সরকার গায়ের জোরে নির্বাচন করে ক্ষমতায় রয়েছে : খন্দকার মোশাররফ
অনলাইন ডেস্ক:
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে যত তাড়াতাড়ি বিদায় করা যায়, দেশ ও জনগণের তত মঙ্গল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘বিএনপি শান্তিপূর্ণ বিভাগীয় সমাবেশ কর্মসূচি দিয়েছিল। এই সরকারের পুলিশ বাহিনী, পেটুয়া বাহিনী সেখানে বাধা সৃষ্টি করেছে। সকল বাধাকে উপেক্ষা করে প্রতিটি কর্মসূচিকে জনগণ সফল করেছে। সরকার গায়ের জোরে প্রতিটি নির্বাচন করে ক্ষমতায় রয়েছে। এই সরকারকে যত তাড়াতাড়ি বিদায় করা যায়, এ দেশের এবং জনগণের ততই মঙ্গল।’
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আজ শনিবার (৬ মে) দুপুরে মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এসব কথা বলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বেগম খালেদা জিয়া আর গণতন্ত্র একে অপরের সম্পূরক। গণতন্ত্রের অর্থই হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার অর্থই হচ্ছে গণতন্ত্র। আজকে আমাদের নেত্রী কারগারে? শুধু গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করার কারণে আজকে মিথ্যা-বানোয়াট মামলায় ফরমায়েসি রায় দিয়ে দেশনেত্রীকে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তেমনিভাবে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও একটি বানোয়াট মামলায় ফরমায়েশি রায়ে বিদেশে থাকতে বাধ্য করছে।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন আরও বলেন, আজকে দেশে যারা গায়ের জোরে সরকারে আছে, তারা স্বৈরাচারী। তারা গণতন্ত্রকে হত্যা করে, গণতন্ত্রের পক্ষে যারা কথা বলে তাদের কণ্ঠকে স্তব্ধ করে দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছে। তাদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আজকে দেশনেত্রী কারগারে গৃহবন্দি। তাই আজকে এদেশের মানুষ বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়। এদেশের জনগণ গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার চায়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আরও বলেন, গণতন্ত্রের সাথে যে নেত্রীর নাম ওতোপ্রতোভাবে জড়িত, সেই নেত্রীর মুক্তি ছাড়া গণতন্ত্র মুক্তি পাবে না৷ সেজন্য আজকে দেশের সংকটকালে দেশকে রক্ষা, জনগণকে রক্ষা, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি অপরিহার্য বিষয়।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা আরও বলেন, আজকে যারা ক্ষমতায়, তারা স্বাধীনতার পর ক্ষমতায় এসে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত গণতন্ত্রকে হত্যা করে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে, এদেশে সারা জীবনের জন্য রাজত্ব কায়েম করতে চেয়েছিল। কিন্তু তা ব্যর্থ হয়েছে। এই আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পর বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নামে অর্থনীতি লুটপাট করে এদেশে দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি করেছিল। আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী তখন বাংলাদেশকে তলাবিহীনঝুড়ি বলেছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ১/১১তে যারা সংবিধান বহির্ভূতভাবে জরুরি আইন করে সরকারে ছিল, সেই সরকার এদেশ থেকে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার জন্য শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসিয়ে গিয়েছে। এরপর এই সরকার গায়ের জোরে প্রতিটি নির্বাচন করে ক্ষমতায় রয়েছে। ২০১৪ এর নির্বাচন এদেশের মানুষ বয়কট করেছিল। নির্বাচন বয়কট হওয়ার পরও এই সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় থেকেছে। ২০১৮তে তারা দিনের ভোট রাতে ডাকাতি করেছে।
মোশাররফ হোসেন আরও বলেন, জনগণের প্রতি এই সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা নেই বলে, তারা লুটপাট, দুর্নীতি, মেগাপ্রজেক্টে মেগাদুর্নীতি করে, দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ১৯৭২-৭৫ এ তারা এভাবে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। এখন আবার তারা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, পদদলিত করেছে, অর্থনীতিকে ধ্বংস করেছে৷ যার জন্য আজকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এই সরকার ঠেকাতে পারছে না। কারণ, তাদের সিন্ডিকেট, তাদের ব্যবসায়ীরা এদেশের মানুষের পকেট থেকে লুটপাট করে বিদেশে পাচার করার জন্য এই পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। আজকে মধ্যবিত্ত মানুষ গরীব হয়ে যাচ্ছে। তারা পেট চালাতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান এবং তার পরিবার আওয়ামী লীগের শত্রু। কারণ আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার ঘোষণা থেকে শুরু করে যে যে ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে বিএনপি সফল হয়েছে। এ জন্য আজকে আওয়ামী লীগ বিএনপিকে, এ দেশের জনগণকে ভয় পায়৷ তাই আজকে যদি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার না হয়, তাহলে দেশের ভবিষ্যত কি হবে, কেউ বলতে পারবে না। জাতির স্বার্থে আমাদেরকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে৷
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম (বীরপ্রতীক), বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ জয়নুল আবদীন ফারুক, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর, শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া প্রমুখ।