দেশজুড়ে শৈত্যপ্রবাহ ছাড়াই বেড়েছে শীতের তীব্রতা

ডেস্ক নিউজ:
দেশজুড়ে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। শৈত্যপ্রবাহ না থাকা সত্ত্বেও দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকায় অনুভূত হচ্ছে কনকনে ঠান্ডা। রাজধানীতেও ২-৩ দিন ধরে হিমেল বাতাস ও হাড় কাঁপানো শীত টের পাওয়া যাচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, আগামী কিছুদিনে শীতের তীব্রতায় বড় কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। ৫-৬ দিনের মধ্যে দেশে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে দেশের কোথাও কোথাও বিশেষ করে পশ্চিমাঞ্চলে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, দীর্ঘ সময় ধরে কুয়াশা পড়া ও কুয়াশার চাদর ভেদ করে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো না আসা, সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য কমে আসা, হিমালয় থেকে আসা ঠাণ্ডা বাতাস এবং বাতাসের গতিবেগ বেশি থাকার কারণে দেশজুড়ে শীতের তীব্রতা সর্বনিম্ন তাপমাত্রার চেয়েও বেশি অনুভূত হচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, দীর্ঘ সময় ধরে কুয়াশা পড়ছে। সূর্যের আলো ঘন থেকে অতি ঘন কুয়াশার চাদর ভেদ করে যথেষ্ট সময় ধরে ভূপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করতে পারছে না। হিমালয়ের পাদদেশ থেকে কনকনে বাতাস উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে শীতের অনুভূতিকে আরো বাড়াচ্ছে। বাতাসের গতিবেগ বেশি থাকার কারণেও ঠান্ডার অনুভূতি বেড়েছে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, কুয়াশা কমে গেলে দিনে শীতের অনুভূতি কমবে, কিন্তু রাতে বাড়বে।

কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানান, দেশব্যাপী চলমান কুয়াশার বিস্তার দক্ষিণ-পশ্চিম দিকের জেলাগুলোর ওপর থেকে আরো কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে রোববার পর্যন্ত উত্তর ও পূর্ব দিকের বিভাগগুলোর (রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট) ওপরে কুয়াশা বাড়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, কুয়াশা কমার সঙ্গে সঙ্গে সকালের তাপমাত্রা কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর ওপরে। দেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য বিভিন্ন অঞ্চলে অনেকটাই কমেছে। এই পার্থক্য ১০ ডিগ্রি বা তার কম হলে তাহলে শীতের অনুভূতি বাড়তে থাকে। পার্থক্য যদি ৫ ডিগ্রি বা তার কম হয় তাহলে শীতের অনুভূতি আরো তীব্র হয়। অর্থাৎ রাতের কাছাকাছি ঠান্ডা দিনেও অনুভূত হয়। যেসব জায়গায় তাপমাত্রার পার্থক্য যত কম সেখানে শীতের অনুভূতির তীব্রতা বেশি।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে আগের ২৪ ঘণ্টার তাপমাত্রার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য সবচেয়ে কম। রংপুর বিভাগের জেলাগুলোতে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য ৩ থেকে ৬ ডিগ্রি। ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোতে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য ৩ থেকে ৪ ডিগ্রি। ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগে ৬ থেকে ১০ ডিগ্রি, চট্টগ্রাম বিভাগে ১০ থেকে ১৩ ডিগ্রি, খুলনা বিভাগে ৯ থেকে ১৪ ডিগ্রি এবং বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য ১০ থেকে ১২ ডিগ্রি।

উত্তরে বেড়েছে শীত, জনজীবনে দুর্ভোগ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা এবং দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমায় দিনাজপুরে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। গত দুই দিনের ব্যবধানে দিনাজপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি কমে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছে। ঘন কুয়াশা, ঠাণ্ডা বাতাস আর কনকনে শীতে বিপাকে পড়েছে জেলার সাধারণ মানুষ। রাত থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত বৃষ্টির ফোঁটার মতো শিশির পড়ছে। গত দুই দিনে সূর্যের দেখা মেলেনি।

হাড়-কাঁপানো শীতে জবুথবু জনজীবন। কুয়াশা ও বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় শীত সর্বনিম্ন তাপমাত্রার চেয়েও বেশি অনূভূত হচ্ছে বলে জানায় স্থানীয় আবহাওয়া অফিস। ঘন কুয়াশার কারণে মহাসড়কে হেডলাইট ও ফগলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহনগুলো।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)