দেবহাটা হাসপাতালের পরিত্যক্ত স্টাফ কোয়ার্টার যেন অপরাধীদের আস্তানা
স্টাফ রিপোর্টার:
যেন অপরাধের আখড়ায় পরিনত হয়েছে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অরক্ষিত পরিত্যক্ত স্টাফ কোয়ার্টার গুলো। হাসপাতালের আবাসিক এলাকায় বহিরাগত ও অযাচিত ব্যক্তিদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকা স্বত্ত্বেও এখানে তা মানছেননা কেউই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ঔদাসীনতার সুযোগে দিনে ও রাতে অরক্ষিত পরিত্যক্ত স্টাফ কোয়ার্টার গুলো রীতিমতো অপরাধীদের অভয়াশ্রম হয়ে উঠেছে। এছাড়া মাদক ব্যবসায়ী, সেবী, বখাটে, কিশোরগ্যাং ও টিকটকারদের উৎপাতে হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগী এবং তাদের স্বজনদের পাশপাশি অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন আশপাশের বাসিন্দারাও।
সম্প্রতি হাসপাতালের এসব অরক্ষিত পরিত্যক্ত স্টাফ কোয়ার্টার গুলো থেকে চুরি হয়েছে দরজা, জানালা, গ্রীল, ইলেকট্রিক ওয়ার্রিং কেবল, পুরাতন বৈদ্যুতিক খুটিসহ কয়েক লাখ টাকা মুল্যের সরকারি আসবাবপত্র। দিনের পর দিন এমন দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটলেও তা নজরে আসেনি দেখভালের দায়িত্বে থাকা নৈশপ্রহরী থেকে শুরু করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। এমনকি ধরা পড়েনি হাসপাতালের প্রবেশমুখে থাকা সিসি ক্যামেরাতেও।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, হাসপাতালের কিছু স্টাফের এসব চুরির ঘটনায় সম্পৃক্ততা রয়েছে। কেননা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, সিসি ক্যামেরা ও নৈশ প্রহরীদের নজর এড়িয়ে দিনের পর দিন চুরির ঘটনা একেবারেই অসম্ভব। তাছাড়া হাসপাতালের অরক্ষিত পরিত্যক্ত স্টাফ কোয়ার্টার গুলো মাদক ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন অপরাধী আর বখাটে, কিশোরগ্যাং, টিকটকারদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠলেও তা নিয়ন্ত্রণে কোন পদক্ষেপ নেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এমনকি এসব কোয়ার্টার থেকে লাখ লাখ টাকার মালামাল চুরি হলেও আইনি পদক্ষেপ না নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিরব থাকাটা সকলের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ মনে হয়েছে।
হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি কয়েকজন নারী ও তাদের স্বজনেরা জানান, মহিলা ওয়ার্ডের পাশদিয়ে গভীর রাতে অরক্ষিত পরিত্যক্ত স্টাফ কোয়ার্টার গুলোর দিকে নারী পুরুষের যাতায়াত ও কথাবার্তা শোনা যায়। মাঝে মধ্যে রাতের বেলা মহিলা ওয়ার্ডের জানালা দিয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা উঁকি দেয়। রোগীদের গায়ে হাত দেয়া বা পাশে থাকা মোবাইল ফোন কিংবা অন্যান্য জিনিসপত্র চুরিরও চেষ্টা চালায় তারা।
হাসপাতালের সীমানা লাগোয়া আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা জানায়, পরিত্যক্ত এসব অরক্ষিত স্টাফ কোয়ার্টারে দিনের বেলা মাদক সেবী, বখাটে, কিশোরগ্যাং ও টিকটকারদের আড্ডা বসে। স্কুল ও কলেজ ফাঁকি দিয়ে উঠতি বয়সের কিশোররা সেখানে ঢুকে মাদকসেবন সহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এমনকি এসব বখাটেদের দ্বারা অনেক নারীও ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছেন। আর রাত হলে এসব কোয়ার্টারগুলো অপরাধী ও মাদক ব্যবসায়ীদের আস্তানা হয়ে ওঠে। ‘চুরি, অপরিচিত নারী পুরুষের যাতায়াত, জুয়ার আসর’ সব কিছুই সেখানে হয় উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশসহ এ থেকে পরিত্রান চান স্থানীয়রা।
এসব বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. আব্দুল লতিফ বলেন, দুই জন নৈশপ্রহরী দিনবদল করে হাসপাতালের পাহারা দেন। কে কখন চুরি করছে তা সবসময় নৈশপ্রহরীর নজরে পড়েনা। তাছাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে মাদকসেবী, বখাটে, কিশোরগ্যাং সদস্য ও টিকটকাররা ওইসব পরিত্যক্ত অরক্ষিত স্টাফ কোয়ার্টারেও ঢুকে পড়েন বলে তিনি দাবি করেন।