সাতক্ষীরায় বল্লী মুজিবুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জামিলুজ্জামানের বিরুদ্ধে ৫০ লক্ষাধিক টাকা লুটপাটসহ অনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগ

রঘুনাথ খাঁ : সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আখড়াখোলায় অবস্থিত বল্লী মুজিবুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জামিলুজ্জামানের বিরুদ্ধে ৫০ লাখেরও বেশি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবীতে ফুঁসে উঠছে স্কুলের শিক্ষক, অভিভাবকসহ স্থানীয় সচেতন মহল। চলতি বছরের গত ২৯ জানুয়ারী বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জামিলুজ্জামানের নিয়োগ বানিজ্য, অনিয়ম, তথ্য গোপন, দূর্ণীতি ও জালিয়াতি ও মানবপাচারের মাধ্যমে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের প্রতিকার চেয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই বিদ্যালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে করা অভিযোগ থেকে জানা যায়, জ্যেষ্ঠতা লংঘন করে স্কুলের সহকারী শিক্ষক জামিলুজ্জামানকে সদর উপজেলার সাবেক সাংসদ মীর মোস্তাক আহমেদ রবির অত্যন্ত আস্থাভাজন হিসেবে ওই প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের চেয়ার দখল করান। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের চেয়ার পাওয়ার পর থেকে শিক্ষক জামিলুজ্জামান একের পর এক অনিয়ম করেই চলেছেন। আর তার সকল কাজের বৈধতা দিতে বিদ্যালয়ের সভাপতি সাবেক সাংসদ রবির ডানহস্ত জিয়াউর বিন সেলিম যাদু ছিলেন একধাপ এগিয়ে। এতে করে শিক্ষক জামিলুজ্জামান নিয়োগ বানিজ্য, সরকারী অনুদান, বিদ্যালয়ের সম্পদ, নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের বিষয় প্রতি কৃতকার্য দেখিয়ে টাকা গ্রহণ করে বিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট করেই চলেছেন। তাছাড়া তিনি প্রত্যক্ষভাবে আদম ব্যবসার সাথে জড়িত থাকায় শিক্ষক সমাজের চরিত্রে কালিমা লেপন করেছেন। তার আদম ব্যবসার চালচিত্র নিয়ে বিভিন্ন সময় পত্র-পত্রিকায় একাধিকবার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

