সরকারি পাটকল চালু না হলে দেশ থেকে বিলুপ্ত হবে পাট চাষ

অনলাইন ডেস্ক:

দেশের পাটচাষ ও পাটশিল্পকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাঁচাতে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) বন্ধ হয়ে যাওয়া ২৬টি পাটকলের মধ্যে অন্তত ১০টি পাটকল সরকারিভাবে চালুর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পাট চাষি ও পাট ব্যবসায়ী সমিতি। তা না হলে অচিরেই দেশ থেকে পাট চাষ বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে মনে করে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন বক্তারা।

সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পাট চাষি ও পাট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. হাসান আলী বলেন, ২০২০ সালে বিজেএমসির অধীনে থাকা দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ২৬টি পাটকল বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে দেশের পাটচাষিরা বেসরকারি পাটকল মালিকদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। তাদের কম দামে পাট বিক্রি করতে বাধ্য করা হচ্ছে। এতে চাষিদের উৎপাদন খরচই উঠছে না।

যদি এ অবস্থা বজায় থাকে তাহলে অচিরেই দেশ থেকে পাট চাষ বিলুপ্ত হয়ে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাট চাষিদের বাঁচাতে হলে অবিলম্বে দেশের বন্ধ পাটকলগুলোকে সরকারিভাবে চালু করতে হবে। এই পাটকলগুলো চালু হলে পুনরায় পাটচাষিরা তাদের উৎপাদিত পাটের ন্যায্যমূল্য পাবেন।
 
এ জন্য চলতি মৌসুম থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অন্তত ১০টি পাটকল চালুর আহ্বান জানান মো. হাসান আলী।
 
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. হারুন অর রশিদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার এক দফায় ছিল পাট। লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে ২০২০ সালে এক ঘোষণায় মাত্র একদিনে দেশের ২৬টি পাটকল বন্ধ করে দেয়া হয়। কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েন এই ২৬ পাটকলের হাজার হাজার শ্রমিক। অথচ এসব পাটকলের কর্মকর্তাদের গত সাড়ে তিন বছর ধরে বসিয়ে বসিয়ে বেতন দেয়া হচ্ছে।
 
পাটের টাকায় এ দেশ গড়ে উঠেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনেকেই পড়াশোনা করেছেন পাট বিক্রির টাকায়। এখন তারা দেশের বড় বড় পদে বসে আছেন। 
 
তাই পাটশিল্প রক্ষায় তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান হারুন অর রশিদ।
 

সরকারি পাটকলগুলো চালু না থাকায় বেসরকারি পাটকল মালিকরা সুযোগ নিচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে বঞ্চিত হচ্ছেন দেশের সাধারণ পাট চাষি ও ক্ষুদ্র পাট ব্যবসায়ীরা। পাটের দাম নেমে এসেছে প্রতি মণ ৬ হাজার টাকা থেকে মাত্র এক থেকে দেড় হাজার টাকায়।

কাজেই পাটশিল্পকে বাঁচাতে অবিলম্বে অন্তত ১০টি পাটকল সরকারিভাবে চালুর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বিজেএমসির ২৬টি পাটকল বন্ধের আগে দেশে পাটের মণ ছিল ৬ হাজার টাকা থেকে ৭ হাজার টাকা। এমনকি গতবছরও প্রতি মণ পাটের দাম ছিল সাড়ে তিন হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা। কিন্তু এ বছর পাটের দাম কমতে কমতে ঠেকেছে মাত্র দেড় হাজার টাকায়। ফলে পাটের উৎপাদন খরচ তো দূরের কথা কৃষকদের নিজেদের মজুরির খরচই উঠছে না।
 
দেশের পাটশিল্প নিয়ে বিদেশি চক্রান্ত হচ্ছে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এর জন্যই সরকারি মিলগুলো একযোগে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এসব মিলের শ্রমিকরা কর্ম হারিয়ে বেকার জীবন কাটাচ্ছেন। তাদের স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। মিল এলাকাগুলোতে ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে। মিলগুলোতে থাকা কোটি কোটি টাকা মূলের মূল্যবান যন্ত্রপাতি চুরি হয়ে যাচ্ছে।
 
আরও বলা হয়েছে, আগে দেশের ক্ষুদ্র পাট ব্যবসায়ীরা গ্রামগঞ্জ থেকে নগদ অর্থে পাট কিনে বছরের পর বছর ধরে মিলগুলোতে বাকিতে পাট সরবরাহ করতেন। সরকারি মিলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেসরকারি মিলগুলোতে বাকিতে পাট সরবরাহ করতে গিয়ে পুঁজি হারিয়ে অনেকেই নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।
 
বর্তমান অবস্থায় সরকারি মিলগুলো চালু করলে লোকসানের কোনো সম্ভাবনা নেই উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, কারণ মিলে কোনো স্থায়ী শ্রমিক নেই। যদি দেশের তিনটি এলাকায় অন্তত ১০টি মিল সরকারিভাবে চালু করা হয় তবে দেশের পাটশিল্পে পুনরায় কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসতো। পাট পণ্য উৎপাদনের কারণে পাটের চাহিদা বাড়ত। ফলে পাট চাষিরা ন্যায্যমূল্য পেতো। উৎপাদিত পাট পণ্য বিদেশে রফতানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হতো।
 
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন পাট চাষি ও পাট ব্যবসায়ী সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আব্দুল আজিজ।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)