সাতক্ষীরা সিটি কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ শহীদুল ইসলামের বেতনভাতার ১৬ লাখ টাকা আত্মসাত

রঘুনাথ খাঁ:

সাতক্ষীরা সিটি কলেজের সাবেক সভাপতি সহ ম তিন জনের বিরুদ্ধে সাবেক উপাধ্যক্ষ শহীদুল ইসলালের পাঁচ বছরের বেতন ভাতা বাবদ ১৬ লাখ ২২ হাজার ৭০০ টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মিললেও আজো তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি।

সিটি কলেজে সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে ৫ জানুযারি এক প্রভাবশালী নেতা  সাতক্ষীরা সিটি কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি হিসেবে ওই বছরের মার্চ মাসে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর থেকে কলেজ অধ্যক্ষ আবু সাঈদকে ব্যবহার করে জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ, এমপিও বানিজ্য এবং অভ্যন্তরীন তহবিল আত্মসাতের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা পকেটে ভরেছেন। সভাপতি থাকাকালিন প্রথম তিন অর্থবছরে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের প্রাক্তন উপ পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামান , শিক্ষা পরিদর্শক মোঃ হেমায়েত উদ্দীন এবং প্রাক্তন অডিট অফিসার মোঃ মোখলেছুর রহমান গত ২০১৭ সালের ২৫ মে সাতক্ষীরা সিটি কলেজটি সরেজমিনে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা করেন। উক্ত দপ্তরের পরিচালক প্রফেসর মোঃ জাহাঙ্গীর হোসন ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর স্বাক্ষরিত পরিদর্শন ও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, উপাধ্যক্ষ মোঃ শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা থাকায় তিনি সাময়িক বরখাস্ত ছিলেন। অধ্যক্ষ আবু সাঈদের উপস্থাপিত কলেজের সরকারি বেতন বিলি বহি যাচাই করে দেখা যায়, উপাধ্যক্ষ মোঃ শহিদুল ইসলাম সাময়িক বরখাস্ত থাকা অবস্থায় হাজিরা খাতায় ও সরকারি বেতন বিল বহিতে তার স্বাক্ষর বা অনুস্বাক্ষর নেই। উপাধ্যক্ষের ধারাবাহিক অনুপস্থিত থাকা সত্তে¡ও সভাপতি মীর মোস্তাক আহমেদ রবি ও অধ্যক্ষ আবু সাঈদ তাঁর নামে বিল করে তদন্তকালিন সময় ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত তিন বছরে বেতন ভাতা বাবদ ১৬ লঅখ ২২ হাজার ৭০০ টাকা তুলেছেন যা’ সরকারি কোষাগারে ফেরতযোগ্য। পরিদর্শনের পর উপাধ্যক্ষের নামে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে বিল করে টাকা উত্তোলন করা হলে তাও সরকারি কোষাগারে ফেরতযোগ্য। এখানে উল্লেখ্য যে, তদন্তের পর ৫ বছরে আরো ২৭ লাখ চার হাজার ৬০০ টাকা বেতন ভাতা হিসেবে তোলা টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত হওয়া উচিত।

