সাতক্ষীরা সিটি কলেজে অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক রুনা লায়লার বিরুদ্ধে ব্যবস্তা নেওয়া হয়নি আজও

স্টাফ রিপোর্টার:

সাতক্ষীরা সিটি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ও এমপিওভুক্ত শিক্ষক রুনা লায়লার বিরুদ্ধে আজো কোন ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি। ফলে কলেজের শিক্ষাঙ্গন হারাচ্ছে তার অতীত ইতিহাস ও ঐতিহ্য।
সাতক্ষীরা সিটি কলেজ সূত্রে জানা গেছে ২০১৫ সালের ২৬ জানুয়ারি সাতক্ষীরা সিটি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন আবু সাঈদ। এরপর থেকে ২০২২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরী বিধি,শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা উপেক্ষা করে ডিগ্রী স্তরের ২য় ও ৩য় শিক্ষক হিসেবে প্রতি শিক্ষকের নিকট থেকে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা উৎকোচ নিয়ে ২১ জন শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করেন । উক্ত জালিয়াতির বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে ২০২১ সালের ২৩ ফেব্রæয়ারী মাউশির নির্দেশে খুলনা আ লিক কার্যালয়ের পরিচালক ও তদন্ত কর্মকর্তা প্রফেসর শেখ হারুনর রশিদ সহ তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি রুনা লায়লাসহ ২১ জন শিক্ষকের নিয়োগ ও এমপিও সংক্রান্ত তথ্য জালিয়াতি তদন্ত করেন। তদন্ত কর্মকর্তা তদন্তকালে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে অধ্যক্ষ আবু সাঈদের তথ্য জালিয়াতিকে আড়াল করার জন্য এবং রুনা লায়লার নিয়োগ ও যোগদান সম্পর্কিত প্রকৃত তথ্য গোপন করে ২০২১ সালের ১৫ জুন মাউশির মহাপরিচালক বরাবর উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রতিবেদন দাখিল করেন ।
সূত্রটি আরো জানায়,সাতক্ষীরা সিটি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক ও বিভাগীয় প্রধান মোঃ শফিউর রহমান ২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর চাকুরি থেকে অবসরে গেলে ওই পদ শূন্য হয়। শিক্ষামন্ত্রণালয়ের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা মাউশির মহাপরিচালক প্রফেসর ফাহিমা খাতুনের ২০১৩ সালের ৩ জুলাইয়ের আদেশে এবং জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় অধিভুক্ত বেসরকারী কলেজ শিক্ষকদের চাকুরীর বিধি অনুসারে প্যাটার্নভুক্ত পদ শূন্য হলে পূর্বে নিয়োগকৃত বিষয় ভিত্তিক উদ্বৃত্ত শিক্ষকদের মধ্য থেকে জ্যেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে পদায়নের মাধ্যমে/অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পূনঃনিয়োগের মাধ্যমে এমপিওভুক্ত হতে পারবেন। এজন্য জ্যেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে বিধান চন্দ্র দাসকে অধ্যক্ষ আবু সাঈদ এর সাথে যোগাযোগ করেন। আবু সাঈদের দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় সভাপতি মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবিকে ম্যানেজ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ,পরিপত্র এবং জাতীয় বিশ্বদ্যিালয়ের চাকুরী বিধি ভঙ্গ করে বিধান চন্দ্র দাসকে বিভাগীয় দ্বিতীয় শিক্ষকের অধিকার থেকে বি ত করে মোটা অংকের আর্থিক সুবিধা নিয়ে হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে শূন্য পদ দেখিয়ে ২০১৫ সালের ৩ আগষ্ট দৈনিক সমকাল পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেন। এই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিধান চন্দ্র দাসকে পদায়ন ও পুনঃনিয়োগের অধিকার থেকে বি ত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, একটি বৈধ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মেয়াদ ৬ মাস বা ১৮০ দিন । কিন্তু অধ্যক্ষ আবু সাঈদ ২০১৫ সালের ৩ আগষ্ট প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির আলোকে ১৪ মাস ১৫ দিন পর রুনা লায়লাকে ১৮/১০/২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর একটি পাতানো নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে ২০১৬ সালের ৪ ডিসেম্বর হিসাববিজ্ঞান বিভাগে শূন্য পদে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করান। তিনি কলেজে কর্মরত থেকে সকল সুবিধা গ্রহন করতেন। এসময় অধ্যক্ষ আবু সাঈদ রুনা লায়লাকে এমপিওভুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যাদি জালিয়াতি ও গোপন করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠান। এরপর রুনা লায়লা সাতক্ষীরা সিটি কলেজে কর্মরত অবস্থায় ২০১৭ সালের পহেলা মার্চ শ্যামনগর থানাধীন ৪৩ নং হেন ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে নিয়মিত পাঠদান ও বেতনভাতা গ্রহণ করতেন। এই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকুরিত অবস্থায় পূর্বে পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে সাতক্ষীরা সিটি কলেজে রুনা লায়লা হিসাববিজ্ঞান বিভাগে ২০১৭ সালের মে মাসে এমপিওভুক্ত হন এবং ইনডেক্্র নং ৩০৯৪৩৬৪। এমপিওভুক্ত হওয়ার পর গত ২০১৭ সালের ১৫ জুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ইস্তফা দেন এবং এক মাসের বেতন ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক, শ্যামনগর শাখায় ফেরত দেন। এটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ৯(২),১১(১৩) এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরী বিধি ৩(গ),৪(ট) ও ১২(ছ) বিধি পরিপন্থী।

