প্রতারণা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে তালার শিক্ষক ইষ্টম দাস জামিন নিতে বাড়ি বিক্রির উদ্যোগ

রঘুনাথ খাঁ:
চাকরি পাইয়ে দিতে ব্যর্থ হওয়ায় টাকা ফেরতের পরিবর্তে দেওয়া ১০ লাখ টাকা চেক ডিজঅনারের মামলায় গ্রেপ্তারকৃত ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ইষ্টম দাসকে মুক্ত করতে বাড়ি বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ১০ এপ্রিল বুধবার রাতে তাকে নিজ বাড়ি তালা উপজেলার ফতেপুর গ্রাম থেকে গ্রেপ্তারের পর তার স্ত্রী অঞ্জলী দাস এ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
অপরদিকে তালা ও পাটকেলঘাটা এলাকায় চাকরি দেওয়ার নামে নেওয়া পৌনে দুই কোটিরও বেশি টাকা ফেরৎ পেতে আইনপ্রয়োগকারি সংস্থার কর্মকর্তাদের শরনাপন্ন হওয়া দুইজনসহ এক ডজনের বেশি লোক বাড়ি বিক্রির চেষ্টার খবরে হতাশ হয়েছেন। কে আগে বাড়ি বিক্রির টাকা নিতে পারবেন তা নিয়ে শুরু হয়েছে প্রতিযোগিতা। চাকরি বাঁচাতে পাঁচ লাখ টাকা আদালতে জমা দিয়ে জামিন নিতে মরিয়া ইষ্টম দাসের স্ত্রী অঞ্জলী দাস।
গ্রেপ্তারকৃত ইষ্টম দাস তালা উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়নের ফতেপুর গ্রামের নগেন্দ্রনাথ দাসের ছেলে ও ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।
তালা ও পাটকেলঘাটার একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, সহকর্মী সুভাষ দাসের মেয়ে রমা রানী দাসকে চাকরি দেওয়ার নামে নেওয়া এক লাখ টাকার মধ্যে ৫০ হাজার টাকা ফেরৎ দেন ইষ্টম দাস। বাকী টাকা চাওয়ায় প্রতিশোধ নিতে স্ত্রী অঞ্জলী দাসের কাছের লোক বলে পরিচিত আকাশ দাসকে দিয়ে গত ১০ মার্চ বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে ডেকে পিটিয়ে জখম করান ইষ্টম দাস। পরবর্তীতে নিজের ও আকাশ দাসের পিঠ বাঁচাতে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়–য়া মেয়েকে ৭ মার্চে শ্লীলতাহানির অভিযোগ দিয়ে ১৬ মার্চ মামলা করিয়ে সুভাষ দাসকে গ্রেপ্তার করানো হয়। ৮ এপ্রিল সুভাষ দাস জামিনে মুক্তি পান। অপরদিকে পাটকেলঘাটা থানাধীন দাতপুর গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে আজাহারুল ইসলামকে একই গ্রামের সরকারি প্রাতমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরী কাম নৈশ প্রহরী হিসেবে চাকরি দেওয়ার নামে নেওয়া ১০ লাখ টাকা নেন ইষ্টম দাস। চাকরি না হওয়ায় টাকার পরিবর্তে সোনালী ব্যাংকের তালা শাখার চেক দিলে হিসাব নম্বরে টাকা না থাকায় আদালতে মামলা করেন আজাহারুল। ওই মামলায় চলতি বছেরর ১৭ জানুয়ারি ইষ্টম দাসের দুই মাস কারাদÐসহ টাকা ফেরৎ দিতে আদেশষ দেন সাতক্ষীরার যুগ্স জেলা জজ -২য় আদালতের বিচারক বেল্লাল হোসেন। ওই মামলায় ৯ এপ্রিল রাত ১২টার দিকে বাড়ি থেকে পুলিশ ইষ্টম দাসকে গ্রেপ্তার করে পরদিন জেল হাজতে পাঠায়।