প্রতিবেদনে আরোও উল্লেখ করা হয় যে জেলা জামায়াতের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক উপাধ্যক্ষ মোঃ শহিদুল ইসলাম জেলে আছেন কিনা, কত তারিখ হতে বরখাস্ত , কত তারিখ হতে কলেজে আসেন না এ সংক্রান্ত রেকর্ড ও তথ্য চাওয়া হলেও অধ্যক্ষ আবু সাঈদ তথ্য প্রদান করেননি। শুধু লিখিত বক্তব্যে জানান, “ অত্র কলেজের উপাধ্যক্ষ মোঃ শহিদুল ইসলাম আমার যোগদানের পূর্বেই কলেজ থেকে সাময়িক বরখাস্ত হন। তিনি বিধি মোতাবেক ৫০ শতাংশ জীবন ধারন ভাতা পান। তবে কলেজের কতিপয় শিক্ষক লিখিত ও মৌখিকভাবে জানান যে, উপাধ্যক্ষ মোঃ শহিদুল ইসলাম জেলে আছেন। সমায়িক বরখাস্ত অবস্থায় উপাধ্যক্ষের মাসওয়ারী সরকারি সমুদয় বেতন ভাতা উত্তোলন করা হয়েছে। অথচ সরকারি বেতন বিল বহিতে উপাধ্যক্ষের বা তার পক্ষে কারো স্বাক্ষর বা অনুস্বাক্ষর নেই। তার স্বাক্ষর বা অনুস্বাক্ষর ছাড়া ব্যাংক হতে টাকা উত্তোলন করে কিভাবে কলেজের অন্য ব্যাংক হিসাবে জমা হয়েছে সে বিষয়ে অধ্যক্ষের কাছে মতামত চাইলে তিনি শুধু লিখিতভাবে জানান যে, “উপাধ্যক্ষের টাকা ব্যাংকে আছে। উপাধ্যক্ষের পাঁচ বছরের ধারবাহিক অনুপস্থিতি সত্তে¡ও তার নামে বিল করে আর্থিক বিধি লংঘন করে ব্যাংক হতে টাকা উত্তোলন করায় তৎকালিন সভাপতি মীর মোস্তাক আহমেদ রবি , অধ্যক্ষ মোঃ আবু সাঈদ এবং সমসাময়িক সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তা দায়ী । ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর তদন্ত প্রতিবেদনে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা উত্তোলনের সাথে জড়িত সকলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের সুপারিশ থাকলেও ওই চিঠি গোপন করে ও প্রভাবশালীনেতা  নিজের অপকর্ম আড়াল করার জন্য ২০২০ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত সেটি গোপন রেখে যান এবং পরবর্তীতে তার মনোনীত ব্যক্তিগত সচিব মোকছুমুল হাকিমকে সভাপতি বানিয়ে একই প্রক্রিয়ায় সেটি গোপন রেখেছেন। উক্ত প্রতিবেদনে মীর মোস্তাক আহমেদ রবির সভাপতি থাকাকালিন প্রথম তিন বছরে কলেজের অভ্যন্তরীন তহবিল থেকে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখিত তথ্য অনুসারে তদন্ত পরবর্তী তিন বছরে (জুন /২০১৭ থেকে জুলাই/২০২০) সভাপতি রবি ও অধ্যক্ষ আবু সাঈদ কলেজের অভ্যন্তরীন তহবিল থেকে প্রায় ছয় কোটি টাকা এবং নিয়োগ ও এমপিও বানিজ্যে ৪ কোটিসহ প্রায় ১০ কোটি টাকা পকেটস্ত করেছেন। একই প্রক্রিয়ায় ২০২০ সালের জুলাই মাসের পরে মীর মোস্তাক আহমেদ রবি নিয়ন্ত্রিত পরিচালনা পরিষদ জামায়েত নেতা ও উপাধ্যক্ষ মোঃ শহিদুল ইসলাম ২০২২ সালের মার্চ মাসে অবসরে গেলে সমমনা আরেক জামায়েত নেতা মোঃ আলতাফ হোসেনকে উপাধ্যক্ষ হিসেবে ২০২২ সালের জুন মাসে একটি পাতানো নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে নিয়োগ দিয়ে ২৫/৩০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন। পরবর্তিতে চলতি বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর দুর্নীতির মামলায় সদ্য কারামুক্ত অধ্যক্ষ আবু সাঈদ অবসরে গেলে সভাপতি ও অধ্যক্ষের অনিয়ম ও দুর্নীতিকে আড়াল করার জন্য বড়দল এপিএস কলেজিয়েট স্কুলের বহুল আলোচিত অধ্যক্ষ ড. শিহাবুদ্দীনকে একটি পাতানো নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে ৩০/৩৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ২০২২ সালের ২৭ ডিসেম্বর সিটি কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করান।

তবে ওই নেতা  ইতিপূর্বে সিটি কলেজের সভাপতি থাকালিন তার অনিয়ম ও দূণীতির কথা বারবার অস্বীকার করেছেন সাংবাদিকদের কাছে।

সিটি কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ ড. শিহাবউদ্দিন অনিয়ম ও দূর্ণীতির মাধ্যমে সিটি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের বিষয়টি ইতিপূর্বে সাংবাদিকদের কাছে অস্বীকার করে বলেন, তিনি কলেজে যোগদানের পর থেকে পূর্বে ঘটে যাওয়া অনেক অনিয়ম ও দূর্ণীতির বিষয় নিয়ে বর্তমান সভাপতি মোকছমুল হাকিমকে নিযে শিক্ষা সচিব, মাউশি’র মহাপরিচালক ও দুদকসহ বিভিন্ন উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে জবাবদিহিতা করেছেন। প্রয়োজনে তাদের ডাকে আবারো যেতে হবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)