অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক পাঠদানের পরিকল্পনা

ডেস্ক রিপোর্ট: ঝরে পড়া রোধ করতে এতদিন সব শিক্ষার্থীদের পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক বা নামমাত্র ব্যয়ে পড়ালেখা করানো হলেও এবার তা বাড়িয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করতে চায় সরকার। সেই লক্ষ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আপাতত যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানের সক্ষমতা রয়েছে সেগুলোতে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান চালু হবে। বাকি বিদ্যালয়গুলোকেও ধীরে ধীরে সক্ষম করে তোলা হবে।আগামী তিন বছরের মধ্যে অন্তত ১০ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করার লক্ষ্য রয়েছে। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা ব্যয়ও কমাবে।শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, সরকারের জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০-এর অঙ্গীকার বাস্তবায়নে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শিগগিরই শুরু হবে।২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতিতে তিন স্তরবিশিষ্ট শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়। সেই অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষার স্তর পঞ্চম থেকে বাড়িয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করা হয়। সেই অষ্টম শ্রেণি অবৈতনিক শিক্ষা বাস্তবায়ন করতে রোববার যৌথ বৈঠকে বসে সংশ্লিষ্ট দুই মন্ত্রণালয়
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন- শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন নাহার, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ, অধ্যাপক ড. মো. আবদুল হালিম, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. ফরিদ উদ্দিন আহমদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।বৈঠক সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রাথমিক থেকে নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি ও নানান আর্থসামাজিক কারণ ও প্রক্রিয়াগত কারণে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার বাড়ছে। এই ঝরে পড়া রোধ করতে সরকারের জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০-এর আলোকে নিম্ন মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক বা নামমাত্র ব্যয়ে করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে সম্মত হয়েছে দুই মন্ত্রণালয়। এই লক্ষ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের অবৈতনিক শিক্ষা তথা পাঠদান কার্যক্রম ষষ্ঠ থেকে অষ্টম
শ্রেণি পর্যন্ত বিস্তৃত করবে এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা ব্যয় কমিয়ে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে কাজ করবে।
সূত্রটি আরো জানায়, অবৈতনিক করলে যেমন সুবিধা রয়েছে ঠিক তেমনি অনেক অসুবিধাও রয়েছে। শিক্ষানীতির আলোকে এরই মধ্যে ৬৯৭টি বিদ্যালয়ে পাইলট প্রকল্প হিসেবে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস চলছে। ২০২১ সালের মধ্যে সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তা পুরোপুরি বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পটি নিয়ে শুরুতে তোড়জোড় থাকলেও পরে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে দেখা দেয় যোজন যোজন ফারাক। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে অবকাঠামো ও শিক্ষক সংকটের কারণে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়ে। এ ছাড়া সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন। আর ষষ্ঠ থেকে ওপরের স্তরের শিক্ষা কার্যক্রম দেখভাল করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ হিসেবে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম দেখভাল করার কথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। দুই মন্ত্রণালয় একযোগে কাজটি করতে পারেনি। আবার অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এক মন্ত্রণালয়ের অধীনেও নেয়া হয়নি। সব মিলিয়ে এই প্রক্রিয়ায় দেখা দেয় ‘জগাখিচুড়ি’ অবস্থা। তাই এবার কীভাবে এই অবৈতনিক প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করা হবে সেজন্য একটি কমিটি করে নীতিমালা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। শিগগিরই এই কমিটি করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, সরকারের শিক্ষানীতির আলোকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিকভাবে পাঠদান করার জন্য আমরা অনেক আগেই কার্যক্রম শুরু করেছি। এরই মধ্যে ৬৯৭টি বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উত্তীর্ণ করা হয়েছে। শিগগিরই আরো ১৫৪টি স্কুলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান শুরু হবে। এছাড়া সম্প্রতি আমরা মাঠপর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছি। ৮১ ভাগ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উত্তীর্ণ করার সক্ষমতা রয়েছে। আমরা সেগুলোতে করবো।প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, যেসব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো রয়েছে সেসব বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে। গত ৩০ এপ্রিল প্রাথমিকের সব আঞ্চলিক উপ-পরিচালক ও জেলা শিক্ষা অফিসারদের কাছ থেকে বিদ্যালয়ের তালিকা চাওয়া হয়েছে। যেসব বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত চালু করা যাবে সেসব বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকসংখ্যাও জানতে চেয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর।তারা আরো বলেন, সরকারের এই নীতি অনেক আগের। আমরা প্রক্রিয়া শুরু করলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নানা অসহযোগিতার কারণে তা করতে পারিনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় মনে করে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত আমাদের মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে এলে তাদের ক্ষমতা কমে যাবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমদ বলেন, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যেসব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পাঠদান করার সক্ষমতা রয়েছে তারা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উত্তীর্ণ করবে। যেসব প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা নেই সেগুলোর সক্ষমতা বাড়ানো হবে। আর আমরা নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষা ব্যয় যতটুকু সম্ভব কমিয়ে আনার চেষ্টা করবো।প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, শিক্ষানীতির আলোকে আমরা এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছি। আজকের বৈঠকেও অবৈতনিকের বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিশেষজ্ঞরা নানা মত দিয়েছেন। আমরা বৈঠকের রেজল্যুশন হাতে পেলে পরবর্তী কাজ শুরু করবো।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)