কাজ না থাকায় উপকূল ছাড়ছে অনেক পরিবার
অনলাইন ডেস্ক:
আজ ঘুর্ণিঝড় আম্পান দিবস। ২০২০ সালের ২০ মে ঘুর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে উপকূলের বাধ ভেঙে লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপূর্বে ২০০৯ সালের ২৪ মে ঘুর্ণিঝড় আয়লার পর থেকে প্রায় প্রতিবছরই উপকূলের জেলাগুলিতে একের পর এক ঝড় জলোচ্ছাস নদী ভাঙনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। একটি ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠার আগেই আর একটি ঝড়ের কারনে উপকূলের মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাপন অসম্ভব হয়ে উঠেছে।
এদিকে আম্পান দিবসের একদিন পূর্বে শুক্রবার (১৯ মে) বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উপকূলে কাজের সংস্থান না হওয়ায় অনেকে পরিবার ছেড়ে চলে যাচ্ছে অন্যত্র। স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে যেসব ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে এর প্রভাবে মানুয়ের বাড়িঘর, জমি ধ্বংস হয়েছে। এতে মানুষ কর্মের জন্য ঢাকামুখী হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলের প্রায় ২ কোটি মানুষ বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। সমুদ্রের উচ্চবৃদ্ধির ফলে লবণাক্ত পানি উপকূলের আবাসিক এলাকায় প্রবেশ করছে। এতে মিঠা পানির সংকট দেখা দিয়েছে। লবণাক্ত পানি পান করে এসব মানুষ দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা শহরে বর্তমানে যত মানুষ বসবাস করে তার ৪০ শতাংশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গ্রাম থেকে কর্মের সন্ধানে ঢাকায় এসেছে। এ রকম প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষের বসবাস এখন ঢাকায়। এদের মধ্যে ৭০ শতাংশ অর্থাৎ ৯৮ লাখ মানুষ তাদের বাড়িঘর ধ্বংস হওয়ায় শহরে আসতে বাধ্য হয়েছে। বিশেষ ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তারা শহরে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সমুদ্রের লোনা পানি সুন্দরবনের বিভিন্ন খাল ও নালা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করছে। এতে সুন্দরবনের প্রাণ সুন্দর গাছ নষ্ট হচ্ছে। এর প্রভাবে সুন্দরবনের অস্বিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। উপকূলীয় এলাকায় আর্থিক সক্ষমতার অভাবে অনেক পরিবারের ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হচ্ছে। দারিদ্র্য বাড়ছে।
এতে বলা হয়, দারিদ্র্যদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাস করে গ্রামে। এর মধ্যে উপকূলীয় এলাকায় দারিদ্র্য বেশি। এরপরেই শহরের আশেপাশে দারিদ্র্যদের বসবাস। তবে তুলনামূলকভাবে শহরে দারিদ্র্যদের বসবাস কম। দারিদ্র্যদের একটি বড় অংশ শহরের আশেপাশে থাকে। তারা সেখান থেকে শহরে এসে কাজ করে আবার আবাসস্থলে ফিরে যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে বাংলাদেশের উপকূলে স্কুলগুলোকে কমিউনিটি সাইক্লোন শেল্টার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এতে অনেক মানুষ ও সম্পদ রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে। তবে এ খাতে বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে। দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে দ্রুত পুনর্বাসন ও ক্ষতিগ্রস্তদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে মেরামত ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়া দ্রুত করতে হবে।
এতে বলা হয়, ভবিষ্যতের প্রয়োজন অনুযায়ী দুর্যোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ জন্য উপকূলীয় অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ বাড়াতে হবে, যা ঘূর্ণিঝড়ের সময়ে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, উপকূলের পরিবেশ রক্ষায় সরকারকে জরুরি উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।