আরো উল্লেখ থাকে যে, ২০১৮ সালের ২৮ আগষ্ট এবং ২০১৯ সালের ১২ মার্চ পরিপত্র জারির পর অধ্যক্ষ আবু সাঈদ নিয়োগ সংক্রান্ত সকল তথ্য জালিয়াতি করে ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর অনার্স শাখায় যোগাদানকৃত শিক্ষক অরুন কুমার সরকারকে ২০০৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর ডিগ্রী স্তরের তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেখান। এই জালিয়াতি তথ্যানুসারে বিভাগীয় প্রধান মোঃ শফিউর রহমান ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর অবসরে যাওয়ার পর শূন্য পদে জনবল কাঠামো অনুসারে অরুন কুমার সরকার পদায়ন পেয়ে বিভাগীয় দ্বিতীয় শিক্ষক হিসেবে এমপিওভুক্ত হওয়া যৌক্তিক ছিল। এই নিয়মে রুনা লায়লার শূন্য পদে দ্বিতীয় শিক্ষক হিসেবে নতুন করে বিজ্ঞাপন দিয়ে নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়ার কোন আইনগত ভিত্তি নেই। অথচ অধ্যক্ষ আবু সাঈদ অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তাকে শূন্য পদে বিভাগীয় দ্বিতীয় শিক্ষক হিসেবে অবৈধ ভাবে ২০১৫ সালের ৩ আগষ্ট দৈনিক সমকাল পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ২০১৬ সালের ১৮ অক্টোবর বিতর্কিত নিয়োগ বোর্ডের সুপারিশে ২০১৬ সালের ৪ ডিসেম্বর যোগদান দেখিয়ে ২০১৭ সালের মে মাসে এমপিওভুক্ত করেছেন। এই শিক্ষকের অবৈধভাবে এমপিভুক্তির বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই দুদকের হট লাইন নং ১০৬ এ অভিযোগ করা হয়। দুদক উক্ত অভিযোগটি ২০১৯ সালের পহেলা আগষ্ট দুদক প্রধান কার্যলয়ের উপ পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মোঃ মাসুদুর রহমান কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেবাশীষ চৌধুরীকে দায়িত্ব দেন। এই সময় অধ্যক্ষ আবু সাঈদ পবিত্র হজ¦ব্রত পালনের জন্য সৌদি আরবে অবস্থান করায় তদন্ত সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে ২০২০ সালের ১০ আগষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত জবাব ও প্রয়োজনীয় প্রমান পত্রাদি জমা দিলেও কোন ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি।
প্রসঙ্গত, সাতক্ষীরা সিটি কলেজে তথ্য জালিয়াতির মাধ্যমে অবৈধভাবে এমপিওভুক্ত হওয়া ১৫ জন শিক্ষককে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আ .ন .ম আল ফিরোজের ২০২২ সালের ২৮ নভেম্বর তলব করা তালিকায় ন রুনা লায়লার নাম ছিল। এরপরও গত ৩ ডিসেম্বর রুনা লায়লার অবৈধ নিয়োগ ও এমপিওভুক্তি নিয়ে স্থানীয়ভাবে দুদকে লিখিত অভিযোগ করেছেন চন্দ্রা দাস।
এ ব্যাপারে সিটি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক রুনা লায়লা সাংবাদিকদের বলেন, এ কলেজে কাজ করাকালিন সময়ে তিনি শ্যানগরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেছিলেন ঠিকই। তবে অধ্যক্ষ আবু সাঈদ তার এমপিওভুক্তি করিয়ে দেওয়ায় তিনি ওই চাকুরি ছেড়ে কলেজে আবার কাজ শুরু করেছেন। তবে নিয়ম অনুযায়ি যোগদান ও এমপিওভুক্ত হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)