বাংলাদেশসহ ৯২ দেশ পাবে গ্যাভির করোনা ভ্যাকসিন
বৈশ্বিক মহমারি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বাংলাদেশসহ বিশ্বের নিম্ন ও মধ্য আয়ের ৯২টি দেশে করোনা ভ্যাকসিন পাঠানো হবে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন জোট দ্য গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস (গ্যাভি)।
কোভ্যাক্স অ্যাডভান্স মার্কেট কমিটমেন্ট (এএমসি) প্রকল্পের আওতায় এই ভ্যাকসিন পাঠানো হবে বলে সম্প্রতি গ্যাভি জানিয়েছে।
এ সিদ্ধান্ত সম্পর্কে গ্যাভি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. নগোজি ওকোঞ্জো-আইওয়েলা বলেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমরা সবচেয়ে মারাত্মক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। দরিদ্র ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোর ওপর এই সংকটের একটা ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়বে।’
তিনি বলেন, ‘সীমিত পুঁজির কারণে ভবিষ্যৎ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন পেতে এই দেশগুলোকে ভুগতে হতে পারে। তাই তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব। এই সহযোগিতা না পেলে আমরা কোনো মোক্ষম অস্ত্র বা ভ্যাকসিন পাওয়ার পরও এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পৃথিবীর বেশির ভাগ জনগোষ্ঠীকে ভুগতে হবে। তাই এমনটা যেন না ঘটে, সেই পদক্ষেপ নিতে হবে আমাদের।’
গ্যাভি বোর্ড অনুমোদিত এই ৯২ দেশ কোভ্যাক্স এএমসি প্রকল্পের মাধ্যমে ভ্যাকসিন পাবে। সেক্ষেত্রে ভ্যাকসিনের মূল্যে প্রয়োজনে দেয়া হবে ভর্তুকি।
গ্যাভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ড. শেঠ বার্কলি বলেন, ‘কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন পাওয়ার দৌড়ে বিশেষত একেবারেই গরিব দেশগুলো যেন পেছনে পড়ে না যায়, সেটি নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘আলোর গতিতে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। তার মানে, প্রত্যেকে নিরাপদ হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা কেউই নিরাপদ নই। এ কারণে প্রত্যেকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের সাহায্য ও অর্থলগ্নি করা প্রয়োজন, যেন কার্যকর ভ্যাকসিন পাওয়ামাত্রই শুধু সৌভাগ্যবান কয়েকটি রাষ্ট্র নয়, বরং সারা দুনিয়াকে এই মহামারি থেকে রক্ষা করতে পারি। এ ক্ষেত্রে গ্যাভি বিভিন্ন সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা, উৎপাদনকারী এবং নাগরিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে একত্রে কাজ করবে।’
২০২১ সালের শেষ নাগাদ এই ৯২ দেশসহ এ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত সব দেশে ২০০ কোটি ডোজ নিরাপদ ও কার্যকর ভ্যাকসিন হস্তান্তর করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে গ্যাভি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোনো ভ্যাকসিনকে অনুমোদন দেয়ার পরপরই দেশগুলোর মোট জনসংখ্যার অন্তত ২০ শতাংশের জন্য সেটি সরবরাহের প্রাথমিক চেষ্টা চালানো হবে বলে গ্যাভির পক্ষে জানানো হয়।
যেসব দেশ পাবে এই সুযোগ:
বিশ্বব্যাংকের ২০১৮ ও ২০১৯ সালের মাথা পিছু আয়ের উপাত্ত ধরে ৯২টি দেশের তালিকা করেছে গ্যাভি কোভ্যাক্স এএমসি।
নিম্ন আয়ের দেশ: আফগানিস্তান, বেনিন, বুরকিনা ফাসো, বুরুন্দি, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, চাদ, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব দ্য কঙ্গো, এরিত্রিয়া, ইথিওপিয়া, গাম্বিয়া, গিনিয়া, গিনিয়া-বিসাউ, হাইতি, উত্তর কোরিয়া, লাইবেরিয়া, মাদাগাস্কার, মালায়ি, মালি, মোজাম্বিক, নেপাল, নাইজার, রোয়ান্ডা, সিয়েরা লিওন, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া, তাজিকিস্তান, তানজানিয়া, টঙ্গো, উগান্ডা এবং ইয়েমেন।
নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ: বাংলাদেশ, আলজেরিয়া, অ্যাঙ্গোলা, ভুটান, বলিভিয়া, ক্যাপ ভার্ডি, কম্বোডিয়া, ক্যামেরুন, কমোরস, রিপাবলিক অব দ্য কঙ্গো, আইভরি কোস্ট, জিবুতি, মিসর, এল সালভাদর, এসওয়াতিনি, ঘানা, হন্ডুরাস, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, কিরিবাতি, কিরজিকিস্তান, লাওস, লেসোথো, মৌরিতানিয়া, মাইক্রোনেসিয়া, মলডোভা, মঙ্গোলিয়া, মরক্কো, মিয়ানমার, নিকারাগুয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, পাপুয়া নিউগিনি, ফিলিপাইন, সাও তোমে অ্যান্ড প্রিন্সিপ, সেনেগাল, সলোমন আইল্যান্ড, শ্রীলংকা, সুদান, তিমুর-লেস্তে, তিউনিসিয়া, ইউক্রেন, উজবেকিস্তান, ভানুয়াতু, ভিয়েতনাম, ওয়েস্ট ব্যাংক অ্যান্ড গাজা, জাম্বিয়া এবং জিম্বাবুয়ে।
বিশ্বব্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইডিএ) সুবিধাভুক্ত দেশ: ডমিনিকা, ফিজি, গ্রেনাডা, গুয়ানা, কসোভো, মালদ্বীপ, মার্শাল আইল্যান্ড, সামোয়া, সেন্ট লুসিয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট অ্যান্ড দ্য গ্রেনাডাইনস, টোঙ্গা এবং টুভালু।
সূত্র: গ্যাভি ওয়েবসাইট