কলারোয়ায় স্ত্রীর নামে জমি লিখে দেয়ায় কুপিয়ে জখম!

রঘুনাথ খাঁ:

ছেলে সন্তান না থাকায় মেয়েদের প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে স্ত্রীর নামে জমি লিখে দেওয়াকে কেন্দ্র করে এক স্বর্ণচোরাচালানি ও এক অস্ত্র মামলার আসামীর নেতৃত্বে এক কলেজ ছাত্রী ও তার মাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার গাজনা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মারাত্মক জখম ওই কলেজ ছাত্রীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন গাজনা গ্রামের সহাদেব রায় এর মেয়ে কলারোয়া সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী লিমা রায় (১৭) জানান, কোন ভাই না থাকায় মেয়েদের বি ত করতে বাবার অবর্তমানে জমিজায়গা লিখে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন তার বড় জ্যাঠা মোহনলাল রায়, শ্রীপতিপুর কলাগাছি মোড়ে বসবসাকারি আঙুল ফুলে কলাগাছ কাকা অমল রায়, যশোরের কেশবপুরের বগা গ্রামের শ্বশুরবাড়িতে বসবসাকারি অস্ত্র ও ডাকাতি মামলার আসামী বিমল রায় ও সুধাংশু রায়। বাবার মৃত্যুুর পর হিন্দু আইন অনুযায়ি মেয়েদের পরিবর্তে ভাইপোরা যাতে জমি না পায় সেজন্য গত বছর মায়ের নামে সমস্ত জমি লিখে দেন বাবা। এরপর থেকে তার জ্যাঠা ও কাকারা মাকে ও তাকে সহ্য করতো পারছিলো না। একপর্যায়ে অমল কাকা নেপথ্যে থেকে বিমল কাকাকে দিয়ে বাবা, মা ও তার নামে মিথ্যা অভিযোগ এনে আদালতে মামলা, থানায় জিডিসহ পুলিশকে দিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানি শুরু করে। তাদের বাড়ির পূর্ব পাশে সামনের অংশে বেশি জমি আছে দাবি করে জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা চালায় কাকা ও জ্যাঠামহাশয়গণ। স্থানীয় ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলামের দিয়ে খাস জমিসহ মাপজরিপ করে জমি বুঝিয়ে দিয়ে ঘরবাড়ি ভাঙার হুমকি দেয় অমল ও বিমল কাকা। বিমল কাকা বাদি হয়ে সম্প্রতি ঘরে চুরি ও লুটপাটের অভিযোগ এনে আদালতে তাকেসহ বাবা ও মায়ের নামে মামলা করে। একই ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরীর পাশাপাশি আদালতে ১০৭ ধারার মামলা করে বিমল রায়। একইসাথে থানায় জমির বিরোধ সংক্রান্ত অভিযোগ করলে উপপরিদর্শক অনিল মুখার্জীর নেতৃত্বে থানায় বসাবসির মাধ্যমে দুইপক্ষের দুইজনকে দায়িত্ব দিয়ে জমি মাপজরিপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মাপজরিপের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এরই মাঝে এক সপ্তাহ আগে বিমল রায় তার বাড়িতে চুরি ও লুটপাটের অভিযোগে থানায় একটি অভিযোগ করে।
লিমা রায় আরো জানান, বাৎসরিক কালীপুজা উপলক্ষে শুক্রবার সকালে কাকা অমল ও বিমল স্বপরিবারে গ্রামের বাড়িতে আসেন। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বিমল কাকা তাদের দখলীয় জমি থেকে জোরপূর্বক নারিকেল পাড়তে ওঠার চেষ্টা করলে তিনি ও মা বাধা দেন। এ সময় কাকা অমল, সুধাংশু, বিমল, কাকিমা তুপ্তি রায়, চায়না রায়, কণকলতা রায়, কাকিমা ঝর্ণা রায়, রণজিৎ রায়ের স্ত্রী ঝর্ণা রায়, কাকাত ভাই অরিত্র, প্রান্ত, দীপঙ্কর রায় হাতে বাঁশের লাঠি ও দা নিয়ে তার ও মায়ের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। তাকে ও মাকে এলোপাাতাড়ি পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে জীবন বাঁচাতে বাবা একটি বাড়িতে আত্মগোপন করে। পরে বিমল কাকা গাছে উঠে নারিকেল পাড়ে। কাকা অমল ও সুধাংশু ওই নারিকেল নিয়ে চলে যায়। তারা যাতে হাসপাতালে ও থানায় না যেতে পারে সেজন্য বাড়ির সামনে অমল ও বিমলের নেতৃত্বে অবরোধ করা হয়। পুলিশ আসছে এমন খবর পেয়ে হামলাকারিরা চলে গেলে বাবা ও মা তাকে নিয়ে কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
