নব প্রজন্মের শিশুদের ভবিষ্যৎ কোন দিকে ধাবিত?

সরদার এম এ মজিদ: শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড, যে জাতি যত শিক্ষিত, সে জাতি তত প্রযুক্তি জ্ঞানের মাধ্যমে উন্নতীর শীর্ষে পৌঁছাতে পারে। এই কথা আমরা সবাই জানি কিন্তু মানি কয়জন? একটি শিক্ষিত সমাজ পারে জাতির ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাইতে। আজকের শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। প্রত্যেক অভিভাবকের নিকট শিশুরা কলিজার টুকরা, যারা গুটি গুটি পায়ে আমাদের সামনে হেঁটে বেড়াচ্ছে, এটা দেখে আমরা গর্ববোধ করি, সেই গর্ব কিন্তু এক সময়ে পিতা মাতার স্বপ্ন ¤øান করে দিচ্ছে। প্রত্যেক সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ প্রত্যেক মা বাবাই কামনা করেন। সন্তানের শারীরিক বিকাশের জন্য যেমন যত্মবান থাকেন তেমনি মানসিক ও নৈতিক বিকাশের ব্যাপারেও তারা সচেতন থাকেন। শিশুদের মন মস্তিষ্ক অত্যান্ত কোমল, তাই তাদের মনে শিশু কালে যা গেঁথে দেওয়া হয় তা তাদের চিরকাল স্মরণ থাকে। শৈশব থেকে যৌবন পর্যন্ত যে গুলি তাদের হৃদয়ে বিস্তত হয়ে যায়, তা কিন্তু বার্ধ্যকেও দুরকরা যায়না। তাই সন্তানের শৈশবের শুরুতে প্রত্যেক অভিভাবকদের উচিৎ তার শিক্ষা দীক্ষার দ্বারা নৈতিক জীবন গঠনে যত্মশীল হওয়া বাঞ্চনীয়। মূলত সততা, নৈতিক মূল্যবোধ, বাচ্চাদের শিক্ষা দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিশুরা সাধারণত মিথ্যা বলেনা, পিতা, মাতা, ভাই, বোন, পাড়া প্রতিবেশী বন্ধু দের মিথ্যা বলতে দেখলে, সেও মিথ্যা বলতে প্রভাবিত হয়,সেও মিথ্যা বলতে শেখে। বিশেষ করে মা বাবা ও শিক্ষক যাহারা হবেন, শিশুদের সামনে মিথ্যা সংমিশ্রন কোন ভাষা বলব না সকলেই সচেতন থাকা আবশ্যক। শিশুদের প্রহার করে কোন কিছু শেখানো সম্ভব নহে, ইহাতে ক্ষেত্র বিশেষ হিতে বিপরীত হয়। যদি শিশুদের সামনে আমরা কোন ভুল করেই বসি। আমাদের উচিত হবে তাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করা, ক্ষমা চাওয়া। এতে শিশুরা বিনয় ও ন¤্রতা শিখতে পারবে। তেমনি অর্জন করতে পারবে ক্ষমা করার যোগ্যতা। এক শিশু অন্য এক শিশুর সহিত খেলাধুলা বা অন্য কোন বিষয় নিয়ে গোলযোগ করে কাঁদতে কাঁদতে, যদি পিতা মাতা অথবা শিক্ষকের নিকট কোন বিচার দেয়, যার নামে বিচার দেওয়া হয়েছে। তাকে তার সামনে কোন শাস্তি দেওয়া ঠিক হবে না। বরং শিশুদের শান্তনা দিয়ে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত। শিশুরা সাধারণ উদর মনের হয়ে থাকে, তাদের পেটের ক্ষুধার থেকে চোখের ক্ষুধা বেশী থাকে, তারা কোন জিনিস হাত ছাড়া করতে চায় না। প্রত্যেক অভিভাবকদের উচিত, তাদের হাত দিয়ে ভাই বোন আত্মীয় স্বজন সহ অসহায় মানুষের সাহায্য দেওয়ার ব্যবস্থা করা, এতে তার স্বভাবে লুকিয়ে থাকা কার্পণ্য দুর হয়ে যাবে, আমাদের প্রত্যেকের মনে রাখতে হবে, শিশুরা কিন্তু দেখেই বেশী শেখে তাই শিশুদের সামনে আমরা আমাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনের সকল ক্ষেত্রে নৈতিকতা থাকবে। তারাও আমাদের থেকে শিখবে প্রত্যেক শিশুদের ভাল কাজের উৎসাহ প্রদান করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। বর্তমান ইন্টারনেটের যুগে শিশুদের ভাগ্যের পরিবর্তন বা ভবিষ্যত জীবন সুন্দর করার আশা ¤øান হতে বসেছে। বিংশ শতাব্দীর ১ম থেকে মোবাইল ফোন চালু হয়েছে, এর থেকে মানুষ অনেক উপকৃত হচ্ছে, কিন্তু ধাপে ধাপে তথ্য প্রযুক্তি ক্রমবর্ধিত হারে বৃদ্ধি পাইতে পাইতে এমন