খালেদা জিয়ার রাজনীতির সুযোগ নিয়ে চার মন্ত্রীর দুই মত

অনলাইন ডেস্ক :

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দুই ধরনের বক্তব্য এসেছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, খালেদা জিয়ার রাজনীতি করতে কোনো বাধা নেই। তবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের মতে, শর্ত অনুযায়ী খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারেন না। আর নির্বাচনের তো প্রশ্নই আসে না।

সম্প্রতি খালেদা জিয়ার রাজনীতি ও নির্বাচনের লড়ার প্রসঙ্গ আলোচনায় আসে। এ নিয়ে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের চারজন মন্ত্রী।

১৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সহকারী জজদের জন্য ওরিয়েন্টেশন কোর্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না, সে বিষয়ের জন্য সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদে যেতে হবে। এই অনুচ্ছেদে বলা আছে, নৈতিক স্খলনজনিত কারণে যদি দুই বছর বা তার ঊর্ধ্বে কারও সাজা হয়, তাহলে তিনি এমপি (সংসদ সদস্য) নির্বাচন করতে পারবেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, তিনি (খালেদা জিয়া) একজন স্বাধীন মানুষ। তিনি কী করবেন তা আমার বলে দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না, কিন্তু ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারায় প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতার কারণে তাকে তখন মুক্তি দেয়া হয়েছিল। তখন তাকে অসুস্থ হিসেবে মুক্তি দেয়া হয়েছিল। সেখানে আমরা কখনও লিখে রাখিনি যে, তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না।’

বৃহস্পতিবার ঢাকায় বাংলাদেশ ইনস্টিউট অব ইন্ট্যারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ আয়োজিত এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আবারও বলেছেন, নির্বাহী আদেশে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাময়িক মুক্তির ক্ষেত্রে রাজনীতি করা নিয়ে কোনো শর্ত দেওয়া হয়নি। তবে তার শারীরিক অবস্থা রাজনীতি করার মতো নয়।

বুধবার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক। সচিবালয়ে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনরির সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘কেন উনি (খালেদা জিয়া) রাজনীতি করতে পারবেন না? উনি জেলে থেকেও রাজনীতি করতে পারবেন, দলকে নির্দেশনা দেবেন। তবে সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে আইন অনুযায়ী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।’

কৃষিমন্ত্রীর বক্তব্যের পর বৃহস্পতিবার একই প্রসঙ্গে কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী কেউ দুই বছরের বেশি শাস্তিপ্রাপ্ত হলে তিনি নির্বাচন করতে পারেন না। খালেদা জিয়া দুই বছরের অনেক বেশি সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। সুতরাং নির্বাচন করার প্রশ্নই আসে না।’

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তার (খালেদা জিয়া) শারীরিক অবস্থা ও বয়স বিবেচনায় শর্তসাপেক্ষে কারাগারের বাইরে ঘরে থাকার অনুমতি দেয়া হয়েছে। সেই শর্ত অনুযায়ী তিনি রাজনীতিও করতে পারেন না।’

যেসব শর্তে খালেদা জিয়াকে ঘরে থাকার অনুমতি দেয়া হয়েছে সেই শর্তের মধ্যে তিনি রাজনীতি করতে পারবেন তা বলা নেই বলে জানান তথ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘শর্তের মধ্যে বলা আছে তিনি ঘরে থেকে চিকিৎসা নেবেন এবং অন্য কোনো কিছু করতে পারবেন না। সুতরাং তার রাজনীতি করতে পারারও কথা নয়।’

এদিকে বৃহস্পতিবার বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক যৌথসভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ বিষয়ে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেছেন, খালেদা জিয়া কি দণ্ডাদেশ থেকে মুক্তি পেয়েছেন? তিনি যে দণ্ডিত, কনভিক্টটেড, সেটা থেকে তিনি কি মুক্তি পেয়েছেন? যেটুকু পেয়েছেন, সেটা মানবিক কারণে। শেখ হাসিনার উদারতার জন্য এটা হয়েছে। কি জন্য? মানবিক কারণটা কেন? অসুস্থ মানুষকে মানবিক কারণে তার দণ্ড মুক্ত নয়, স্থগিত করা হয়েছে। অসুস্থ না হলে তিনি থাকতেন কোথায়? কারাগারে। ঠিক আছে? তাহলে দণ্ডিত ব্যক্তির রাজনীতি করার সুযোগ কোথায়?

ওবায়দুল কাদের বলেন, মানবিক কারণ আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখেছেন, তিনি (খালেদা জিয়া) মুক্তি পেয়েছেন। তা না হলে দণ্ডিত ব্যক্তি তো জেলে থাকবে। আর দণ্ডিত ব্যক্তি এটা নিয়ে তাদের (বিএনপি) সন্দেহ থাকলে ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে কেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করে? নিশ্চয় তিনি (খালেদা জিয়া) ভ্যালিডেবল না, সেজন্য তাকে (তারেক জিয়াকে) এনে বসিয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় পাঁচ বছরের সাজা নিয়ে কারাগারে যান খালেদা জিয়া। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শেষে ওই বছরের অক্টোবরে সাজা বেড়ে দ্বিগুণ হয় বিএনপি নেত্রীর। একই মাসে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় আরও ৭ বছরের সাজা হয় তার।

২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনার সংক্রমণ ধরা পড়ার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তার জামিনের আবেদন বারবার নাকচ হওয়ার মধ্যে স্বজনরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে মুক্তির আবেদন নিয়ে যান। আর সরকারপ্রধানের নির্বাহী আদেশে ওই বছরের ২৫ মার্চ ছয় মাসের জন্য মুক্তি পান তিনি।

গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর আইনমন্ত্রী জানান, ২০২৩ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত দেশের ভেতরে নিজের মতো করে থাকতে পারবেন খালেদা জিয়া।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)