করোনা : বিয়ে পিকনিক ওয়াজে বিধিনিষেধ আসতে পারে

নিউজ ডেস্ক:

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে বিয়েশাদি, ওয়াজ মাহফিল, পিকনিকসহ কিছু বিষয়ে কড়াকড়ি বিধিনিষেধ আরোপের ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। সম্প্রতি ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, ‘দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। এদিকে দিন দিন মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান হচ্ছে। কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। করোনা তো বাড়বেই। তাই দেশের কিছু এলাকার জন্য কড়াকড়ি ঘোষণা আসতে পারে।’

জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমরা যদি এখনই সতর্ক না হই, স্বাস্থ্যবিধি না মানি, তাহলে আমাদের দেশের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। কারণ, আমাদের হাসপাতালগুলোতে তো লাখো মানুষের জায়গা হবে না। কোথায় চিকিৎসা হবে? কে চিকিৎসা দেবে এত মানুষকে?’

রোববার (২৮ মার্চ) রাতে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দেশে হয়ত বিভিন্ন টাইপের লকডাউনের ঘোষণা আসবে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি এলাকায় যাওয়া-আসা বন্ধ করা; বিয়েশাদি, অনুষ্ঠান, ওয়াজ মাহফিল, পিকনিকসহ জনসমাগম হয় এমন সব অনুষ্ঠানে বিধিনিষেধ আসতে পারে।’

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে কিছু প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী জানান, ‘আমাদের পক্ষ থেকে অনেক প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সেগুলো দেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা জারি করবেন। তার মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের লকডাউন থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘আগে থেকেই বলেছি, আমরা এখন জেনেশুনেই আক্রান্ত হচ্ছি। আমাদের নিজেদেরই সতর্ক হওয়া উচিত। তা না হলে পরে নিজের এবং পরিবারের ক্ষতি হবে।’

এর আগে গত রোববার স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সারাদেশে সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও অন্যান্য জনসমাগম নিষিদ্ধ ঘোষণাসহ ২২ দফা প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। এর ভিত্তিতেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাবনা পাঠানো হয়।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের ২২ দফা প্রস্তাবে যা আছে
১. সব ধরনের (সামাজিক/রাজনৈতিক/ধর্মীয়/অন্যান্য) জনসমাগম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা। কমিউনিটি সেন্টার/কনভেনশন সেন্টারে বিয়ে/জন্মদিন/সভা/সেমিনার ইত্যাদি অনুষ্ঠান বন্ধ রাখা।

২. বাড়িতে বিয়ে/জন্মদিন ইত্যাদি অনুষ্ঠানে জনসমাগম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা।

৩. মসজিদসহ সব উপাসনালয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ন্যূনতম উপস্থিতি নিশ্চিত করা (ওয়াক্তিয়া নামাজে ৫-এর অধিক নয় এবং জুমার নামাজে ১০-এর অধিক নয়)।

৪. পর্যটন/বিনোদন কেন্দ্র/সিনেমা হল/থিয়েটার ও সব ধরনের মেলা বন্ধ রাখা।

৫. গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও ধারণক্ষমতার ৫০ ভাগের অধিক যাত্রী পরিবহন না করা।

৬. উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাতে আন্তঃজেলা যান চলাচল বন্ধ থাকা। অভ্যন্তরীণ বিমান ধারণক্ষমতার ৫০ ভাগের অধিক যাত্রী পরিবহন না করা।

৭. সব আন্তর্জাতিক যাত্রী চলাচল (স্থল/বিমান/সমুদ্র) সীমিত করা। বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের ১৪ দিন পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

৮. নিত্যপ্রয়োজনীয় ও জরুরি দ্রব্যাদির ক্রয়/বিক্রয় উন্মুক্ত স্থানে নিশ্চিত করা। ওষুধের দোকানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করা।

৯. শপিংমল বন্ধ করা।

১০. সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (মাদরাসা, প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়) ও কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা।

১১. স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সর্বদা নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরাসহ সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করা।

১২. স্বাস্থ্যবিধি মেনে টিকা কার্যক্রম পরিচালনা করা।

১৩. বাড়ির বাইরে জনগণের অপ্রয়োজনীয় ঘোরাঘুরি/জনসমাগম/আড্ডা বন্ধ করা। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাত ৮টার পর বাড়ির বাইরে বের হওয়া নিষেধ।

১৪. হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়া বন্ধ রাখা। তবে হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে খাবার কিনে বাসায় নিয়ে যাওয়া যাবে।

১৫. প্রয়োজনে বাইরে গেলে প্রত্যেক ব্যক্তিকে বাড়ির বাইরে সর্বদা নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরাসহ সব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করা। মাস্ক না পরলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১৬. করোনা উপসর্গ/লক্ষণযুক্ত সন্দেহজনক ও নিশ্চিত করোনা রোগীর আইসোলেশন ও করোনা পজিটিভ রোগীর ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসা অন্যদের কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

১৭. জরুরি সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া বাকি সব অফিস/শিল্পকারখানা বন্ধ রাখা। জরুরি সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোয় প্রতিদিন ৩৩ ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীর দ্বারা কর্মসম্পাদন করা। অসুস্থ/গর্ভবতী/৫৫ বছরের ঊর্ধ্ব কর্মকর্তা/কর্মচারীর বাড়িতে থেকে অফিস নিশ্চিত করা।

১৮. অফিসে প্রবেশ এবং অবস্থানকালীন সর্বদা বাধ্যতামূলকভাবে নাক-মুখ ঢেকে মাস্ক পরা নিশ্চিত করা।

১৯. প্রতিষ্ঠানগুলোর সব সভা, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা, সেমিনার অনলাইনে করা।

২০. সশরীরে উপস্থিত হতে হয় এমন যেকোনো ধরনের পরীক্ষা স্থগিত রাখা।

২১. প্রয়োজনে উচ্চ সংক্রমিত এলাকাতে লকডাউন করা।

২২. প্রত্যেক এলাকার বর্জ্য স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ঢাকনাযুক্ত অবস্থায় সংরক্ষণ এবং নিরাপদ ব্যবস্থাপনার জন্য স্থানান্তর নিশ্চিত করা।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)