এক পর্যায় এসে গেছে শিশু, কিশোর, যুবক, যুবতী সহ সকল শ্রেণীর মানুষ ইন্টরনেটের পর্ণ ছবি, ফেসবুকে পাগল পারা হয়ে প্রায় দেউলিয়া হয়ে গেছে। ইন্টারনেটের যতই বিকাশ ঘটছে, ততই যেন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মন, মানসিকতা, টিকটক আর ফেসবুকের দিকে ধাবিত হচ্ছে। যদি এ অবস্থা চলতে থাকে তাহলে এদের ভবিষ্যৎ কোন দিকে ধাবিত হচ্ছে প্রত্যেক অভিভাবক সহ সচেতন মহল সহজে বুঝতে পারছে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে, তথ্য প্রযুক্তির মোবাইল ও টাচ ফোন শিশু কিশোরদের ছাত্র জীবনে সমপূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা উচিত বলে মনে করি। প্রত্যেক ছাত্র ছাত্রীদের এস এস সি পরীক্ষার আগ মুহুর্তে পর্যন্ত তথ্য প্রযুক্তির কোন যন্ত্র ব্যবহার সরকারী ভাবে নিষিদ্ধ হলে ভাল হয়। অন্যথায় বর্তমান প্রজন্মের শিক্ষার বিকাশ ঘটানো সম্ভব নহে। এমতাবস্থায় চলতে থাকলে বর্তমান প্রজন্ম অন্ধকারের দিকে ধাবিত হবে, ইহাতে রাষ্ট্র ও জাতি ক্ষতিগ্রস্থ হবে, তখন দেশের নেতৃত্ব ও কর্তৃতের এমন প্রভাব পড়বে যাহা জাতির জন্য অকল্পনীয় ক্ষতি। বর্তমান যামানার শিশুদের লালন পালন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে, এর থেকে আরও কঠিনভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার নিষিদ্ধ যেমন: মোবাইল ও টাচ ফোন থেকে দুরে রাখতে পারলে ভাল হবে, তা না করে আমরা আদর সোহাগ করে ছোট শিশুদের হাতে মোবাইল ফোন তুলে দিচ্ছি। তাদের আবদার রক্ষা করার জন্য তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে আমরাই ঠেলে দিচ্ছি। প্রত্যেক শিশুর অভিভাবকদের সচেতন হওয়া একান্ত জরুরী। বর্তমান শিশুদের মন, মস্তিষ্ক কৃষ্টি কালচার সবই বিকৃত হয়ে যেন উদাসীনতারভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। তারই ফল শ্রæতিতে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা বিপদ গামী হয়ে, কেহ প্রেম ভালোবাসা নিয়ে ব্যস্ত, কেউ নেশা গ্রস্থ হয়ে, বিপদগামী, কেহ নিজের প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তারে ব্যস্ত কেহ রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত কেহ বড় বড় ভন্ড জ্ঞান পাপীদের সাথে মিশে বিভিন্ন ঘটনায় জড়ায়ে হাবু ডুবু খাচ্ছে। অনেকে আবার শিক্ষকের বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্ন করছে। সব মিলায়ে বর্তমান প্রজন্মের লেখা পড়া যেমন তেমন অবস্থা, এরপর কি পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে যাহারা একটু সচেতন তাহারা সবাই অনুধাবন করতে পারছে। ইদানিং দেখতে বা শুনতে পাচ্ছি জ্ঞান পাপী শিক্ষকদের দ্বারা যে সমস্ত জঘন্য কার্য্যক্রম সৃষ্টি হচ্ছে ইহাতে পুরো জাতি ক্ষতি গ্রস্থ। এবং শিক্ষার অগ্রগতি রোধ হচ্ছে। ইহাতে অভিভাবকরা ভিষণ উদ্বিগ্ন। শিক্ষকের দ্বারা যদি হয় ছাত্রী ধর্ষণ, এই জাতির মান সম্মান থাকবে কতক্ষন। এই দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকসহ সকল শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক। সেই সাথে প্রত্যেক জ্ঞান পাপী শিক্ষকদের এমন শাস্তি হওয়া উচিত যাহা আগামীতে মাইল ফলক হয়ে থাকবে। শিক্ষকের দ্বারা ছাত্রী ধর্ষণ এর থেকে জঘন্য কোন অপরাধ আছে বলে আমি মনে করি না। দেশ জাতি ও সমাজ যেন জ্ঞানপাপীদের ঘৃনা করে, নব প্রজন্মের শিশুদের শিক্ষা দিক্ষাসহ মানসিক বিকাশ ঘটুক, আমি এই প্রত্যাশা করি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)