দেবহাটায় জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় প্রতিপক্ষের হামলায় ভূমিহীন দম্পত্তি জখম
সাতক্ষীরার ভূমিহীন অধ্যুষিত জনপদ দেবহাটা উপজেলার নোড়ারচকে প্রতিপক্ষদের পূর্ব পরিকল্পিত হামলায় সঞ্জয় মন্ডল (৩৮) ও মিনতি মন্ডল (৩৩) নামের এক ভূমিহীন দম্পত্তি গুরুতর জখম হয়েছেন।
আহতদের মধ্যে সঞ্জয় মন্ডল বর্তমানে সখিপুরস্থ দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং অদ্যবধি তার স্ত্রী মিনতি মন্ডলের জ্ঞান না ফেরায় ও অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।মঙ্গলবার রাত ৮ টার দিকে ভুমিহীন জনপদ নোড়ারচক মন্দিরে জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় পরিকল্পিত ভাবে হামলা চালিয়ে তাদেরকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে প্রতিপক্ষরা।
আহতদের পরিবার জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে নোড়ারচকের ভূমিহীন ছদ্মবেশধারী ভূমিদস্যু বাবুরাম মন্ডল ও কেনারাম মন্ডলের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্রিক বিরোধ চলে আসছে। কেনারাম মন্ডলের সাথে ভুমিহীন দম্পত্তি সঞ্জয় মন্ডল এবং তার স্ত্রী মিনতি মন্ডলের সুসম্পর্ক থাকায় তাদের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল ভূমিদস্যু বাবুরাম ও তার দলবল। দেবহাটার পারুলিয়ার মধ্যভাগ থেকে আশাশুনি অভিমুখে একপাশে নোড়ারচক এবং অন্যপাশে পলগাদা গ্রামকে বিভক্ত করে আছে সাপমারা খাল। সাপমারা খালের পাশেই সঞ্জয় দম্পত্তির বসতঘরের পাশ দিয়ে দুপাড়ের মানুষের পারাপারের জন্য যুগ যুগ ধরে একটি বাঁশের সাঁকো ছিল। কিন্তু সম্প্রতি সাপমারা খাল খননের সুবিধার্তে ওই বাঁশের সাঁকোটি উঠিয়ে ফেলা হয় এবং খনন শেষে আবারো সাঁকো নির্মানের কথা ছিলো।
এরই মধ্যে কেনারামের সাথে সুসম্পর্ক থাকায় সঞ্জয়ের বাড়ীর পাশে ভেঙে ফেলা ওই সাঁকোটি পুনরায় নির্মানে বাঁধা হয়ে দাড়ায় ভূমিদস্যু কেনারামের চিরশত্রু অপর ভুমিদস্যু বাবুরাম মন্ডলসহ তার দলবল। কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ে শালিসের মাধ্যমে জনসার্থে ওই বাঁশের সাঁকোটি পুনরায় নির্মানের সিদ্ধান্ত দেয়ায় মুখ থুবড়ে যায় ভূমিদস্যু বাবুরামের। ফলে সঞ্জয় ও তার স্ত্রী মিনতিকে অন্যভাবে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করে তারা।
এরই মধ্যে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে কেনারাম মন্ডলের সাথে সঞ্জয়ের স্ত্রী মিনতির অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে বলে বাবুরামসহ তার লোকজন এলাকায় অপপ্রচার শুরু করে।
মঙ্গলবার রাত ৮ টার দিকে স্বামী সঞ্জয়ের সাথে মিনতি মন্ডল নোড়ারচক মন্দিরে জন্মষ্টমীর অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলেন। সেসময়ে পথিমধ্যে ওৎ পেতে থাকা ভূমিদস্যু বাবুরাম মন্ডল, সন্তোষ মন্ডলের ছেলে রাজীব মন্ডল, শশীভূষন মন্ডলের ছেলে শিবনাথ মন্ডল, সুরেন্দ্র মন্ডলের ছেলে অজিত মন্ডল, সুশীল মন্ডলের ছেলে সুপদ মন্ডল, অনাথ মন্ডলের ছেলে বিভাস মন্ডল, বাবুরাম মন্ডলের ছেলে প্রদীপ মন্ডল, রনজিৎ মন্ডলের ছেলে বিষ্ণুপদ মন্ডল, রঞ্জন মন্ডলের ছেলে শান্ত মন্ডল ও নির্মল মন্ডলের ছেলে কৃষান মন্ডলসহ অজ্ঞাত কয়েকজন লাঠিশোঠা নিয়ে সঞ্জয় ও তার স্ত্রী মিনতি’র ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে মারপিট করতে থাকে। এসময়ে হামলাকারীরা মিনতি মন্ডলের শ্লীলতাহানীসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম এবং পাশে থাকা মৎস্য ঘেরের পানিতে চুবিয়ে হত্যার চেষ্টা করে।
এক পর্যায়ে সঞ্জয় মন্ডল ও তার স্ত্রী মিনতি মন্ডল জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাদেরকে মৃতভেবে ফেলে রেখে যায় বাবুরাম ও তার দলবল।
পরে স্থানীয়রা তাদেরকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে সখিপুরস্থ দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। কিন্তু মিনতি মন্ডলের অবস্থা আশঙ্কাজনক এবং বারো ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও জ্ঞান না ফেরা ও ক্রমশ শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য বুধবার সকালে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
ভূমিহীন দম্পত্তি আহতের বিষয়টি নিশ্চিত করে দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিপ্লব কুমার সাহা বলেন, ঘটনার পর পরই তাৎক্ষনিকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। পাশাপাশি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতদের শারিরীক অবস্থা সম্পর্কে পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বক্ষনিক খোজখবর নেয়া হচ্ছে এবং বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করছে। তদন্ত শেষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও জানান ওসি।
এদিকে এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হামলাকারী ভূমিদস্যু বাবুরাম মন্ডলসহ তার দলবলের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছিলো বলে আহতের পরিবার সুত্রে জানা গেছে।