টুথপেস্ট-হ্যান্ডওয়াশ ব্যবহারে প্রজনন সমস্যার ঝুঁকি

ডেস্ক নিউজ:
দেশের বাজারে বিক্রি হওয়া বিভিন্ন ব্র্যান্ডের টুথপেস্ট ও হ্যান্ডওয়াশে বিপজ্জনক মাত্রায় প্যারাবেনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ‘প্যারাবেন’ এমন এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ, যা আমাদের হরমোন নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরত্বপূর্ণ এন্ড্রোকাইন সিস্টেমকে ব্যাহত করে। এ কারণে বেশ কয়েকটি দেশ এ ধরনের পণ্যে ‘প্যারাবেন’ ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।

বৃহস্পতিবার এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ সংক্রান্ত গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

দক্ষিণ কোরিয়ার ওনজিন ইনস্টিটিউট ফর অকুপেশনাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল হেলথ (WIOEH) সংস্থার সহযোগিতায় এ গবেষণা পরিচালনা করা হয়। মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকির আশঙ্কার কথা বিবেচনা করেই এসডো এই গবেষণা পরিচালনা করে।

গবেষণাটিতে মানব স্বাস্থ্যের ওপর এসব রাসায়নিক পদার্থের সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাবের বিষয়গুলোও তুলে আনা হয়।

গবেষণায় বাংলাদেশের জনপ্রিয় টুথপেস্ট এবং হ্যান্ডওয়াশগুলোতে প্যারাবেনের ব্যবহারের মাত্রা অনুসন্ধান করা হয়। গবেষণা পরিচালনার জন্য ঢাকার বিভিন্ন স্থানীয় দোকান থেকে টুথপেস্ট এবং হ্যান্ডওয়াশের ৩০টি নমুনা সংগ্রহ করার পর ল্যাব পরীক্ষার জন্য WIOEH-তে পাঠানো হয়।

গবেষণায় দেখা গেছে, টুথপেস্ট এবং হ্যান্ডওয়াশের সব নমুনাতেই নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রার রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। নমুনাগুলোতে ফ্লোরাইড (শুধু টুথপেস্টে) এবং সোডিয়াম ডাইক্লোরাইডের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। আরো ভয়াবহ তথ্য হলো, প্রাপ্তবয়স্কদের পারসোনাল কেয়ার প্রোডাক্টে ২২টি নমুনার মধ্যে ৫টি পণ্যে সর্বোচ্চ মাত্রায় প্যারাবেনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

একটি টুথপেস্টে ১৮২৩ মাইক্রোগ্রাম/গ্রাম এবং দুটি হ্যান্ডওয়াশের নমুনায় ১৪০৩-১৮৩৪ মাইক্রোগ্রাম/গ্রাম প্যারাবেনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এমনকি শিশুদের একটি টুথপেস্টেও ৬৫৯ মাইক্রোগ্রাম/গ্রাম মিথাইলপ্যারাবেন এবং ৫০.৫ মাইক্রোগ্রাম/গ্রাম বিউটাইলপ্যারাবেনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

এ গবেষণায় ৭টি দেশের নমুনাও বিশ্লেষণ করা হয়। কিন্তু দেখা গেছে, বাংলাদেশি পণ্যগুলোতেই সবচেয়ে বেশি মাত্রায় প্যারাবেন ব্যবহার করা হয়।

গবেষণাটিতে মানব স্বাস্থ্যের ওপর এসব রাসায়নিক পদার্থের সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাবের বিষয়গুলোও তুলে আনা হয়েছে। যেমন প্যারাবেনের কারণে হরমোন নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাত, প্রজনন সমস্যা এবং এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকিও সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে ফ্লোরাইডের অতিরিক্ত ব্যবহার হাড়ের ভারসাম্য নষ্ট করে এবং দাঁতের এনামেল গঠনে সমস্যা তৈরি করে। এছাড়া অতিরিক্ত সোডিয়াম ডাইক্লোরাইড ব্যবহারের ফলে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং কিডনির সমস্যাও সৃষ্টি হতে পারে।

এসডোর চেয়ারপার্সন এবং সাবেক সচিব সৈয়দ মারগুব মোর্শেদ দৈনন্দিন ব্যবহৃত ব্যক্তিগত পরিচর্যা পণ্যতে প্যারাবেনের উপস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি টুথপেস্ট ও হ্যান্ডওয়াশে প্যারাবেনের উপস্থিতি সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।

এসডোর সিনিয়র টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মো. আবুল হাশেম বলেছেন, আমাদের দৈনন্দিন পণ্যে এতো উচ্চমাত্রায় এই বিষাক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার দেখে আমি অনেক উদ্বিগ্ন। এগুলো নীরবে আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে যাচ্ছে এবং আমাদের জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

এসডোর নির্বাহী পরিচালক সিদ্দিকা সুলতানা পারসোনাল কেয়ার প্রোডাক্টে ব্যবহৃত প্যারাবেনের ক্ষতিকারক প্রভাব এবং ঝুঁকিগুলো তুলে ধরেন। এই কেমিক্যালগুলোকে এন্ডোক্রাইন ডিসরাপ্টর হিসেবে ক্লাসিফাই করা হয়। তিনি সতর্ক করে বলেন, এগুলো আমাদের শরীরের হরমোন নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এবং প্রজনন সংক্রান্ত জটিলতাও সৃষ্টি করতে পারে।

প্যারাবেন এমন এক ধরনের রাসায়নিক যা প্রসাধনী, পারসোনাল কেয়ার প্রোডাক্ট (শ্যাম্পু, ডিওডোরেন্ট, হ্যান্ডওয়াশ) এবং ওষুধের মেয়াদ বাড়াতে ব্যবহৃত হয়। এগুলো কার্যকর প্রিজারভেটিভ বা সংরক্ষক হিসেবে কাজ করে। প্যারাবেন কম খরচ এবং সহজলভ্য হওয়ায় উৎপাদনকারীরা এটি বেশি পরিমাণে ব্যবহার করে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)