মহাসচিব পদে বিকল্প পাচ্ছে না বিএনপি

ডেস্ক নিউজ:
টানা তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির হয়ে মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট বর্জন, একাদশে ভরাডুবি আর দ্বাদশে অংশগ্রহণ না করার অভিজ্ঞতা পার করেছেন তিনি।

এদিকে ডায়াবেটিস, হৃদরোগসহ বেশকিছু রোগে বর্তমানে অসুস্থ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সম্প্রতি অসুস্থতার কারণে তিনি সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরেছেন। বেশিরভাগ সময় বাসাতেই বিশ্রাম নিচ্ছেন। এ অবস্থায় বিএনপির রাজনীতিতে মহাসচিব পদের পরিবর্তন বা বিকল্প নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন।

দলীয় সূত্র মতে, ২৮ অক্টোবর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গ্রেফতার হয়েছিলেন। ঐদিন বিএনপির জনসভা থেকে সৃষ্ট তাণ্ডবের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। সাড়ে ৩ মাসের বেশি সময় তিনি কারাভোগ করেছিলেন। তখন দলের হাইকমান্ড থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল বিএনপিতে একজন নেতা গ্রেফতার হলে একজন ভারপ্রাপ্ত নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। সে হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গ্রেফতারের পরপরই একজনকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়ার কথা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাউকেই ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব করা হয়নি। সাড়ে তিন মাস বিএনপি মহাসচিব ছাড়াই চলেছে।

তবে কিছুদিন নজরুল ইসলাম খান বিএনপির মুখপাত্র হিসেবে মহাসচিবের মতো দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু তার সময়কাল বেশিদিন ছিল না। তার পরপরই বিএনপিতে মহাসচিবের ভূমিকায় অঘোষিতভাবে অবতীর্ণ হয়েছিলেন মঈন খান। কিন্তু মঈন খানের সঙ্গে কর্মীদের দূরত্ব এতটাই যে, মঈন খান কর্মীদের কোনো আশা জাগাতে পারেননি। তার ব্যাপ্তি সুশীল সমাজ ও কূটনৈতিক পাড়ার মধ্যেই সীমিত। এ অবস্থায় এখন যদি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপির মহাসচিবের মতো দায়িত্ব থেকে অবসর গ্রহণ করেন তাহলে বিএনপির মহাসচিব কে হবেন? এ নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির সিনিয়র ও দায়িত্বশীল এক নেতা জানান, দলে মহাসচিব হওয়ার মতো একাধিক ব্যক্তি রয়েছেন, কিন্তু এই মুহুর্তে কেউ এই দায়িত্ব নিতে রাজি নন। বিএনপির মহাসচিব হওয়ার ক্ষেত্রে যদি জ্যেষ্ঠতার বিবেচনা করা হয়, তাহলে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নাম আসে সবার আগে। কিন্তু খন্দকার মোশাররফ হোসেন এখন শারীরিকভাবে অসুস্থ। তিনি এ দায়িত্ব নিতে পারবেন না এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক। এরপরে আসে বিএনপির আরেক সিনিয়র নেতা নজরুল ইসলাম খানের নাম। কিন্তু তিনিও লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়ার আস্থাভাজন নন বলেই অনেকে মনে করেন। মির্জা আব্বাসের নাম আলোচনায় এলেও তিনি নিজেই মহাসচিব হতে আগ্রহী নন। কারণ তারও কিছু শারীরিক জটিলতা আছে বলে বিভিন্ন মহল মনে করেন।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে বিএনপি কখনোই মহাসচিব করবে না। কারণ বিএনপির মধ্যে একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী আছে যারা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মতো একজন সংখ্যালঘু ব্যক্তিকে মহাসচিব করার ব্যাপারে রাজী হবেন না। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী অনেকের পছন্দের ব্যক্তি এবং দলের ভেতরেও তারা বেশ জনপ্রিয়। এ অবস্থায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সবচেয়ে ভালো বিকল্প হিসেবে আমীর খসরু মাহমুদকে মনে করা হয়। কিন্তু আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী নানা মামলায় জর্জরিত এবং এই মুহূর্তে তিনিও মহাসচিবের দায়িত্ব গ্রহণ করতে তেমন আগ্রহী নয় বলে জানা গেছে।

আর ড. মঈন খানের বিষয়টি হল রাজনৈতিক অঙ্গনে তার খুব একটা গ্রহণযোগ্যতা নেই। এছাড়া মহাসচিব হওয়ার মতো আছেন, রুহুল কবির রিজভী। কিন্তু লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার কাছে তিনি পছন্দের ব্যক্তি নন। ফলে বিএনপি এখন মহাসচিব করার মতো কাউকে খুঁজে পাচ্ছে না। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অসুস্থতা বিএনপিকে হয়তো আরেকটি নেতৃত্ব সংকটে নিয়ে যেতে পারে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সম্পর্কে নোয়াখালীর নিজ বাড়িতে যাওয়ার পথে ফেনীর দাগনভূঞায় সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেন, বেশ কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ সফরে আসা একটি মার্কিন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। সেখানে নেতৃত্ব দিয়েছেন ফখরুল। আমার কাছে অবাক লাগে মির্জা ফখরুল জেল থেকে বের হয়ে মার্কিন প্রতিনিধি দল আসার দিনে লাঠিতে ভর দিয়ে নালিশ করতে গেছেন। অথচ তিনি অসুস্থতার জন্য জামিন পেয়েছেন। তার দলে তার পক্ষে আর কোনো নেতা নেই?

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)