সূত্রটি আরো জানায়, ২০২১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক ও ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারী সহকারী প্রধান শিক্ষক গোলাম কাদের বিধি মোতাবেক অবসরে গেলে সহকারী এডহক কমিটির সভাপতি জিয়াউর বিন সেলিম যাদুর যোগসাজশে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্মারক – শিম/শাঃ/৩-৯/২০১১/২৫৬ নং পরিপত্র এবং বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১১এর ১৩ ধারা উপেক্ষা করে বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠতম সিনিয়র শিক্ষক এ.কে.এম আজহারুজ্জামানকে বাদ রেখে শিক্ষক জামিলুজ্জামান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হন। তাছাড়া, বিদ্যালয়টিকে লুটপাটের স্বর্গরাজ্য করতে বিধি বহির্ভুত ভাবে ২০২২ সালের ১ ফেব্রুয়ারী হতে অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক গোলাম কাদেরকে চলতি মাসের ২৮ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত এবং বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠতম সিনিয়র শিক্ষক এ.কে.এম আজহারুজ্জামানের অধঃস্তন শিক্ষক অরুপ কুমার সাহাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে গোপনে নিয়মিত পকেট কমিটি গঠন করে। ওই পকেট কমিটির বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের অভিভাবক ইরশাদুল হক মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন (৫৪০৪/২০২২) করে। মহামান্য হাইকোর্ট উক্ত ম্যানেজিং কমিটি ২৮ এপ্রিল থেকে তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন। তবে মামলাটি এখনো চলমান থাকলেও শিক্ষক জামিলুজ্জামান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র ও মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে সাবেক এমপির সহায়তায় ২০২২ সালের ৫ মে তথাকথিত নিয়োগ বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী ৭ মে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পত্র পেয়ে ৯ মে বিদ্যালয়ে যোগদান করেই ওইদিন থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব বুঝে নেন। শিক্ষক জামিলুজ্জামান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়েই প্রতিষ্ঠানের ভবন সংস্কার ও উন্নয়নকল্পে জেলা পরিষদ ও বিশেষ কোটায় বরাদ্দ থেকে প্রাপ্ত সাড়ে ৪ লক্ষ টাকা বিদ্যালয়ের তহবিলে জমা না করে নিজে আত্মসাৎ করেন। ২০২৩ সালের আগস্টে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা প্রণোদনা বাবদপ্রাপ্ত ২ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে স্কুল তহবিলে জমা না করে আত্মসাৎ করেন। ২০২২ সালের ৯ মে শিক্ষক জামিলুজ্জামান সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে পূর্বেকার পদের ইস্তফা দেয়া স্বত্ত্বেও আগস্ট মাস পর্যন্ত ঈদ উল আযহার উৎসব ভাতা বাবদ সরকারী প্রায় এক লক্ষ টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেন। যা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। উপরোল্লেখিত এডহক কমিটির বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্টে মামলা চলমান ও বিদ্যালয়ের নিয়োগ বন্ধের ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে অভিযোগ তদন্তনাধীন থাকাবস্থায় কমিটির যোগসাজশে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জামিলুজ্জামান ২০২৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর তথাকথিত নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে ১৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে সরোয়ার হোসেন, ১২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে অফিস সহায়ক পদে ইব্রাহিম হোসেন, ১০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে রিদ্দীকুজ্জামান ও ১০ টাকার বিনিময়ে আয়া পদে আলেয়া খাতুনকে নিয়োগ দেন। যা ওই সময় প্রকাশিত সংবাদপত্রের আলোচিত খবরের শিরোনাম হয়। অভিযোগ সুত্রে আরো জানা যায়, বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাইকেল চুরির পর চোর ধরা পড়লে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জামিলুজ্জামান সেই চোরের নিকট থেকে ৩৪ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ নিয়েও তা সমভাবে বন্টন না করে নিজে আত্মসাৎ করেন। তিনি অবৈধ আদম ব্যবসার (মানবপাচার) ফাঁদে ফেলে এলাকার শতাধিক পরিবারকে প্রতারণা করে কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। আখড়াখোলা বাজার সংলগ্ন গড়ে তুলেছেন ডুপ্লেক্স আলীশান বাড়ি। তাছাড়া জ্ঞাত আয় বহির্ভূতভাবে জেলা শহরে ১০ শতক জমি কিনে গড়ে তুলেছেন বহুতল ভবন। আদম ব্যবসা পরিচালনা করার কারণে তিনি একাধিকবার মানবপাচারকারী শিক্ষক হিসেবে পত্রিকার শিরোনাম হয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছেন। এছাড়া, প্রতিদিন বিদ্যালয়ে আদম ব্যবসায়ী জামিলুজ্জামানের খপ্পরে পড়ে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ ট্কাা ফেরত নিতে স্কুল চলাকালীন সময় অত্র প্রতিষ্ঠানে এসে বাক-বিতন্ডাসহ অকথ্য ভাষা ব্যবহার করায় বিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। এতে করে স্কুলের অভিভাক, স্থানীয় এলাকাবাসীসহ সচেতন মহল দূর্ঘটনার আশংকা করছেন। অতি দ্রুতই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জামিলুজ্জামানের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার বলে মনে করেন সচেতন মহল।

এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জামিলুজ্জামান বলেন, আমি কোন টাকা আত্মসাৎ করিনি। আমার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ হয়েছে কিনা তা জানিনা। তবে যদি কেউ অভিযোগ করে থাকে কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। প্রয়োজনে মামলা করবে।

এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম ভুইয়া জানান, অতি সম্প্রতি একটি অভিযোগ পেয়েছি। ইতোমধ্যে আমি একজন তদন্তকারী প্রেরণ করেছি। তাছাড়া ওখানে মামলাও চলমান আছে। তদন্তের রিপোর্ট পেলেই বিস্তারিত জানাতে পারবো।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)