২০ অক্টোবর চন্দ্রশেখরের বাবা বাদি হয়ে কারো নাম উল্লেখ না করে ছেলেেৈক হত্যার পর লাশ গুম করার অভিযোগে থানায় জিআর-২৫৬/২০ নং মামলা দায়ের করে। পুলিশ রাতেই মোবাশিশরকে গ্রেপ্তার করে পরদিন আদালতে পাঠায়। মোবাশিশর পাপিয়ার সঙ্গে সম্পর্ককে ঘিরে বন্ধু চন্দ্রশেখরকে শ্বাসরোধ করেছে মর্মে বিচারিক হাকিক রাকিবুল ইসলামের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। মোবাশিশর জামিনে মুক্তি পাওয়ার কয়েকদিন পর মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দিলে বাদি গত বছরের ১২ আগষ্ট আশাশুনি থানায় ৪৯২ নং সাধারণ ডায়েরী করেন।

সাধারণ ডায়েরীতে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মেলায় জামিন বাতিল হয়ে যায় মোবাশিশর এর। পরবর্তীতে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে অ্যাড. মিজানুর রহমান পিন্টুর শুনানীতে জামিনে মুক্তি পেয়ে পালিয়ে যায় মোবাশিশর। গত বছরের ৩১ মে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ গোলাম কবীর মোবাশিশর হোসেনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পলাতক অবস্থায় লিগ্যাল এইডের আইনজীবী অ্যাড. আনিছুজ্জামান আনিছ আসামীপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন।

মামলার নথি ও ১৪ জন সাক্ষীর জেরা- জবানবন্দি পর্যালোচনা শেষে আসামী মোবাশিশরের বিরুদ্ধে হত্যার পর লাশ গুম করার চেষ্টার অভিযোগে সনেদহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদÐ কার্যকর করার নির্দেশ দেন বিচারক শেখ মফিজুর রহমান। এ সময় আসামী মোবাশিশর কাঠগোড়ায় ছিল না।

মামলার রায় ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে শঙ্কর সরকার বলেন, তার ছেলের হত্যাকারি মোবাশিশরের ফাঁসির আদেশ পেয়ে তিনি খুশী। তিনি আশা করেন এ রায় যেন উচ্চ আদালতে বহাল থাকে। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)