মেডিকেলে পড়াশোনায় নেপালিদের পছন্দের শীর্ষে বাংলাদেশ

নিউজ ডেস্ক:

বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা নেওয়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ নেপালি। হিমালয়ের দেশের শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজগুলোতেই মূলত পড়তে যান। সুযোগ-সুবিধা, নিরাপত্তাসহ সার্বিক দিক বিবেচনায় উচ্চশিক্ষা নিতে বাংলাদেশকেই বেশি পছন্দ নেপালিদের।

টঙ্গীর গাজীপুরের ইন্টারন্যাশন্যাল মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন রওশান গুপ্তা। এখন কাঠমান্ডুতে নিজেই চেম্বার দিয়েছেন। বছর পাঁচেক আগে পাস করা এ চিকিৎসক বাংলাদেশে নেপালিদের মেডিকেলে পড়তে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করলেন এভাবে— ‘দক্ষিণ এশিয়ার মেডিকেল ব্যবস্থা প্রায় সব দেশেই এক। ভারতে মেডিকেল শাস্ত্র অনেক দিন আগে থেকে হওয়ায় তারা কিছুটা এগিয়ে। মানও অন্যদের তুলনায় কিছুটা ভালো। কিন্তু ভারতে পড়তে গেলে আমাদের কোটি রুপির ওপরে খরচ পড়ে যায়। এজন্য অধিকাংশ নেপালি বাংলাদেশের দিকেই ঝুঁকে’।

মেডিকেলে পড়াশোনার জন্য বাংলাদেশে বছর পাঁচেক সময় কাটিয়েছেন রওশন। বাংলাদেশের মেডিকেল শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে এ চিকিৎসক বলেন, ‘বাংলাদেশে শিক্ষকরা যথেষ্ট ভালো ও আন্তরিক। শিক্ষার কারিকুলাম সব ইংরেজিতে হলেও শিক্ষকদের অধিকাংশ বাংলায় লেকচার দেন ক্লাসে। এজন্য আমাদের প্রথমে বুঝতে সমস্যা হয়। মাস ছয়েকের ভাষাটা আয়ত্তে আসার পর নেপালি শিক্ষার্থীরা এর সঙ্গে মানিয়ে নেয়। তখন আর সমস্যা হয় না’।

রওশনের মতো একই সমস্যায় পড়েছেন জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের বর্তমান শিক্ষার্থী কাস্তুরি বাস্তচার্য। নেপালের মেডিকেল শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে এই নারী শিক্ষার্থী বলেন, ‘নেপালে সরকারি মেডিকেল চার-পাঁচটি। আসন খুবই সীমিত। প্রাইভেট মেডিকেল রয়েছে বেশ কয়েকটি, তবে সেগুলো অনেক ব্যয়বহুল। অনেক মেধাবী সেখানে পড়তে পারেন না। কারণ প্রায় ক্ষেত্রেই প্রশ্ন ফাঁস হয়ে থাকে। যারা চিকিৎসক হতে চান তারা অন্য দেশে গিয়েই পড়েন।’

বাংলাদেশে টিউশন ফি, আবাসন, খাবার ও যাতায়াত খরচ মিলে নেপালের সমান খরচই পড়ে যায়। এরপরও বাংলাদেশকে বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে বর্তমান চিকিৎসক রওশন বলেন, ‘নেপালে মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তির সময় প্রায় সব ফি দিতে হয়। সম্পূর্ণ ফি না দিলেও ৮০ শতাংশ তো দিতে হয়ই। যেখানে বাংলাদেশে কিস্তি আকারে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে’।

টিউশন ফি কিস্তি আকারে দেওয়ার সুযোগ থাকলেও করোনাকালীন পুরো ফি-ই দিতে হচ্ছে নেপালিদের। জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী কস্তুরি বলেন, ‘আমরা অনলাইনে ক্লাস করছি। অনেক সময় নেটওয়ার্কের কারণে শিক্ষকের কথা সেভাবে শোনা যায় না। এরপরও পুরো ফি-ই দিতে হচ্ছে। কোর্সওয়ার্ক ও ভাইভা অনলাইনে হলেও ব্যবহারিক পরে গিয়ে দিতে হবে।’

করোনার সময়ে টিউশন ফি পুরো দিলেও অভিভাবকরা বাংলাদেশের মেডিকেল শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট। নেপালের কান্তিপুরের সিনিয়র সাংবাদিক হিমেশের মেয়ে বাংলাদেশে মেডিকেলে পড়ছেন। মেয়েকে বাংলাদেশে পড়ানোর সিদ্ধান্তকে সঠিকই মনে করছেন তিনি। ‘অভিভাবক হিসেবে আমরা বাচ্চাদের নিরাপত্তা, শিক্ষার মান ও খরচ এই তিনটি বিষয় বিবেচনা করি। তিন মানদণ্ডেই বাংলাদেশ আমাদের জন্য শ্রেয়। পাকিস্তানে খরচ বাংলাদেশের মতো হলেও সেখানে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল। ভারতে টিউশন ফি, যাতায়াত, সব কিছু ব্যয়বহুল। বাংলাদেশে সব কিছু সহনীয় পর্যায়ে, এজন্য অভিভাবকরা বাংলাদেশে সন্তানদের পাঠিয়ে নিরাপদ বোধ করি।’

১৯৮৪-৮৫ সালে নেপালিদের বাংলাদেশে মেডিকেল পড়তে আসার যাত্রা শুরু হয়। প্রথম দিকে বছরে ৫-১০ জন গেলেও এখন সেটা শুধু মেডিকেলেই চার শতাধিকের ওপর। এর মধ্যে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয়।

নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও পরিবেশ সব কিছু সহনীয় বললেন কাস্তুরী, ‘জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজে আমাদের ব্যাচেই পাঁচ জন নেপালি মেয়ে রয়েছে। অন্য ব্যাচেও রয়েছে। বাংলাদেশে নেপালি মেয়েরা বাধাহীনভাবেই পড়াশোনা করছে’।

কাঠমান্ডুর বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার ও ডেপুটি শেফ অফ মিশন ইসরাত জাহান নেপালিদের বাংলাদেশের মেডিকেল বৃত্তি ও শিক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার নেপালিদের মেডিকেলে ২২ জনকে বৃত্তি দেয়। এর মধ্যে ১৯ জন  মেডিকেলে ও ৩ জনকে ডেন্টালে। ২২ জন বাছাই প্রক্রিয়া পুরোটাই বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর করে থাকে। আমরা বাছাই হওয়াদের ভিসা ও অন্যান্য সহায়তা দিয়ে থাকি। সরকারি মেডিকেল ছাড়াও অনেক শিক্ষার্থী বেসরকারি মেডিকেল, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও জায়গা করে নিচ্ছে।’

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)