যুদ্ধক্ষেত্রে এগোচ্ছে রাশিয়া, পিছু হটছে ইউক্রেন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
রুশ বাহিনীর তীব্র হামলার মুখে খারকিভের সীমান্ত এলাকার কয়েকটি গ্রাম থেকে সেনাসদস্যদের সরিয়ে নিয়েছে ইউক্রেন। এরইমধ্যে খারকিভ অঞ্চলের আরো দুটি গ্রাম নিয়ন্ত্রণও নিয়েছে রাশিয়া। বুধবার (১৫ মে) রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
জানা গেছে, খারকিভের কাছে উত্তর দিকে সুমি অঞ্চলে সম্ভাব্য নতুন অভিযানের জন্য সেনা জড়ো করছে রাশিয়া। সুমি অঞ্চলে রাশিয়া যদি নতুন স্থল হামলা চালায় তাহলে রণক্ষেত্র আরো বিস্তৃত হবে। এর আগে শুক্রবার খারকিভ অঞ্চলে রাশিয়া স্থল হামলা চালিয়েছে। ইউক্রেন দ্রুত সেখানে অতিরিক্ত সেনা পাঠিয়েছে। এমন অবস্থায় সুমি অঞ্চলে নতুন অভিযান শুরু হলে রুশদের ঠেকাতে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে ইউক্রেনীয় সেনাদের।
মঙ্গলবার রাশিয়া বলেছে, খারকিভের উত্তরের দিকে তাদের অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে। বুহরুভাতকা নামের আরেকটি গ্রামের দখল নিয়েছে তারা। এটি শুক্রবারের পর থেকে রুশ সেনাদের দখল করা দশম গ্রাম।
সীমান্ত থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরের শহর ভভচানস্কের পুলিশ প্রধান বলেছেন, শহরটি রাশিয়ার গোলাবর্ষণে প্রধান নিশানায় পরিণত হয়েছে। শহরের উত্তরে গুলি বিনিময় হচ্ছে।
মঙ্গলবার শেষরাতের দিকে ইউক্রেনের জেনারেল স্টাফ এক বিবৃতিতে বলেছে, লিকিয়ান্তসি ও ভভচানস্কের নির্দিষ্ট সেক্টরে সেনারা আরও সুবিধাজনক অবস্থানে সরে গেছে। শত্রুদের গোলাবর্ষণ ও অভিযানের পর সেনাদের জীবন রক্ষা ও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
খারকিভের আঞ্চলিক গভর্নর ওলেহ সিনিয়েহুবভ বলেছেন, রুশ গোলাবর্ষণে দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। ভভচানস্ক ও আশেপাশের সীমান্ত অঞ্চল থেকে সাড়ে সাত হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
রুশ হামলায় ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও অঞ্চলটিতে বসবাসরত ইউক্রেনীয়দের মনোবলে ধাক্কা দিয়েছে। ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর হলো খারকিভ। এছাড়া গত কয়েক মাস ধরে রাশিয়ার আক্রমণের মূল মনোযোগ ছিল ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল। ফলে খারকিভে নতুন আক্রমণ পূর্বাঞ্চলে ইউক্রেনীয়দের প্রতিরক্ষা অভিযানকে ব্যাহত করবে।
ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা প্রধান কিরিলো বুদানভ বলেছেন, মস্কো ইতোমধ্যে খারকিভে অভিযানের জন্য নিজেদের সব সেনা জড়ো করেছে। কিন্তু রাশিয়ার আরও রিজার্ভ সেনা রয়েছে। আগামী দিনগুলোতে তাদের কাজে লাগাতে পারে রাশিয়া।
শীর্ষ ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বলছেন, খারকিভ শহর দখল করার মতো সেনা রাশিয়ার রয়েছে বলে তারা মনে করেন না।
ইউক্রেনীয় জেনারেল স্টাফের সংগৃহীত তথ্য অনুসারে, খারকিভ অঞ্চলে রাশিয়ার আক্রমগণের গতি অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার ১৪টি হামলা চালিয়েছে তারা। সোমবার ছিল ১৩টি ও ২২টি ছিল রবিবার।
বুদানভ পরিস্থিতিটিকে দ্রুত পরিবর্তনশীল হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, রাশিয়ার অভিযান এখনও সক্রিয় পর্যায়ে রয়েছে। সুমি অঞ্চলের সীমান্ত অঞ্চলে রাশিয়ার ছোট ছোট দলে সেনারা অবস্থান করছে। শুরু থেকেই এই অঞ্চলে অভিযানের পরিকল্পনা ছিল রুশ বাহিনীর। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে তারা সক্রিয় পদক্ষেপ ও অভিযান শুরু করতে পারেনি।
খারকিভ অঞ্চলে রাশিয়ার নতুন হামলাকে ইউক্রেনীয় সেনাদের জন্য একটি পরীক্ষা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেনের সেনা সংখ্যার ঘাটতি রয়েছে এবং পশ্চিমা অস্ত্রও ফুরিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য মঙ্গলবার অঘোষিত কিয়েভ সফরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষিত মার্কিন অস্ত্র ইউক্রেনের পথে রয়েছে এবং যুদ্ধক্ষেত্রে তা প্রকৃত পার্থক্য গড়ে দেবে।