৬৯ কোটি টাকার যন্ত্র কিনতে ১১১ কোটি

অনলাইন ডেস্ক :

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় প্যাকেজিং হাউজ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। ১০টি ল্যাবরেটরির যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় দেওয়া হয়েছে মিথ্যা তথ্য। অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির কথা উল্লেখ করে প্রকল্পব্যয় ১৫৬ কোটি ৩৬ লাখে উন্নীত করা হয়। এর মধ্যে ৬৯ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয় ১১১ কোটি টাকায়। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অধিশাখার তদন্তে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, খাদ্য ও কৃষি সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী ল্যাবরেটরি তৈরি না হলে কৃষিপণ্য কখনোই আমেরিকা-ইউরোপের বাজার পাবে না। কারণ, কৃষিপণ্য ও খাদ্য আমদানি-রপ্তানির বিষয়ে আন্তর্জাতিক এই সংস্থার অবস্থান কড়াকড়ি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমান সরকার বিদেশে কৃষিপণ্য ও সবজি রপ্তানির জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ১০টি উদ্ভিদ সংগনিরোধ ল্যাবরেটরিকে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করতে উদ্যোগ নেয়। ১৫৬ কোটি টাকার প্রকল্প ২০২১ সালের অক্টোবরে একনেকে পাশ হয়। ২০২৪ সালের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

প্রকল্পে নয়টি বড় অনিয়মের কথা উল্লেখ করেছে এফএও। তারা বলেছে, কম অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে দিয়ে ল্যাবের স্পেসিফিকেশন তৈরি করা হয়েছে। ল্যাব ও যন্ত্রপাতির স্পেসিফিকেশন ঠিক নেই। কোনো কোনো যন্ত্রপাতির স্পেসিফিকেশন ব্রুশিউর থেকে হুবহু কপি করা হয়েছ। একই ধরনের যন্ত্রপাতি অপ্রয়োজনে সাত লটে ধরা হয়েছে। চার মিলিয়ন ইউএস ডলারে ১৯টি মাইক্রোস্কোপ কেনার বিষয়টি অস্বাভাবিক।

এ টাকায় সম্পূর্ণ কার্যকরী কয়েকটি ল্যাব স্থাপন করা যায়। মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবের উপযোগিতা যাচাই না করেই প্রায় সব ধরনের গ্লাসওয়্যারের সংস্থান রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে এফএও। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, যন্ত্র পরিচালনার জন্য অনেক আইটেম বাদ দেওয়া হয়েছে। আবার অপ্রয়োজনীয় অনেক যন্ত্র কেনার চেষ্টা চলছে। প্রকল্পের অনিয়ম প্রতিরোধে এফএও চার দফা সুপারিশ দিয়েছে।

এফএও-এর প্রতিবেদন পাওয়ার পর কৃষি মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মোহাম্মদ এনামুল হকের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ১০ জানুয়ারি গঠিত এ তদন্ত কমিটি ৩১ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। এই প্রতিবেদনে প্রকল্পের অপ্রয়োজনীয় ২০টি যন্ত্র বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি ৫১টি নতুন দরকারি যন্ত্র প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়।

২ মার্চ প্রকল্পটির স্টিয়ারিং কমিটির তৃতীয় সভা হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ওয়াহিদা আক্তারের সভাপতিত্বে সভায় ডিপিপি সংশোধন না করেই দরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত হয়। বলা হয়, ডিপিপি সংশোধন করতে দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার, তাই দরপত্র হওয়ার পর কার্যাদেশ দেওয়ার আগে ডিপিপি সংশোধন করা হবে। পরে ৬ মার্চ এ সংক্রান্ত দরপত্র আহ্বান করা হয়।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, বিষয়টি নিয়ে এফএও-এর প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমরা তদন্ত করে দেখিছি। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে একটি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। ওই প্রস্তাবনা অনুযায়ীই টেন্ডার হয়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)