কৃষিতে ইএনএম ব্যবহারে ঢাবির গবেষকদের সাফল্য

ডেস্ক রিপোর্ট: ইঞ্জিনিয়ারড ন্যানোমেটেরিয়াল (ইএনএম) ব্যবহারের মাধ্যমে বীজের অঙ্কুরোদগম এবং উদ্ভিদের সার্বিক বৃদ্ধি ঘটানোর প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) একদল গবেষক। এ উদ্ভাবনী প্রক্রিয়া অনুসরণে সমগ্র বিশ্বের কৃষি উৎপাদনে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সবুজ বিপ্লবের সম্ভাবনা দেখছেন এই গবেষকরা।গবেষণাটিতে যৌথভাবে নেতৃত্ব দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের শিক্ষক ড. আহসান হাবীব এবং ড. স্বর্ণালী ইসলাম। এতে সহযোগিতা করেন একই বিভাগের শিক্ষার্থী সামিয়া ইসলাম, সৌমিক দে শোভন, আসিফ রহমান দীপ্ত এবং আতিক বি. জাকির। তাদের দীর্ঘ দেড় বছর প্রচেষ্টার পর ২০২৩ সালের মাঝামাঝিতে এসে এ গবেষণা সফলতার মুখ দেখে। ২০২২ সালের প্রথম দিকে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের আর্থিক সহায়তায় শুরু হয় ন্যানো পার্টিকেলসের উপর এই গবেষণা।জানা গেছে, গবেষকরা ইঞ্জিনিয়ারড ন্যানোম্যাটেরিয়ালসকে (ইএনএম) কৃষিতে একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এই ন্যানোম্যাটেরিয়ালগুলির বৈশিষ্টের মধ্যে উদ্ভিদের টিস্যুতে প্রবেশ করার ক্ষমতা, উচ্চ শোষণ ক্ষমতা, প্রতিক্রিয়াশীল সাইট, অনুঘটক কার্যকলাপ এবং রাসায়নিক স্থিতিশীলতা। ইএনএম এর বৈশিষ্ট্যগুলিকে ব্যবহার করে সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব উপায়ে প্রতিকুল পরিবেশে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং অধিকতর পুষ্টিযুক্ত শস্য উৎপাদনের সম্ভবনা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। গবেষণাটি কৃষিতে বীজের অঙ্কুরোদগম হার, চারাগাছের বৃদ্ধি এবং ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে ন্যানো পার্টিকেলগুলির ব্যবহার সম্ভবনার নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে বলে দাবি গবেষকদের।এ গবেষণার সফলতা সম্পর্কে ড. আহসান হাবীব বলেন, আমরা বিশ্বাস করি যে, আমাদের গবেষণাটি টেকসই কৃষির অগ্রগতিতে এবং চাষাবাদ পদ্ধতিতে উদ্ভাবনী প্রযুক্তি গ্রহণের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে। জিঙ্ক অক্সাইড ন্যানো পার্টিকেল ব্যবহার প্রতিকুল পরিবেশে অঙ্কুরোদগম হার বাড়ানো এবং উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও জিঙ্ক অক্সাইড ন্যানো পার্টিকেল উদ্ভিদের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এনজাইমেটিক কার্যকলাপের উন্নতিতে অভাবনীয় সম্ভবনা দেখিয়েছে।গবেষকগণ সিডপ্রাইমিং প্রক্রিয়াগুলিকে অপ্টিমাইজ করার ক্ষেত্রে ন্যানো পার্টিকেল এর ‘আকার’এর তাৎপর্য তুলে ধরেন। এছাড়াও এতে কৃষিক্ষেত্রে ন্যানো পার্টিকেলের সুনিশ্চিত ব্যবহারকে বেগবান করতে বিভিন্ন আকারের জিঙ্ক অক্সাইড ন্যানো পার্টিকেল সিন্থেসিস এর বেশ কয়েকটি পদ্ধতি দেখান হয়েছে। এসব বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির পাশাপাশি গবেষকদল নির্ভুল এবং দ্রুতগতিতে বীজের অঙ্কুরোদগম সনাক্তকরণের একটি স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম উদ্ভাবন করেছেন। যা মূলত ফিল্ড লেভেলে ব্যবহারের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।এ সম্পর্কে ড. আহসান হাবীব ব্যাখ্যা করে বলেন, এ সিস্টেমটি দক্ষতার সাথে ফসলের বৃদ্ধি নিরীক্ষণ করে নির্ভুল তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের সুবিধা দেয়। গবেষকদলের দাবি, জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ কবলিত বাংলাদেশের মানুষের জন্য দীর্ঘস্থায়ী খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি, উপযোগী এবং পরিবেশবান্ধব কৃষিব্যবস্থা নিশ্চিত করতে তাদের উদ্ভাবন বিশেষ গুরুত্ব বহন করবে এবং আনতে পারে কৃষিতে যুগান্তকারী পরিবর্তন।
গবেষণার সার্বিক বিষয়ে আরও সহযোগিতা করেন মো. আরমান হোসেন শুভ, ড. মাহাবুব আলম ভূঁইয়া, ড. মো. নুরুল আমিন ও ড. তাসলিম উর রশিদ।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)