বড়দিন আজ

ডেস্ক রিপোট: আজ ২৫শে ডিসেম্বর খ্রিষ্টানদের প্রভু যীশুখ্রীষ্টের জন্মদিন। বড়দিনে বিশ্বের শত কোটি মানুষ আজ মহানন্দে যীশুর জন্মতিথি উৎসবটি পালন করছে। বাংলাদেশের খ্রীষ্টান ভক্তগণও এ উৎসব মুখর দিনটি অতি আনন্দের সাথে উদ্যাপন করছে।

খ্রিষ্টধর্ম বাইবেলে আছে, ঈশ্বর বা গড মানুষের মুক্তির জন্য বার বার পৃথিবীতে ভাববাদীদের পাঠিয়েছেন। কিন্তু সত্যিকার অর্থে মুক্তি কারও দ্বারা সম্ভব হয়নি। তাই গড প্রতিশ্রুতি দেন তার পুত্রকে পাঠাবেন বলে। ফলে মানুষ তার মুক্তিদাতাকে দেখার জন্য বিভিন্নভাবে খুঁজে বেড়াতে থাকে। এই ত্রাণকর্তা মুক্তিদাতার আগমন প্রতীক্ষায় বহু বছর ধরে প্রবক্তাগণ ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন ভাবী ত্রাণকর্তা যে একজন কুমারীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করবেন। সে সম্বন্ধে প্রবক্তা ইসাইয়া বলেছিলেন, ‘কোন একটি যুবতী (কুমারী) এখন সন্তান সম্ভাব্য। সে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দিবে। সে তার নাম রাখবে ইম্মানুয়েল অর্থাৎ আমাদের সহিত ঈশ্বর।’ (ইসাইয় ৭; ১৪ পদ) ভাবী ত্রাণকর্তা সম্বন্ধে ইসাইয়া আরো বলেছিলেন তার নাম: অনন্য মন্ত্রণাদাতা, শক্তিমান ঈশ্বর, শাশ্বত পিতা, শান্তিরাজ। (ইসাইয়া ৯;৬ পদ)

জানা যায় , আজ থেকে প্রায় দুই হাজার ২২ বছর পূর্বে প্যালেস্টাইন দেশের এক মফঃস্বল শহর বেথলেহেমের পান্থশালায় স্থান না পেয়ে যোসেফ তার অন্তঃস্বত্ত্বা স্ত্রী মারিয়াকে নিয়ে এক গোয়াল ঘরে আশ্রয় নেয়। এই গোয়ার ঘরেই কুমারী মারিয়ার গর্ভে জন্ম নিলেণ এক নবজাতক। তিনি হলেন ত্রাণকর্তা, কালজয়ী যীশুখ্রীষ্ট।
তখন স্বর্গের এই সংবাদ দিয়ে রাখালদের বললেন, আমি এক মহা আনন্দের সংবাদ তোমাদের জানাতে এসেছি। আর এই আনন্দে সমগ্র জাতির মানুষ আনন্দিত হবে। আজ দায়ুদ নগরীতে তোমাদের ত্রাণকর্তা জন্মেছেন। পবিত্র বাইবেল অনুসারে এই তো বড়দিনের আসল ঘটনা। আমরা খ্রীষ্ট বিশ্বাসীগণ প্রতি বছর ২৫শে ডিসেম্বর মানব মুক্তিদাতা যীশুখ্রীষ্ট্রের জন্মেৎসব বা বড়দিন উৎসব পালন করে থাকি। মানুষের প্রতি ঈশ্বরের শ্রেষ্টতম অবদানের, মানুষের প্রতি ঈশ্বরের প্রগাঢ় ভালবাসার অনন্য এবং অনবদ্য স্বাক্ষর, পৃথবীর ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা, মানুষের আনন্দের সর্বোৎকৃষ্ট উপলক্ষ্য এই বড়দিন। খ্রীষ্ট বিশ্বাসী রূপে আমরা জানি ও বিশ্বাস করি প্রভু যীশুখ্রীষ্ট হলেন মানুষের জন্য ঈশ্বরের অঙ্গীকৃত মুক্তিদাতা। যীশুখ্রীষ্টের জন্ম গোটা মানব জাতির ইতিহাসকে দু’ভাগ করে দিয়েছে। খ্রীষ্টপূর্ব ও খ্রীষ্টাব্দ অর্থাৎ যীশুখ্রীষ্ট জন্মের পূর্বে ও পরের ইতিহাস। যারা খ্রীষ্ট বিশ্বাসী নন তারাও মানব ইতিহাসের এই বিভাগকে মেনে নিয়েছেন। এখানেই খ্রীষ্ট জন্মেরক গুরুত্ব ও বিশেষত্ব। যীশুর জন্মের আগে ঈশ্বর, স্বর্গ, নরক, বিচার, মুক্তি ইত্যাদি সম্বন্ধে মানুষের ধারণা ছিল অস্পষ্ট ও জটিল। যীশু জন্মগ্রহণ করে মানুষের নতুন ধারণা দিলেন যে, তিনি প্রেমময়, ক্ষমাশীল ও দয়ালু পিতা। মুক্তিলাভ বা স্বর্গে প্রবেশাধিকার অসাধ্য কোন ব্যাপার নয়। এ জন্য প্রয়োজন পাপ থেকে মন ফিরানো এবং ঈশ্বর ও মানুষকে ভালবাসা। যীশুর জন্মের ফলে মুক্তির দ্বার উন্মুক্ত সকল মানুষের কাছে। যীশু সার্বজনীন মুক্তিদাতা, যারা তার উপরে বিশ্বাস স্থাপন করে ও তাঁর শিক্ষা মেনে চলে তিনি তাদের সবার জন্য।
মুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। খ্রীষ্টের জন্মের মূল অর্থ হচ্ছে যারা অসহায়, বিচলিত, যারা বেদনার্ত তাদের প্রতি প্রেম, প্রীতি ও ভালবাসা প্রকাশের এবং যারা পরিশ্রান্ত ও অন্ধকারে আছে তাদেরকে আলোর পথে আনার উদ্দেশ্যই খ্রীষ্টের আবির্ভাব। প্রভু যীশুখ্রীষ্টের প্রধান আদেশ হল প্রতিবেশিকে আপনার মত প্রেম কর। তিনি এসেছিলেন প্রেম প্রদর্শন করতে। বিশ্রাম বারে ধর্মীয় নীতি ছিল সব কাজ থেকে বিরত থাকা, এমনকি অসুস্থকে সুস্থতা প্রদান আইনে দন্ডনীয় ছিল কিন্তু সেখানেও খ্রীষ্ট অসুস্থকে সুস্থতা প্রদান করে দেখিয়ে ছিলেন যে, নিয়মের জন্য মানুষ নয়, মানুষের জন্য নিয়ম। তেমনিভাবে ধর্মীয় গোঁড়ামিতে ধর্মের জন্য মানুষ নয়, মানুষের জন্য ধর্ম। যীশুখ্রীষ্ট চান প্রত্যেকে যেন ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস রেখে খ্রীষ্টের মত মানুষ সেবায় জীবন বিলিয়ে দেয়।

 

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)