তালায় প্রকট দৃষ্টি প্রতিবন্ধীর অসাধারণ সাফল্য 

ফারুক সাগর:
সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় ম্যাধমিক পরীক্ষায় প্রকট দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এক পরীক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস বৃষ্টি অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। সে মহন্দী প্রগতি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে জিপিএ ৪.৬১ পেয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। কৃষক বাবা আতাউর মোড়ল এবং মা মৃত:তানজিমা বেগমের একমাত্র মেয়ে সে। তানজিমা বেগম মারা গেলে বাবা আতাউর মোড়ল দ্বিতীয় বিয়ে  করে। সেই দম্পতির এগার বছরের এক মেয়ে এবং নয় বছরের এক ছেলে সন্তান আছে।
দুই বছর বয়সে মা মারা গেলে অসহায় মেয়েটি বড় হয় নানীর কাছে। উত্তর নলতা গ্রামের বাসিন্দা নানা মৃত: শেখ আতিয়ার রহমান এবং নানী রুবিয়া বেগমের ইচ্ছাতে সে প্রথমিক বিদ্যালয়ের যেতে শুরু করে। সেই থেকে তার পড়াশোনার প্রতি তীব্র আগ্রহ সৃষ্টি হয়।
নানী রুবিয়া বেগম বলেন,আমার কোন পুত্র সন্তান নেই। চার কণ্যার মধ্যে দ্বিতীয় কণ্যা (তানজিমা বেগম) অকালমৃত্যু হয়। সেই থেকে বৃষ্টি আমার কাছে থেকে লেখাপড়া শুরু করে। উজ্জ্বল আলো (দিনের আলো) ছাড়া সে পড়তে পারত না। খুলনার বড় ডাক্তার দেখিয়ে ছিলাম। তারা বলে বৃষ্টির চোখের কর্ণিয়া প্রতিস্থাপন করতে হবে। কেবা কর্ণিয়া দেবে আর আমরা এত টাকা কোথায় পাবো? সরকারি যে উপবৃত্তির টাকা দেয় সেই টাকা দিয়ে নাতনিকে একটি ট্যাব কিনে দেই। তাই দিয়ে নাতনি বইয়ের অক্ষর বড় করে পড়ে। কিন্তু সে লেখে অনুমান নির্ভর করে বলছিলেন বৃষ্টির নানী রুবিয়া বেগম ।
মহন্দী প্রগতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নীহাররঞ্জন বিশ্বাস বলেন,জান্নাতুল ফেরদৌস বৃষ্টি একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। যশোর শিক্ষা বোর্ড থেকে তার জন্য লিখিতভাবে একজন রিডার অনুমতি নেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী রিডার নিম্ন শ্রেনী থেকে নেওয়ার নিয়ম। এক্ষেত্রে আমরা অষ্টম শ্রেণীর একটি ছাত্রকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনুমতি ক্রমে নিযুক্ত করি। সে সকল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পড়ে দিত। একবার পড়লে তা সহজে মেয়েটি অনুধাবন করতে পারতো। সেভাবে পরিক্ষার খাতায় উত্তর লিখেছে। তার হাতের লেখা অনেক সুন্দর। বিদ্যালয়ে বিশেষ দিবস যেমন জাতীয় শোক দিবস (১৫ আগস্ট),বিজয় দিবস,স্বাধীনতা দিবস,শিশু দিবসে গঠন মূলক আলোচনায় অংশ গ্রহণ করতো সে। আমার সাধারণ শিক্ষার্থীদের থেকে সে অনেক ভালো পারফরম্যান্স করতো। তার এই সাফল্য অর্জনে আমরা অনেক গর্বিত। আমি তাকে তালা সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। তালা সরকারি মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শফিকুল ইসলামকে মেয়েটির বিষয়ে অবগত করেছি। তিনি যেন আমার এই মেধাবী ছাত্রীর প্রতি যত্নবান হন সেই আহ্বান জানানো হয়েছে বলেন প্রধান শিক্ষক নীহাররঞ্জন বিশ্বাস।
জান্নাতুল ফেরদৌস বৃষ্টি বলেন,বড় হয়ে আমি শিক্ষক হতে চাই। আমার মত যারা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী তাঁরা লেখাপড়া করতে যেন কোন বাঁধা না পাই। আমি প্রতিকূল পরিবেশে বড় হয়েছি। আমার মত অন্য দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা যেন সমাজের বোঝা না হয়। আমার জন্য সকলেই দোয়া করবেন। আমি যেন আমার শিক্ষা জীবন সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি।
ফলাফল-
JANNATUL FERDOS BRISTI; SSC BOARD: JESSORE;
ROLL: 304254; RESULT: PASSED; GPA: 4.61;
LTRGD: 101:A-,107:A-,109:A-,127:A ,111:A+,153:A ,
110:A+,140:A+,154:A+,134:A+.
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)