তিন মাস বন্ধ থাকার পর রাত পোহাইলে খুলছে সুন্দরবন-নৌকা সাজাতে ব্যস্ত জেলে বাওয়ালিরা

নিজস্ব প্রতিনিধি:
সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকার জেলে বাওয়ালিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। নতুন নৌকা তৈরি, পুরানো নৌকা ও ট্রলার মেরামত সহ রঙের কাজ করে চলছে। মেরামত করা হচ্ছে জাল ও আটন। তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে শুক্রবার থেকে তারা জীবিকার সন্ধানে সুন্দরবনে প্রবেশের সুযোগ পাবে। মাছ কাঁকড়া ধরার জন্য সুন্দরবনে প্রবেশ করতে পারবে সেই আনন্দে জেলে বাওয়ালি ও ট্রলারচালকদের মধ্যে খুশির আমেজ বিরাজ করছে।
 বুড়িগেয়ালিনির জেলে সিরাজুল ইসলাম (৪০) বলেন,  আমার পরিবারে ৮ জন সদস্য আমি একা আয় করি তা দিয়ে সংসার চালাই, তিন মাস সুন্দরবনে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকায় খুব কষ্টে দিন কেটেছে। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে এই নৌকা সারাই করছি কাল থেকে সুন্দরবনে যেতে পারবো এ জন্য খুব ভালো লাগছে।
 মুন্সিগঞ্জের জেলে আসাদুজ্জামান গাজী (৪৪) বলেন, ১ তারিখ থেকে সুন্দরবন খুলছে তাই নৌকায় আলকাতরা দিচ্ছি । তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনে মাছ ও কাঁকড়া ধরেই পাঁচ সদস্যের সংসার চালাই। এলাকায় অন্য কোনো কাজ নেই। ৩মাস সুন্দরবন বন্ধ থাকায় মাছ ও কাঁকড়া ধরতে না পারায় সংসার চালাতে বেসরকারি সংস্থা আর এলার লোকজনের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছি। মাছ কাঁকড়া ধরে এসব ঋণ পরিশোধ করবো।
  ভামিয়া গ্রামের আব্দুল হাকিম গাজী (৬৫) বলেন, ৫০ বছর ধরে সুন্দরবনে যাচ্ছি। আগে বাবার সঙ্গে যেতেন। এখন অন্য সঙ্গীদের সঙ্গে যাই। সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল আমার জীবন-জীবিকা।

সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ অফিস সূত্রে জানা যায়, ১ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সাতক্ষীরা রেঞ্জের চারটি স্টেশন থেকে নৌকা নিবন্ধন (বিএলসি) হয়েছে ২ হাজার ৮৩৯টি। বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন কর্মকর্তা নূরুল আলম জানান, সাধারণত একটি নৌকায় ৫-৬ জন করে মাছ কিংবা কাঁকড়া ধরতে সুন্দরবনে ঢুকে থাকেন।

সুন্দরবন ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল  হালিম জানান, পর্যটকের ওপর নির্ভর করে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ এলাকায় পাঁচ শতাধিক ট্রলার চলে। সুন্দরবনে জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত মাছ ও কাঁকড়া ধরা বন্ধ রাখার পাশাপাশি পর্যটক ঢোকা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় সুন্দরবন এর ওপর নির্ভরশীল জেলে বাওয়ালিরা ধার দেনা করে খুব কষ্টে সংসার চালায়।

পশ্চিম সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য রক্ষা, জীবজন্তু ও মাছের প্রজনন বাড়ানোর জন্য ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে ৯২ দিনের জন্য নদ-নদীতে মাছ, কাঁকড়া ধরা ও পর্যটক প্রবেশেরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। আগামী ১ সেপ্টেম্বর সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে।

সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এম কে এম ইকবাল হোছাইন চৌধুরী বলেন, তিন মাস পর ১ সেপ্টেম্বর থেকে জেলে ও বাওয়ালিদের সুন্দরবনে ঢোকার পাস (অনুমতি) দেওয়া হবে। এ জন্য আগে থেকে জেলে বাওয়ালির পাশাপাশি পর্যটক পরিবহনকারী ট্রলারমালিকেরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)