এ ছাড়া গ্রেপ্তারকৃত ইষ্টম দাস ফতেপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও খলিলনগর ইউপি’র সাবেক সদস্য ছিদ্দিকুর রহমানের ভাই আনিসুর রহমানকে চাকরি দেওয়ার নামে ১৩ লাখ, ফতেপুর গ্রামের তারপদ দাসের ছেলে রঞ্জুকে চাকুরি দেওয়ার নামে ছয় লাখ, বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নামে হরিশ্চন্দ্রকাটি গ্রামের দীপঙ্কর ঘোষের কাছ থেকে ১৫ লাখ, আড়ংপাড়া গ্রামের সোহরাব হোসেনের ভাইপো মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী তাহমিনা খাতুনের প্রাইমারী স্কুলে চাকুরি দেওয়ার কথা বলে ১০ লাখ. একই গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নরিম উদ্দিনের স্ত্রী শিরিনা আক্তারকে প্রাইমারী স্কুলে চাকুরি দেওয়ার নামে সাত লাখ, খেশরার কার্তিক দাসের মেয়ে শিখা দাসকে চাকুরি দেওয়ার নামে সাড়ে সাত লাখ, পাঁচরকি গ্রামের গ্রাম পুলিশ রফিকুলের মেয়ে নাজমা খাতুনকে চাকুরি দেওয়ার নামে দুই লাখ ১০ হাজার, হাতবাস গ্রামের আব্দুল বারির ছেলেকে কারারক্ষীতে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নামে ১৫ লাখ, পাটকেলঘাটা থানাধীন সেনপুর গ্রামের ইমদাদুল হককে পরিসংখ্যান বিভাগে চাকুরি দেওয়ার নামে আট লাখ টাকা নেওয়াসহ কমপক্ষে ২০ জনের কাছ থেকে পৌনে দুই কোটির ও বেশি টাকা প্রতারণা করেছেন ইষ্টম দাস। এসব অপকর্মে সহায়তা করেছেন অঞ্জলী দাস ও আকাশ দাস। টাকা ফেরৎ না দিয়ে কয়েকজনকে নিজের ও অঞ্জলীর চেক দিয়েছেন। আবার চেক এর সঙ্গে নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে সাক্ষরও করেছেন ইষ্টম ও অঞ্জলী। এর মধ্যে নরিমউদ্দিন, সোহরাব হোসেন, ইমদাদুল হকসহ চারজন ইষ্টম দাসের বিরুদ্ধে আদালতে ৪০ লাখ টাকা প্রতারণার মামলা করেছেন। তবে চেক দিয়ে তালা বাজারের জুয়েলারী ব্যবসায়ি গণেশ শীলের কাছ থেকে ইষ্টম দাসের সুদে নেওয়া তিন লাখ টাকা ফেরৎ পেতে নতুন করে তোড়জোড় শুরু হওয়ায় বিপাকে রয়েছেন ইষ্টম- অঞ্জলী দাস। তবে জনতা ব্যাংকের তালা শাখা থেকে নেওয়া ক্ষৃদ্র ঋণ পরিশোধ না করায় দুশ্চিন্তায় রয়েছেন অঞ্জলী দাস।
তবে ইষ্টম দাস প্রতারণা মামলায় দুই মাস সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর তার অপকর্মের ঘটনা একের পর এক প্রকাশ পেতে থাকে। টাকা ফেরৎ পেতে তালা থানায় অভিযোগ করলে অঞ্জলি দাস তদন্তকারি কর্মকর্তাকে মানহানির মামলা দেওয়ার হুমকি দিলে পরবর্তীতে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেন হাতবাস গ্রামের আব্দুল বারি। গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক নাসিরউদ্দিন তাকে ইষ্টম দাসকে টাকা ফেরৎ দিতে বললে অঞ্জলী দাস ঈদের পর বাড়ি বিক্রি করে টাকা দেওয়ার কথা বলেন। এ ছাড়াও রঞ্জু, শিখা ছাড়াও কয়েকজনকে বাড়ি ও জমিক বিক্রি করে টাকা ফেরৎ দেওয়ার কথা বলা হলেও বাড়ি সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকায় বিক্রি হলে সাজা মামলায় অর্ধেক পাঁচ লাখ টাকা জমা দিয়ে আপিল করার পর বাকি টাকা কে কতটা আদায় করতে পারেন তা নিয়ে প্রতারিতদের মধ্যে একটা অলিখিত প্রতিযোগিতা চলছে। ফলে সোমবার আদালত পাড়ায় এসেও বিচলিত ছিলেন অঞ্জলী দাস।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)