প্রয়োজন হলে ইসরায়েল একাই যুদ্ধ চালিয়ে যাবে: নেতানিয়াহু
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ইসরায়েল যদি রাফায় পূর্ণ মাত্রায় অভিযান শুরু করে তবে যুক্তরাষ্ট্র দেশটিতে অস্ত্রের চালান স্থগিত করার যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে তার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, সেক্ষেত্রে ইসরায়েল ‘একাই লড়াই চালিয়ে যাবে’।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) তিনি বলেন, ‘যদি প্রয়োজন পড়ে…আমরা একাই লড়াই চালিয়ে যাব। আমি বলছি, যদি তেমন প্রয়োজন পড়ে তবে আমরা আমাদের শেষবিন্দু দিয়ে লড়ে যাব।’
যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কতা প্রত্যাখ্যান করতে ১৯৪৮ সালের যুদ্ধের কথা স্মরণ করেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ৭৬ বছর আগে, স্বাধীনতাযুদ্ধে অনেকেই আমাদের বিরুদ্ধে ছিল, ছিল অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা। সেসময় আমাদের কাছে পর্যাপ্ত অস্ত্রও ছিল না। কিন্তু আমাদের মধ্যে প্রবল চেতনা, বীরত্ব ও ঐক্যের জোর থাকায় ওই যুদ্ধে আমরা বিজয়ী হয়েছিলাম।
তিনি বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যদি অস্ত্রের চালান বন্ধ করে দেন, তবে চিন্তার কিছু নেই। ইসরায়েলের কাছে এখন পর্যাপ্ত অস্ত্রের জোগান আছে। সঙ্গে আছে আমাদের অদম্য মনোবল। ঈশ্বরের সাহায্যে আমরা বিজয়ী হবো।
এদিকে, নেতানিয়াহুর প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত বলেছেন, ইসরায়েলের শত্রুদের পাশাপাশি মিত্রদেরও বোঝা উচিত যে হুমকি-ধমকি দিয়ে আমাদের বশ করা যাবে না। বরং আমরা দ্বিগুন শক্তিশালী হয়ে দাঁড়াবো ও আমাদের লক্ষ্য অর্জন করবো।
এর আগে বুধবার (৮ মে) ইসরায়েলকে সতর্ক করে দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছিলেন, গাজার অন্যান্য অঞ্চলে মার্কিন বোমা নিক্ষেপের ফলে বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে। এখন ইসরায়েলি সেনাবাহিনী যদি রাফায় হামলা চালায়, তবে আমি অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দেবো। বিশেষ করে, হামলা চালানোর জন্য যেসব অস্ত্র ও কামানের গোলা ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলো সরবরাহ করবো না।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই গাজার দক্ষিণের মিশর সীমান্তবর্তী নগরী রাফায় ইসরায়েলের অভিযানের বিষয়ে নানা কথা শোনা যাচ্ছিল। এরমধ্যে গত রোববার ইসরায়েল সীমান্তবর্তী কেরেম শালম ক্রসিংয়ের গাজা অংশে রকেট হামলা চালিয়ে বসে হামাস। যে হামলায় চার ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়।
রাফা থেকে হামাস ওই হামলা চালিয়েছে, অভিযোগ ইসরায়েলের। পরদিনই ইসরায়েলি বাহিনী রাফা থেকে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের সরে যেতে বলে এবং ওই নির্দেশ দেওয়ার কয়েকঘণ্টার মধ্যে সেখানে বিমান হামলা শুরু করে।
এদিকে, সাত মাসের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে গাজার অন্যান্য প্রান্ত থেকে ১০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি প্রাণ বাঁচাতে গাজায় আশ্রয় নিয়েছে। ইসরায়েল সরে যেতে বললেও এই মানুষগুলোর সরে যাওয়ার মত নিরাপদ স্থান গাজায় কোথাও নেই।
জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, যদি রাফায় আক্রমণ করা হয় তবে সাত মাসের যুদ্ধে গাজায় যে বিপর্যয় নেমে এসেছে তার থেকেও ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে সেখানকার ফিলিস্তিনিদের উপর।
এদিকে, ইসরায়েল বলছে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের আড়ালে হামাসের কয়েকশ যোদ্ধা রাফায় অবস্থান নিয়েছে। তাই রাফা অভিযান ছাড়া গাজা থেকে হামাসকে নির্মূল করার তাদের লক্ষ্য পূরণ অসম্ভব। রাফায় বিমান হামলার পাশপাশি তাই তারা স্থল অভিযানের প্রস্তুতিও বেশ জোরোশোরে নিচ্ছে।
জাতিসংঘ থেকে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের অব্যাহত বিমান হামলার মধ্যেই গত সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৮০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি রাফা থেকে পালিয়ে গেছে। ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক রাফার চারপাশ ঘিরে এগিয়ে আসছে।
রাফায় এখনও প্রায় ১০ লাখ মানুষ অবস্থান করছে। যাদের খাবার ও জ্বালানি দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। কারণ, ইসরায়েলি বাহিনী রাফা ক্রসিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে এবং সেখানে কোনো ত্রাণ প্রবেশ করতে পারছে না। তারা মিশরের সঙ্গে গাজার সংযোগ স্থল এই রাফা ক্রসিং বন্ধ করে দিয়েছে।
রাফা ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়ার পর ইসরায়েল কেরেম শালম ক্রসিং খুলে দিলেও সেটি দিয়ে গাজায় ত্রাণ পৌঁছানোর কাজ তাদের কর্মীদের জন্য খুবই বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। হামাসের হামলার পর ইসরায়েল চারদিন কেরেম শালম ক্রসিং বন্ধ রেখেছিল।
ইসরায়েলি বাহিনী বলেছে, তারা রাফায় বেছে বেছে হামাসের অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে। তবে দেশটির সরকার সেখানে পূর্ণমাত্রায় আক্রমণের বিষয়টি এখনও বাতিল করেনি।
সূত্র: আল-জাজিরা