শ্যামনগরে স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণকালে ভিডিও ধারণ করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে ইউপি সদস্য গ্রেপ্তার
রঘুনাথ খাঁ:
অষ্টম শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ এবং ধর্ষণের ভিডিও চিত্র ধারণ করে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় পুলিশ এক ইউপি সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার পশ্চিম পোড়াকাটলা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতের নাম শহীদুল ইসলাম আবীর ওরফে আবিয়ার রহমান (৫০)। তিনি শ্যামনগর উপজেলার পশ্চিম পোড়াকাটলা গ্রামের শফিকুল ইসলাম সরদারের ছেলে ও বুড়িগোয়ালিনি ইউপি সদস্য।
শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনি ইউনিয়নের একটি গ্রামের দিনমজুর জানান, কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা ইউনিয়নের মাঘুরালী গ্রামে তার বিবাহিত মেয়ে ও জামাতার সঙ্গে পাঁচ বছর আগে তালাক হয়ে যায়। তালাকের পর মেয়ে ভারতে কাজ করতে যেয়ে সেখানে বিয়ে করে। জামাতাও অন্যত্র বিয়ে করে। সেকারণে অসহায় নাতনিকে তিনি মুন্সিগঞ্জের একটি বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন। বর্তমানে সে অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী। তাদের বাড়িতে যাতায়াতের সুযোগে ইউপি সদস্য শহীদুল ইসলাম তার নাতনীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর রাত ৯টার দিকে তার টিনের ছাউনি বাড়িতে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের ভিডিও চিত্র ধারণ করে দাঁতিনাখালি গ্রামের শহীদুল্লাহ গাজীর ছেলে হাসানুল ইসলাম ওরফে সামছুদ্দিন। ধর্ষণেল ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে শহীদুল ইসলাম তার নাতনিকে প্রায়ই ধর্ষণ করতো। একপর্যায়ে নগ্ন ভিডিও সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে হাসানুল ইসলাম তার নাতনীকে ঘেরের বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করে। মেয়েটি অন্তঃস্বত্বা হয়ে পড়ায় শহীদুল তার সহযোগী দাতিানখালি গ্রামের ফিরোজ সরদারের ছেলে আবু নাঈমকে নিয়ে শ্যামনগর সদরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে গর্ভপাত ঘটায়। বিষয়টি তিনি (নানী) জানতে পেরে গত পহেলা জুন ইউপি সদস্য শহীদুল ইসলাম তাদের বাড়িতে এলে নাতনীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। বিয়ের আশ্বাস দিয়ে দিনের পর দিন টালবাহানা করায় সোমবার তিনি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বাদল জানান, ধর্ষণ ও ধর্ষণের ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে ধর্ষিতা স্কুল ছাত্রীর নানী বাদি হয়ে সোমবার থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২০০০ সালের সংশোধিত ২০০৩ এর ৯(১) ও পর্ণগ্রাফি আইনে একটি মামলা (৩৩নং) দায়ের করেছেন। মামলায় ইউপি সদস্য শহীদুল ইসলাম, হাসানুল ও আবু নাঈমকে আসামী করা হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় ইউপি সদস্য শহীদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত শহীদুল ইসলামের কাছ থেকে নগ্ন ভিডিওসহ তার মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ধর্ষিতার ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে সাতক্ষীরার জ্যেষ্ট বিচারিক হাকিম বণ্যা খাতুনের কাছে মেয়েটি ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। মেয়েটিকে তার নানাীর জিম্মায় দিয়েছেন বিচারক।
এ ব্যাপারে মঙ্গলবার দুপুরে গ্রেপ্তারকৃত ইউপি সদস্য সাতক্ষীরা আদালতের বারান্দায় সাংবাদিকদের জানান, তার প্রতিপক্ষরা তাকে ফাঁসিয়েছে।