প্রত্যক্ষদর্শী পারভিন আক্তার, রহিমা খাতুন, সীমা রায় ও সামিউল আযমসহ কয়েকজন জানান, একটি অসহায় পরিবারের মা ও মেয়ের উপর তাদেরই স্বজন অমল, বিমল, সুধাংশুসহ তাদের স্ত্রী ও সন্তানরা যেভাবে সশস্ত্র অবস্থায় ঝাঁপিয়ে পড়ে মারপিট করেছে তা যে কোন বর্বরতাকে হার মানায়।
এদিকে বসন্তপুর ও গাজনা এলাকার শরিফুল ইসলাম অসীম রায় ও শুকুর আলী জানান, অমল রায় কলারোয়া বাজারে শিল্পী জুয়েলার্স নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছেন।প্রথম শ্রেণীর স্বর্ণ চোরাচালানী হিসেবে তার নাম সকলের মুখে মুখে। স্বর্ণ চোরাচালান ও সুদের ব্যবসা করে তিনি জিরো থেকে হিরো হয়ে গেছেন। বর্তমানে স্বনামে ও বেনামে তিনি ২০ কোটিরও বেশি টাকার মালিক। ইতিপূর্বে স্বর্ণ ভারতে পাচার ও ভারত থেকে রুপার গহনা পাচার করে দেশে আনার সময় তিনি আইন প্রয়োগকারি সংস্থার হাতে আটক হলেও বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ছাড়া পেয়ে যান তিনি। কাজিরহাট এলাকায় ২০২২ সালে শেষের দিকে সোনা পাচারকারির সোর্স গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় খোয়া যাওয়া সোনা আমল রায়ের ছিল বলে তাদের ধারণা। এ ছাড়া সোনা পাচার নিয়ে বিতর্কের জেরে গত বছরের ১৯ আগষ্ট অমল রায়ের ভাড়াটিয়া কলারোয়া কৃষি অফিসে সদ্য যোগদানকৃত সুকান্ত বিশ্বাসকে আত্মহত্য করতে হয়। একইভাবে বিমল রায় বাড়ি ছেড়ে বিভিন্ন জায়গায় ভাই অমল রায়ের চোরাই সোনা বিক্রি করতে যেয়ে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন। মামলায় বিমল রায়কে বহুদিন জেল খাটতে হয়। বর্তমানে শ্যালক ইসমলাম ধর্ম গ্রহণ করায় চিকিৎসা করার কথা বলে শ্মশুর বিষ্টুপদ রায় এর কাছ থেকে সকল জমি নিজের নামে লিখে নিয়ে সেখানে স্থায়ী বসবাস করে আসছেন বিমল রায়। ভাই সহাদেব তার জমি স্ত্রীর নামে লিখে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ অমল, বিমল, সুধাংশু ও মোহনলাল শুক্রবার লিমা ও তার মা রতœা রায় এর উপর হামলা চালিয়েছে।
এ ব্যাপারে জুয়েলারী ব্যবসায়ি অমল রায় কোন প্রকার চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, নারিকেল পাড়তে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে লিমা ও তার মায়ের সঙ্গে তাদের হাতাহাতি হয়েছে। ভাই বিমল কয়েক বছর আগে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হয়েছিল মর্মে নিশ্চিত করেন তিনি।
কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ রণজিৎ হালদার জানান, আহ লিমা রায় এর মাথায়, ঘাড়ে, চোখে, কানে ও গলায় ভারী জিনিস দিয়ে আঘাতের ফলে রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন রয়েছে।
এ ব্যাপারে কলারোয়ার সরসকাটি পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক ইমাম হাসান জানান, খবর পেয়ে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশে গাজনা গ্রামে যান। স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে লিমা ও তার মায়ের উপর অমল, রায়, বিমল রায় ও সুধাংশুসহ তাদের স্বজনের হামলার সত্যতা পেয়েছেন তিনি।
কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে থানায় লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)