সীতাকুণ্ড ট্র্যাজেডি: ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ চূড়ান্ত, কে দেবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা

অনলাইন ডেস্ক:

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চূড়ান্ত হলেও ক্ষতিপূরণ কে দেবে, তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশার।

অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ২০০ কোটি টাকার পণ্য সম্পূর্ণ পুড়ে যাওয়ার পাশাপাশি আরও ৮০ কোটি টাকার পণ্যের আংশিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে সরকারের ক্ষতি নিরূপণ কমিটি। এর বাইরে নিজেদের ১০০ কোটি টাকার পণ্য পুড়ে যাওয়া ও হতাহতদের ৪০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে বলে দাবি করেছে বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষ।

তবে সরকারিভাবে নিরূপণ করা ক্ষতিপূরণ কে পরিশোধ করবে সেটা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বিভ্রান্তি। বিশেষ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ ডিপো কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করতে হবে বলে কাস্টমস কর্মকর্তারা জানালেও ডিপো মালিকরাই নিজেদের ক্ষতিগ্রস্ত বলে দাবি করছেন।

তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড গঠিত ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিএম ডিপোর আগুনে অন্তত ৩০০ কোটি টাকার পণ্য নষ্ট হয়েছে। এক হাজার ২৩২টি শিপিং বিলের বিপরীতে এক কোটি ৮৫ লাখ ৯৩ হাজার ডলার পণ্য সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। এ ছাড়া ৩৮টি শিপিং বিলের বিপরীতে আরও ৭ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের পরপরই সাত সদস্যের এ কমিটি গঠন করেছিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।

ভয়াবহ এই আগুনে কন্টেইনার ডিপোটির সব ধরনের মালামালের পাশাপাশি নথিপত্র পুড়ে যাওয়ায় ক্ষতি নিরূপণে অনেক বেগ পেতে হয় এই কমিটিকে। দীর্ঘ আট মাস রফতানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, ফ্রেইট ফরোওয়ার্ডার এবং কাস্টমসের অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সফটওয়্যার থেকে তথ্য নিয়ে খসড়া প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার সময় একটি শেডে মজুত থাকা ২ কোটি ৮৬ লাখ ৩২ হাজার ডলার মূল্যের পণ্য সম্পূর্ণ অক্ষত ছিল বলে উল্লেখ করা হয়।

ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ কমিটির সদস্য রুহুল আমিন সিকদার বলেন, বিএম ডিপোর অগ্নিকাণ্ডে সম্পূর্ণভাবে যে কার্গোগুলোর ক্ষতি হয়েছে; সরেজমিনে সেটার তদন্ত হয়েছে। এ খসড়া প্রতিবেদনও তৈরি করা হয়েছে। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ২০০ থেকে আড়াই কোটি টাকার রফতানি পণ্যের ক্ষতি হয়েছে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপকমিশনার ব্যারিস্টার বদরুজ্জামান মুন্সি বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণটা নিরূপণ করা হচ্ছে করণ যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তারা যেন আর্থিক সুবিধা পেতে পারেন ডিপো কর্তৃপক্ষ বা অন্যান্য অরগানাইজেশন থেকে।

বিস্ফোরণের পর তিন দিনের আগুনে অন্তত ১০০ কোটি টাকা মূল্যের যন্ত্রপাতি-গাড়ির পাশাপাশি স্থাপনা ক্ষতি হয়েছে। সেই সঙ্গে হতাহতদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেয়া হয়েছে ৪০ কোটি টাকা বলে জানান চট্টগ্রাম বি এম কন্টেইনার ডিপোর উপমহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ নুরুল আকতার।

চট্টগ্রাম বিএম কন্টেইনার ডিপোর নির্বাহী পরিচালক ক্যাপ্টেন মাঈনুল আহসান, সরকারের সব ধরনের লাইসেন্স নিয়ে আমরা সেটা পরিচালনা করেছিলাম। তারপরও একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। এটা কেন হয়েছে; এর দায়ভার কতটুকু এটা নিরূপণ হওয়ার দরকার। এখানে সরকার বা তদন্ত কমিটি কেউই এককভাবে বিএম কন্টেইনার ডিপোকে দায়ী করেনি।

গত বছরের ৫ জুন রাতে সীতাকুণ্ডের এ ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও আগুনে ৫২ জনের মৃত্যু হয়। পরিচয় শনাক্ত না হওয়া ৮ জনের মরদেহ রয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। এ ছাড়া আহত হন অন্তত ৪শ জন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)