বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল গুড়িয়ে দিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের মার্কেট নির্মাণ

স্টাফ রিপোর্টার :সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলার নওয়াবেকী বাজারে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল ও চত্বর ভেঙ্গে অবৈধ ভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে মার্কেট। আটুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সালেহ বাবুর নেতৃত্বে সরকারী জায়গায় নির্মিত ওই বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল এবং বঙ্গবন্ধু চত্বর গুড়িয়ে দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের মার্কেট নির্মাণ করায় স্থানীয় এলাকাবাসী, আওয়ামী লীগ,যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃস্টি হয়েছে। স্থানীয় ক্ষুদ্রবাবসায়ীদের উচ্ছেদ ও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙার প্রতিবাদে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেন স্থানীয়রা। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যান প্রভাবশালী হওয়ায় তাতে কোন ফল হয়নি। বরং সরকারী ওই জায়গায় নির্মাধীন মার্কেটের দোকান বরাদ্দের নামে প্রায় দুই কোটি টাকার অর্থ বানিজ্য করেছেন এমন অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এনিয়ে এলাকায় আওয়ামী লীগ দলীয় নেতা-কর্মীসহ এলাকাবাসী ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। এদিকে ইউপি চেয়ারম্যানের নির্মাণাধীন মার্কেটের কাজ বন্ধ করতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন সরকারী কর্মচারী।
সরেজমিনে নওয়াবেকী বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আটুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সালেহ বাবু বাজারের পেরিফেরিভুক্ত ৪২ শতক জায়গা দখলে নিয়ে মার্কেট নির্মান করেছেন। এই জায়গায় থাকা বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল ও চত্বর ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। ভিত্তিপ্রস্তর ও উদ্বোধনের নাম ফলক থেকে সদ্য সাবেক এমপি শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম জগলুল হায়দারের নামটিও সিরিজ কাগজ দিয়ে ঘষে শ্বেতপাথর থেকে উঠিয়ে ফেলা হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুরালের ছবি উঠিয়ে ফেলা হয়েছে। আর বঙ্গবন্ধু চত্বর গুড়িয়ে সেখান থেকে ইট ও বালিও সরিয়ে ফেলে সেখানে নির্মান করা হচ্ছে ২২টি দোকান ঘর।শ্যামনগর উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক জাকির হোসেন, আটুলিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক অহিদুল ইসলাম জানান, নওয়াবেকী বাজারে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে সদ্য সাবেক এমপি শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম জগলুল হায়দার সরকারি খাসখতিয়ান ভুক্ত জমিতে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও আন্তজার্তিক এবং জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সম্বলিত বঙ্গবন্ধু ম্যুরালসহ চত্বর তৈরী করেন। তার পর থেকে সেখানে শেখ রাসেলের জন্মদিন, জাতীয় শোক দিবস, শিশু দিবস, মহান বিজয় ও স্বাধীনতা দিবস সহ সকল জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান পালন করে আসছিল দলীয় নেতা-কর্মীসহ স্থানীয়রা। কিন্তু হঠান এই জায়গা নিয়ে অর্থব্যানিজ্য শুরু করেছে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সালেহ বাবু। তিনি প্রশাসনের সাথে যোগসাজসে বঙ্গবন্ধু মুরাল গুড়িয়ে দিয়ে সেখানে মার্কেট নিমাণ শুরু করেছেন। প্রতিটি দোকান বরাদ্দের নামে ৮ থেকে ১০ লক্ষ টাকা অর্থ বানিজ্য করেছেন। কেন বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল ও চত্বর ভাংচুর করা হলো এর সুষ্ট তদন্ত ও বিচারের জন্য জেলা প্রশাসন এবং প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।স্থানীয় ইউপি সদস্য স্বপন কুমার বৈদ্য, চায়ের দোকানদার সাজ্জাত হোসেন সাজু, স্থানীয় ব্যবসায়ী মহাসিন ঢালী, জাহিদ ও আশরাফুল জানান, ইউপি চেয়ারম্যান আবু সালেহ বাবু ক্ষুদ্র ১৬ জন ব্যবসায়ী সাজু, সাইফুল নিমাই মাফুজা, জামাল, সেকেন্দার লিটন, পল্টুসহ অনেককে উচ্ছেদ করে ২২ টি দোকান ঘর নির্মান শুরু করেছেন। এর মধ্যে ১৯টি দোকান তার নিজস্ব ব্যক্তিদের মধ্যে বরাদ্দ দেয়ার চুক্তি দোকান প্রতি সেলামী হিসাবে ৮ লক্ষ করে টাকা আদায় করেছেন। তাতে করে দু কোটির বেশি টাকা আদায় করা হয়েছে। বিপুল পরিমান এই অর্থ আদায় করে চেয়ারম্যান আরসিসি পিলার নির্মাণর কাজ শুরু করলে স্থানীয় ক্ষুদ্্রব্যবসায়ী সাকু, সাইফুল, নিমাই, জামাল, সেকেন্দার, রবিউল, ফেরদাউস ও লিটন জেলা প্রশাসক বরাবর গত ৭ মার্চ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগে বলা হয়, চেয়ারম্যান আবু সালেহ বাবু ৪১ শতকের পেরিফেরি ভুক্ত জায়গা দখল করে সেখানে দোকান প্রতি ১০ লক্ষ করে টাকা নিয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি ২ কোটি ত্রিশ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

