শ্যামনগরে যমুনা খননকালে চণ্ডিপুর মহাশ্মশানের লাশ স্নানের বেদি ভেঙে ফেলায় বিপাকে ৭টি গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ

রঘুনাথ খাঁঃ

কোন প্রকার মাপ জরিপ ছাড়াই কালিগঞ্জ
থকে শ্যানগর পর্যন্ত আদি যমুনা খনন কাজ চলমান থাকায়
রেকডীয় জমিতে নির্মিত চণ্ডিপুর মহাশ্মশানের শবদেহ স্নানের
বেদী ভেঙে ফেলায় হুমকিতে পড়েছে ওই অঞ্চলের সাতটি গ্রামের
হিন্দু স¤প্রদায়ের মানুষজন। হঠাৎ কেউ মারা গেলে তার লাশ
কিভাবে সৎকার করবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। এ
নিয়ে রবিবার বিকেল পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড বা স্থানীয়
প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন সিদ্ধান্ত না হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছেন
হিন্দু স¤প্রদায়ের নারী ও পুরুষগণ।
চণ্ডিপুর গ্রামের অবিনাশ মণ্ডল ও মহাশ্মশান পরিচালনা কমিটির
সাধারণ সম্পাদক সুনীল কুমার ঘোষ জানান, গত বছরের ২৭
অক্টোবর থেকে কালিগঞ্জ থেকে শ্যামনগর অভিমুখি আদি যমুনা
খনন কাজ শুরু হয়। আগামি ৩০ মে এর মধ্যে খনন কাজ শেষ করার লক্ষ্যে
কোন প্রকার মাপ জরিপ ছাড়াই খনন কাজ চলে। পুরাতন যমুনা ২৫০
ফুট খেকে ৩০০ ফুট চওড়া হলেও তড়িঘড়ি করে এসকেভেটর মেশিন
দিয়ে মাটি কেটে তলার মাটি নদীর দুপারে ফেলে ৮০ থেকে ১০০
ফুট চওড়া করে কাটা হচ্ছে । যাহা খাল খননের নামান্তর। নদীর পারে
কাটা মাটি ফেলায় একটু বৃষ্টি হলেই তা ওই নদীতে পড়ে তলদেশ
উঁচু হয়ে পূর্বের অবস্থা ফিরে আসবে। এতে সরকারি বরাদ্দের
কোটি কোটি টাকা অপচয় হবে। এ ছাড়া নদী খননের
নির্ধারিত নকশা কাউকে না দেখিয়ে খনন কাজ করায় বিশেষ
সুবিধা নিয়ে নদীগর্ভে থাকা শ্যামনগর সদরের ডাকবাংলো
মোড়ের ইউপি সদস্য মলয় কুমার গায়েন ওরফে ঝন্টু’র বহুতল ভবন,
ভুরুলিয়ার অ্যাড. চঞ্চল কুমার তরফদারের বৈঠকখানা ভাঙা হয়নি।
এমনকি উচ্ছেদ না করার শর্তে দুপারে বসবাসরত ভূমিহীনদের কাছ
থেকে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ফলে যমুনা
খনন আজ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে। মাপ জরিপ না করে নদী খননের
ফলে রেকডীয় জায়গায় চণ্ডিপুর মহাশশ্মশানের বেদী ভেঙে ফেলা হয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে স্থানীয় সাংসদ জগলুল হায়দার, উপজেলা
নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তার হোসেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান
আতাউল হক দোলনসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা
ঘটনাস্থল ঘুরে গেলেও ঘটনার দুই দিনেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের
দায়িত্বপ্রাপ্ত সেকশান অফিসার তন্ময় হালদার ও সংশি-ষ্ট
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এমনকি তাৎক্ষণিক কোন লাশ সৎকারের অংশ হিসেবে বেদী মেরামত
করা হয়নি। যদি এটি হিন্দু স¤প্রদায়ের প্রতিষ্ঠান না হয়ে
সংখ্যাগুরু স¤প্রদায়ের কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হতো তাহলে ওই
ঠিকাদার বা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাকে জেলখানায়
থাকতে হতো। তবে বর্তমানে যে গরম পড়ছে তাতে হঠাৎ করে মারা
যাওয়া চন্ডিপুর, দাদপুর, পাটনীপুকুর, ইছাকুড়,
হাসতলা,নন্দীগ্রাম ও বাধঘাটা এলাকার মানুষ যারা চণ্ডিপুর
মহাশ্মশানে শবদেহ সৎকারের উপর নির্ভরশীল তাদেরকে মরদেহ সৎকারে
হুমকিতে পড়তে হবে। তবে কার ইঙ্গিতে ও প্রকাশ্য মদতে ওই বেদী
ভাঙা হলো তার মুকোজ উন্মোচন করতে চায় ক্ষুব্ধ হিন্দু
সম্প্রদায়ের নারী ও পুরুষ।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড -২ এর দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারি
প্রকৌশলী (এসডি) শেখ আল মুনসুর রহমান জানান, সংশি-ষ্ঠ
ঠিকাদারের সঙ্গে আলোচনা করে অচিরেই সমস্যা সমাধান করা
হবে।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আক্তার হোসেন জানান,
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে
শ্মশানঘাট ভাঙচুরের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদারকে
দায়ী করা হয়েছে। একই সাথে নকশা অনুযায়ি মাপ জরিপ না করা
পর্যন্ত ও বেদী মেরামত না করে দেওয়া পর্যন্ত খনন কাজ বন্ধ রাখার
সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)