দেবহাটা শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারি পঙ্কজ চ্যাটার্জীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের
মোমিনুর রহমান:
দেবহাটা উপজেলা শিক্ষা অফিসের উচ্চমান সহকারি পঙ্কজ কুমার চ্যাটার্জীর বিরুদ্ধে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়েছে। মঙ্গলবার দেবহাটা উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অন্তত ৭০ জন শিক্ষক পঙ্কজ চ্যাটার্জীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগটি দায়ের করেন। এতে উপজেলায় কর্মরত শিক্ষকরা তাদের অভিযোগে বলেছেন, বিগত চার বছরেরও বেশি সময় দেবহাটা উপজেলা শিক্ষা অফিসে কর্মরত থাকা উচ্চমান সহকারি পঙ্কজ কুমার চ্যাটাজী সীমাহীন দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মরত বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষককের অতিষ্ঠ করে তুলেছেন। শিক্ষকবৃন্দ দাপ্তরিক কাজে অফিসে গেলে তাদের সাথে কাজ নিয়ে তালবাহানা, হয়ারানি এবং অবাঞ্চিত ও অশালীন ভাষা ব্যবহার করেন তিনি। বিল পাসের নামে শিক্ষকদের কাছে করেন ঘুষ দাবি।
ঘুষ না দিলে শিক্ষকদের বিলে ভুল ব্যাংক হিসাব বসিয়ে হিসাবরক্ষণ অফিসে পাঠান, যাতে শিক্ষকরা হয়রানি ও বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। এতে শুধু শিক্ষকরাই নয়, বিলে ভুল কোড ও ব্যাংক হিসাব লেখায় হিসাবরক্ষণ অফিসও রীতিমতো বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েন। কখনও নিয়মিত অফিসে আসেননা তিনি, নৈমত্তিক ছুটি ছাড়াই দিনের পর দিন থাকেন অনুপস্থিত। আর যদিও অফিসে আসেন খালি গায়ে বসেন অফিসের চেয়ারে, তাতে অফিসে ঢুকতে বিব্রতবোধ করেন অফিসের নারী স্টাফ ও অফিসে যাতায়াতকারি নারী শিক্ষকরা।
পি.আর.এল গমনকারী শিক্ষকদের অর্থ প্রাপ্তি বা বদলীর আদেশ প্রাপ্তিতে বড়সড় ঘুষ দাবি করেন তিনি। দাবিকৃত ঘুষ না দিলে শিক্ষককদের দিনের পর দিন অফিসে ডেকে হয়রানী করেন। তার স্বেচ্ছাচারিতায় চারমাস আগে বসন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক জোবেদা খাতুন পি.আর.এল-এ গেলেও তিনি তার বেতনভাতা ও ঈদ বোনাস পাননি।
পাসপোর্ট, বর্হিঃ বাংলাদেশ ছুটি, মাতৃত্বকালীন ছুটি ও চিকিৎসা ছুটি প্রাপ্তি এবং ছুটি শেষে বেতন ভাতাদি প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও শিক্ষকদের ব্যাপকভাবে হয়রানি করেন পঙ্কজ চ্যাটার্জী। চিকিৎসা ছুটি থেকে ফেরার পর সিদ্ধেশ্বরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক ঋতুপর্না মিস্ত্রির বেতন বন্ধ রাখেন তিনি। পরে ওই শিক্ষক মারা যান। শিক্ষকদের সার্ভিস বইসহ আনুসঙ্গিক কাজ আপডেট করার কথা বললে তিনি উপহাসমুলোক কথা বলেন এবং বিনাকারনে কালক্ষেপণ করেন। তার দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার বা সহকারি শিক্ষা অফিসারগণ তাকে সতর্ক করলে তিনি তাদের সাথে রীতিমতো ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও মারমুখি আচরণ করেন অভিযুক্ত উচ্চমান সহকারি পঙ্কজ চ্যাটার্জী।
এসকল কারনে পূর্ববর্তী কর্মস্থল থেকে শাস্তিমুলোক বদলি হয় তার। দিনের পর দিন দেবহাটা উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষা অফিসের অফিসারদের সাথে এমন অসদাচরন চলতে থাকায় অবশেষে তাকে দেবহাটা শিক্ষা অফিস থেকে প্রত্যাহারসহ তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে শিক্ষকরা তার বিরুদ্ধে গণস্বাক্ষরকৃত অভিযোগটি দায়ের করেছেন। তাছাড়া উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে অসদাচরণের ঘটনায় সম্প্রতি শিক্ষা অফিসার মো. আজহারুল ইসলাম বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে পৃথক আরেকটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এব্যাপারে দেবহাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মো. মুজিবর রহমান বলেন, শিক্ষকদের গণস্বাক্ষরকৃত লিখিত অভিযোগের অনুলিপি পেয়েছি। বিষয়টি জেলা শিক্ষা অফিস ও উপজেলা প্রশাসন তদন্ত করছে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত উচ্চমান সহকারি পঙ্কজ চ্যাটার্জী।