এদিকে স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদসহ বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাঙার প্রতিবাদে স্থানীয় জনসাধারণ একটি মানববন্ধনও করেন। পরে গত ৪ মার্চ সহকারী কমিশনার ভূমি ঘটনাস্থলে এসে সার্ভেয়ারকে জমি মাপ জরীপ করার নির্দেশনা দেন। মাপ জরিপের পর কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হন, যে ৪২ শতক জায়গায় মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে তা স্থানীয় নওয়াবেকী বাজারের পেরিফেরিভুক্ত জায়গা। পরে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্মাণাধীন মার্কেট এর কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেন। কিন্তু এতে কর্ণপাত করেননি চেয়ারম্যান আবু সালেহ বাবু। তিনি নির্মাণ কাজ এগিয়ে নিতে থাকেন। ১৬ মার্চ শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে একজন সার্ভেয়ার ঘটনাস্থলে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে বললে ঐ সার্ভেয়ারকে মারতে উদ্যত হন চেয়ারম্যান বাবুর লোকজন।

এব্যাপারে আটুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু সালেহ বাবু জানান, প্রয়ত ইউপি চেয়ারম্যান শহরআলী ইউনিয়ন পরিষদের নামে ৫ একর জমি দান করে যান। বর্তমানে সর্বসাকুলে সেখানে জমি রয়েছে ৩ একর ৭২ শতক। সেই জমির ভিতর ওই চত্বর সরিয়ে এই মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে। চেয়ারম্যান ও পরিষদের অপর ইউপি সদস্য আক্তারুজ্জামান লিটিল দোকানঘর বরাদ্দের নামে অর্থ আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেন।

তবে আটুলিয়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা জানান, মার্কেট নির্মাণের কাজ শুরু হলে তিনি বিষয়টি লিখিতভাবে সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) জানান। তিনি এও বলেন চেয়ারম্যান আবু সালেহ বাবুর আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রাচীর নির্মাণের আদেশ দিয়েছেন।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) জানান, পেরিফেরিভুক্ত জায়গায় মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ সত্য। নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সাতক্ষীরা-৪ আসনের সদ্য সাবেক এমপি শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এস এম জগলুল হায়দার বলেন, ১৯২২ সালের দিকে নওয়াবেকি বাজারের ইউনিয়ন পরিষদের সামনে সরকারি জায়গায় জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সম্বলিত বঙ্গবন্ধু ম্যুরালসহ চত্বর করা হয়। কিন্তু এই ম্যুরাল ও বঙ্গবন্ধু চত্বর ভেঙ্গে সেখানে মার্কেট করছে ইউপি চেয়ারম্যান ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। এটা অত্যন্ত দূঃখজনক ঘটনা। আমি এই ঘটনার সুষ্ট তদন্তসহ বিচার দাবি জানাচ্ছি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)