পুলিশের উপর হামলা মামলায় শেখ শফিউল্লাহ ওরফে গোল্ড মনির জামিন

রঘুনাথ খাঁঃ সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কেরালকাতা ইউনিয়নের কোটার মোড়ে যাত্রীবাহী পরিবহনে ডাকাতির চেষ্টা ও পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় জামিন পেলেন সাতক্ষীরার বহুল আলোচিত শেখ শফিউল্লাহ ওরফে মনিরুল ওরফে গোল্ড মনি। মঙ্গলবার সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ চাঁদ মোহাম্মদ আব্দুল আলীম আল রাজী অভিযোগ গঠণের পূর্ব পর্যন্ত তার জামিন মঞ্জুর করেন আদালত । শেখ শফিউল্লাহ মনি সাতক্ষীরা শহরের দক্ষিণ কাটিয়ার শেখ মোশাররফ হোসেনের ছেলে। একইসাথে তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার রাজারহাট নিউ টাউন এলাকার বাসিন্দা।

মামলার বিবরনে জানা যায়, দুটি প্রাইভেটকারে করে একদল ডাকাত সাতক্ষীরা- নাভারন সড়কের কোটার মোড় এলাকায় যাত্রীবাহি পরিবহনে ডাকাতি করবে এমন গোপন খবরের ভিত্তিতে গত বছরের ৬ মার্চ রাত দুটোর দিকে সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে পুলিশ সেখানে অবস্থান নেয়। প্রাইভেটকারে থাকা ডাকাত দলের সদস্যরা কোটার মোড় এলাকায় আসা মাত্র পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। এ সময় পুলিশও পাল্টা গুলি ছোঁড়ে। ৫ মিনিট ধরে গোলাগুলি চলে। এ সময় কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। গাড়িতে অবস্থানকারি মিজানুর রহমান নামে এক ডাকাত দলের সদস্য হাতের তালুতে গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় পুলিশ ছয়জন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করে। ডাকাত দুলের সদস্যদের ব্যবহৃত দুটি প্রাইভেটকার থেকে পুলিশ একটি বিদেশী পিস্তল, দুই রাউÐ গুলি, চারটি বাঁশের লাঠি ও দুটি চাপাতি উদ্ধার করে। এ ঘটনায় কলারোয়া থানার উপপরিদর্শক অনিল মুখার্জী বাদি হয়ে গ্রেপ্তারকৃত যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার হাজির আলী গ্রামের মোঃ বসিরের ছেলে হুমায়ুন কবীর, একই জেলার কোতোয়ালি থানার মোল্লাপাড়া গ্রামের ফজর আলী উকিলের ছেলে শহীদুল ইসলাম, একই গ্রামের ধনা মিয়ার ছেলে মিজানুর রহমান, শার্শা থানার বসন্তপুর গ্রামের নূর মোহাম্মদের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুন, একই গ্রামের আব্দুল ওহাবের ছেলে আবুল কালাম, সাতক্ষীরা শহরের মধ্য কাটিয়ার আব্দুল হামিদের ছেলে শেখ শহীদুজ্জামান প্রিন্সসহ যশোরের শার্শা থানাধীন সেতাই গ্রামের আব্দুল গণি বিশ্বাসের ছেলে কবীর বিশ্বাস ও সাতক্ষীরা শহরের দক্ষিণ কাটিয়ার শেখ মোশাররফ হোসেনের ছেলে শেখ শফিউল্লাহ ওরফে মনিরুল ওরফে গোল্ড মনির নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২/৩ জনের নাম উল্লেখ করে কলারোয়া থানায় সরকারি কাজে বাধা এবং পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় (জিআর-৭৪/২৩) ও অস্ত্র আইনে জিআর-৭৫/২৩ নং পৃধক দুটি মামলা দায়ের করেন। গুলিবিদ্ধ মিজানকে প্রথমে কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত উপপরিদর্শক রঞ্জন কুমার, আনোয়ার হোসেন ও সিপাহী রাজীব মীরকে কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা তৎকালিন কলারোয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ (বর্তমানে শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) গত বছরের ১৩ জুন এজাহারে উল্লেখিত আটজনের নামসহ কলারোয়ার ধানঘোরা গ্রামের ছহিলউদ্দিন মোড়লের ছেলে মোঃ আব্দুস সামাদের নাম উল্লেখ করে(জিাঅর-৭৫/২৩) আদালতে অস্ত্র আইনে ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এ ছাড়া জিআর- (৭৪/২৩) নং মামলায় পেনাল কোডের ৩৯৯,৪০২,৩৩২,৩৫৩ ধারায় নয় জন আসামীর নাম উল্লেখ করে ২৫২ নং অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

