ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে ডিজিটাল আইনকে ব্যবহার করছে সরকার : মির্জা ফখরুল
অনলাইন ডেস্ক:
‘ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে ডিজিটাল আইনকে ক্ষমতাসীন সরকার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে’ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এ আইন বাংলাদেশের জনগণের স্বাধীন মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অন্তরায়। এটি গণতন্ত্রকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ক্ষমতাসীনরা আইনটির সুযোগ নিয়ে বিরোধীদলের নেতাকর্মী, সংবাদকর্মী ও সাধারণ নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করছে।’
আজ মঙ্গলবার (২ মে) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। গতকাল সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভার সিদ্ধান্ত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ভার্চুয়াল সভায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাগারে থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা ও ইউএনবি সাংবাদিক মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিষয়ে আলোচনা হয় বলে জানান বিএনপি মহাসচিব। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সভায় কারাগারে থাকা শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরাসহ এই আইনে আটক থাকা সমস্ত বন্দির মুক্তি ও এই আইনের অধীনে সকল মামলা প্রত্যাহারের এবং অবিলম্বে গণতন্ত্রবিরোধী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানানো হয়।’
সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিল-২০২৩ প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। তিনি বিলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। সভায় বিলটি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ইতোমধ্যে বিলটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করে সংসদে পেশ করা হয়েছে। শিগগিরই তা আইনে পরিণত করার প্রক্রিয়া চলছে।
প্রস্তাবিত আইনটি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিল ২০২৩ অগণতান্ত্রিক, শ্রমিক ও পেশাজীবীদের স্বার্থবিরোধী, একতরফা, নিবর্তনমূলক এবং আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির স্পষ্ট বরখেলাপ। আইনটি প্রণয়নের কোনো পর্যায়েই অংশীজনের মতামত নেওয়া হয়নি। এর পরিধি শুধু বিস্তৃত নয় অসীম। সরকার ইচ্ছে করলেই যে কোনো শিল্প, প্রতিষ্ঠান, পেশা ও সেবাকে এই আইনের আওতায় এনে ধর্মঘট নিষিদ্ধ করে তা অমান্য করাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বানাতে পারবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘প্রচলিত শ্রম আইনে কোনো ধর্মঘট জনজীবন কিংবা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করলে তা নিষিদ্ধ করে সংশ্লিষ্ট বিরোধটি শ্রম আদালতে পাঠানোর কথা বলা আছে। কিন্তু, প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, সরকার প্রয়োজন মনে করলেই শ্রমজীবী বা পেশাজীবীকে ছয় মাস করে সারাজীবন ধর্মঘট নিষিদ্ধ ঘোষণার আওতায় রাখতে পারবে। কিন্তু, তাদের ন্যায্য সমস্যা সমাধান কিংবা প্রাপ্য আদায়ের কোনো বিকল্পের কথা আইনে রাখা হয়নি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আইএলওর সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ ওই প্রতিষ্ঠানে গঠনতন্ত্র মানতে বাধ্য। যেখানে বলা হয়েছে, কোনো সদস্য রাষ্ট্র কনভেনশন অনুসমর্থন করলে তার প্রতিটি বিধান বাস্তবায়ন করবে। রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন কনভেনশনের কোনো বিধানের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ হলে, সেই আইন পরিবর্তন করতে হবে। অথচ, প্রস্তাবিত আইনে অনুসমর্থনকৃত কনভেনশনের বিধান অগ্রাহ্য করে সরকার আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন করছে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা মনে করি, প্রস্তাবিত আইনটি শুধু শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থ ও অধিকারকেই ক্ষুণ্ণ করবে না, এটি সামগ্রিকভাবে গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং জনগণের সংবিধান সম্মত প্রতিবাদের অধিকার পরিপন্থী। বিএনপি প্রস্তাবিত অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিল ২০২৩ প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছে।’