চাঁদের রহস্য
মহাবিশ্বে পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী ‘চাঁদ’। একেক প্রজন্মের নিকট এর পরিচয় একেক রকম। ছোটবেলায় চাঁদকে সূতো কাটা বুড়ির ছোট্ট ঘর হিসেবে কল্পনা করে বাচ্চারা। কখনো কখনো একে উপমা হিসেবে ব্যবহার করেন বিভিন্ন বয়সের রোমান্টিক লোকজন। কিন্তু এসবই কল্পনা মাত্র। অন্যদিকে, চাঁদ নিয়ে সবারই জল্পনা কল্পনারও যেন শেষ নেই। তবে জেনে নিন চাঁদ সম্পর্কিত রহস্যময় কিছু তথ্য-
১. চন্দ্রকথা
প্রচলিত তত্বানুযায়ী, আজ থেকে সাড়ে চার বিলিয়ন বছর পূর্বে সোলার সিস্টেম গঠিত হওয়ার অল্প কিছুকাল পরে অনেকটা মঙ্গল গ্রহের মত আকৃতির একটি শিলাভূ-ত্বকের কঠিন অংশ পৃথিবীর সাথে সজোড়ে সংঘর্ষ হওয়ার ফলেই চাঁদের সৃষ্টি।
২. চাঁদের রূপ
পৃথিবী থেকে আমরা সবসময়ই চাঁদের একই চেহারা দেখে থাকি। যদিও পৃথিবী ও চাঁদ উভয়ই নিজ নিজ কক্ষপথে ঘুরছে, তবুও চাঁদ (যতটুকুই দেখা যায়) সর্বদা একই রকম, কেননা অনেক আগেই পৃথিবীর মহাকর্ষীয় প্রভাব চাঁদের নিজস্ব কক্ষপথের ঘূর্ণনকে ধীরগতির করে দিয়েছে। তাই এর অরবিটাল পিরিয়ড ও রোটেশন পৃথিবীর সাথে মোটামুটি মিলে যাওয়ায় চাঁদের ‘ছবি’(অমাবস্যাপূর্ণিমার ব্যাপার ভিন্ন) আর পরিবর্তিত হয়না।
৩. মুন-ট্রি
পৃথিবীর বুকে থাকা ৪০০’র বেশি গাছ এসেছে চাঁদের মাটি থেকে! আসলে ব্যাপারটি হচ্ছে, ১৯৭১ সালে অ্যাপোলো ১৪ মিশনে নভোচারী স্টুয়ার্ট রোসা প্রায় ৫০০’র মত উদ্ভিদ-বীজ সাথে করে চাঁদে নিয়ে যান এবং লুনার সার্ফেসে রোপণ করেন। পরে সেগুলো পৃথিবীতে ফিরিয়ে এনে অঙ্কুরিত করা হয়। গাছগুলো এখনো বেঁচে আছে। এগুলো ‘মুন ট্রি’ নামে পরিচিত।
৪. চাঁদ-ই পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ
আমরা অনেকেই হয়ত ভেবে থাকি যে, চাঁদ হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ (ন্যাচারাল স্যাটেলাইট); কিন্তু ১৯৯৯ সালে বিজ্ঞানীরা একটি ৫ কিলোমিটার প্রশস্ত গ্রহাণু আবিষ্কার করেন যেটি পৃথিবীর মহাকর্ষীয় আকর্ষণে ধৃত হয়ে আরেকটি ‘চাঁদে’ রূপ নিতে পারে।
৫. চাঁদ কিন্তু গোলাকার নয়!
অবাক হচ্ছেন চাঁদকে আমরা গোল থালার মত দেখলেও এটি কিন্তু গোল কিন্তু বর্তুলাকার নয়। বরং, চাঁদের গঠন হচ্ছে ডিম্বাকার। আরেকটি মজার বিষয় হচ্ছে, চাঁদের ভরকেন্দ্র গ্রহটির জ্যামিতিক কেন্দ্রে অবস্থিত নয়। এর অবস্থান চাঁদের কেন্দ্র থেকে ২ কিলোমিটার বাহিরে।
৬. চাঁদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ
চাঁদকে আমরা অনেকে স্বপ্নের জগত হিসেবে জেনে থাকলেও এখানেও প্রাকৃতিক বিরূপ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। চাঁদে মাঝে মাঝে ভূমিকম্প হয়। এগুলো ‘মুনকোয়াক’ নামে পরিচিত। লুনার নাইট সিজনে চন্দ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা -১৮০ ডিগ্রী সেলসিয়াস (অত্যন্ত শীতল) পর্যন্ত নেমে যায়। আবার কখনো কখনো এর আবহাওয়া বেশ উত্তপ্তও হয়ে ওঠে। বলাই বাহুল্য, মানুষের বসবাসের জন্য চাঁদ উপযোগী নয়- যদিও সিনেমার সংলাপে নায়কনায়িকারা কথায় কথায় চাঁদের বুকে বাড়ি বানায়।
৭. শুভ বিদায় চাঁদমামা!
প্রতিবছর পৃথিবী থেকে কিছুটা রোটেশনাল এনার্জি নিয়ে নেয় চাঁদ। ফলে নিজস্ব কক্ষপথে বছরে ৩ দশমিক ৮ সেন্টিমিটার উপরে চলে যাচ্ছে চাঁদ। গবেষকরা জানিয়েছেন, সৃষ্টিলগ্নে পৃথিবী থেকে ২২ হাজার ৫৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছিল চাঁদ। কিন্তু এটি এখন ৪ লাখ ৫০ হাজার কিলোমিটার দূরে চলে গেছে।