সাতক্ষীরা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. আসাদুজ্জামান জানান, মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের পর শেখ শফিউল্লাহ ওরফে মনিরুলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে মামলা বিচারের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। একইভাবে ডাকাতির চেষ্টা ও পুলিশের উপর হামলা করে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে দায়েরকৃত অভিযোগপত্রটি বিচারের জন্য মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে পাঠানো হয়। গত ২০ ফেব্রæয়ারি মঙ্গলবার শেখ শফিউল্লাহকে অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় হাজির করিয়ে জামিন আবেদন করা হয়। বিচারক উভয়পক্ষের শুনানী শেষে শফিউল্লাহের জামিন না’মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সকল আসামীদের বিরুদ্ধে তদন্তকারি কর্মকর্তার অস্ত্র আইনের ১৯(এফ) ধারায় ও বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫(ডি) ধারায় আনা অভিযোগপত্রটি আমলে নিয়ে তা বিচারের জন্য আগামি ১২ মার্চ দিন ধার্য করে বিশেষ ট্র্রাবি্যুনাল ২ এ পাঠানো হয়। এ ছাড়া ২০ ফেব্রæয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর গোল্ড মনিকে কলারোয়া থানার জিআর-৭৪/২৩ নং মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে জামিন আবেদন করলে তা না,মঞ্জুর করা হয়। একপর্যায়ে আসামী পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. শাহ আলম গত ৪ মার্চ জিআর-৭৪/২৩ নং মামলায় গোল্ড মনির জামিনের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ২৫৭/২৪ নং ক্রিমিনাল মিস কেস দাখিল করেন। পরদিন অর্থাৎ মাত্র একদিন পর মঙ্গলবার শুনানীর জন্য দিন ধার্য করা হয়। ওই দিন অর্থাৎ ৫ মার্চ আসামীপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের শুনানী শেষে বিচারক তাকে পাঁচ হাজার টাকা বÐে জামিনে মুক্তির আদেশ দেন। শুনানীতে অংশ নিয়ে আসামীপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. শাহ আলম বলেন, উর্দ্ধতন পুলিশ কর্মকর্তার কাছে সাতক্ষীরারপুলিশের বিরুদ্ধে সোনা লুটপাটের অভিযোগ করায় তাকে কলারোয়া থানার জিআর-৭৪/২৩ নং মামলায় আসামী শ্রেণীভুক্ত করা হয়।
প্রসঙ্গত, পুলিশের বিরুদ্ধে সোনা লুটপাটের অভিযোগ এনে রোষানলে পড়ায় ভোমরা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট থানাধীন ইটিÐা কলবাড়ি এলাকায় গত বছরের ১৮ এপ্রিল গ্রেপ্তার হন শেখ শফিউল্লাহ। অবৈধপথে ভারতে প্রবেশ করার মামলায় তিনি জেল হাজতে থাকলেও ভারতীয় নাগরিক হিসেবে গত বছরের ১১ অক্টোবর তিনি বসিরহাটের অতিরিক্ত সেশন জজ আদালত থেকে শর্তসাপেক্ষে জামিন পান। পরদিন তিনি কারামুক্ত হন। সম্প্রতি তিনি দেশে ফিরে গত ২০ ফেব্রæয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।
তবে ৪ মার্চ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ক্রিমিনাল মিস কেস করে কিভাবে পরদিন ধার্য দিন পেলেন তা নিয়ে মঙ্গলবার দুপুর থেকে আদালতপাড়া আলোচনামুখর ছিল।
সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ কলারোয়া থানার জিআর-৭৪/২৩ নং মামলায় মঙ্গলবার শেখ শফিউল্লাহর জামিন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)