অবশেষে ডুমুরিয়ার অবৈধ্য ১৪ ইটভাটা উচ্ছেদ

আব্দুর রশিদ, খুলনা  :
অবশেষে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪ টি ইট ভাটার কার্যক্রম বন্ধ ও উচ্ছেদ করা হয়েছে।  হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নে বুধবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত  এ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। জেলা প্রশাসনের উদ্যেগে জেলা পুলিশ, আনসার, পানি উন্নয়ন বোর্ড, এলজিইডি, পরিবেশ অধিদপ্তর ও সড়ক এবং জনপথ বিভাগ যৌথ ভাবে এ উচ্ছেদ অভিযানে অংশ নেয়।  খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ভদ্রা ও হরি নদীর তীরে এ ভাটাগুলো অবস্হিত।
বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, প্রায় আড়াই যুগ ধরে ডুমুরিয়া উপজেলার খর্ণিয়া ও রুদাঘরা ইউনিয়নের পশ্চিম পাশে বহমান ভদ্রা ও হরি নদীর দু’পাশ  দখল করে এলাকার প্রভাবশালীরা বেশ কয়েকটি ইটভাটা গড়ে তোলে। নদীর চর দখল ও এলাকার পরিবেশের ঝুকির কথা বিবেচনা করে ২০২১ সালের ২২ ফেব্রæয়ারি ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ(এইচআরপিবি)  নামক একটি মানবাধিকার সংস্হার পক্ষে সিনিয়র আইনজীবি মনজিল মোরসেদ হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করেন।
ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ ‘ডুমুরিয়া উপজেলার ভদ্রা ও হরি নদী দখল করে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ১৪টি ইটভাটার মধ্যে থাকা সরকারি নদীর জায়গা থেকে ইটভাটা  উচ্ছেদ/অপসারণ করে জমি  অবমুক্ত করার জন্যে খুলনা জেলা প্রশাসক ও ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশনা   প্রদান করেন। আদালতের সেই আদেশ যথাযথ ভাবে প্রতিপালন না হওয়ায় গত বছর ৭ডিসেম্বর রিটকারি আইনজীবির আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট খুলনা জেলা প্রশাসক ও ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে স্বশরীরে আদালতে উপস্হিত হয়ে জবাব দেয়ার নির্দেশনা দেন।
এরই প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার গত ১০ জানুয়ারী আদালতে উপস্হিত হন। ওই দিন বিচারপতি জে.বি.এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিল’র সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই ১৪টি অবৈধ ইটভাটা অপসারণ করে নদীর জায়গা অবমুক্ত করে  আগামী ৮ ফেব্রয়ারি’র মধ্যে  আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন। এরপর ইটভাটা মালিক পক্ষ সময় চেয়ে উচ্চ আদালতে একাধিক আবেদন করলেও তা খারিজ করে দেওয়া হয়। তারই প্রেক্ষিতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানুয়ারি মাসে ওইসব ভাটাগুলোর মধ্যে থাকা সরকারি জমির সীমানা নির্ধারণ করা হয়।
অবশেষে আজ বুধবার সকাল থেকে জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীনের প্রত্যক্ষ তত্তাবধানে এসব অবৈধ্য ভাটা উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।  উচ্ছেদ অভিযানে আরও উপস্হিত ছিলেন, খুলনা জেলার পুলিশ সুপার মাহবুব হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) এস.এম মুমিন লিংকন,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(এল,এ) আতিকুল ইসলাম, ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরীফ আসিফ রহমান,উপজেলা সহকারি কমিশনার(ভূমি) আফরোজ শাহীন খসরু, ডুমুরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ কনি মিয়া, পানি উন্নয়ন বোর্ডেরি উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মিজানুর রহমানসহ প্রশাসনের বিভিন্ন  পর্যায়ের শতাধিক কর্মকর্তা ও শতাধিক পুলিশসহ একাধিক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য।
এসময় ৪ টি উচু-চিমনি ও একাধিক ক্লিন বা চুল্লি ভাঙ্গা কার্যক্রমের পাশাপাশি ইট সরিয়ে নেয়া হয়।প্রথমে খর্ণিয়া ব্রিজ সংলগ্ন ‘নুরজাহান ব্রিকস এর উচু চিমনি ও ক্লিন বা চুল্লি ভাঙ্গা হয়। এরপর কে.পি.বি ব্রিকস এস.বি  ব্রিকস, কে.বি-২ ব্রিকস সেতু-১ ব্রিকস ও এফ.এম.বি ব্রিকস কেবি-২ ব্রিকস এর মধ্যে থাকা অবৈধ ব্যাবস্হাপনা উচ্ছেদ করা হয় ।
এ ব্যাপারে খুলনা জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেন, হাইকোর্টের আদেশে ৬ টি ভাটার চিপনি ও চুলল্লি এবং ৮ টি ভাটার অবৈধ্য ব্যাবস্হাপনা উচ্ছেদসহ মোট ১৪ টি ইটভাটার সকল প্রকার কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। অন্যান্য অবৈধ্য ভাটা উচ্ছেদ হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, পর্যায়ক্রমে সকল অবৈধ্য ভাটা অপসারণ করা হবে।
 ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরীফ আসিফ রহমান বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে  আমরা ইতোমধ্যে ওই ১৪টি ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছি। তাছাড়া সি.এস রেকর্ড অনুযায়ী নদীর জমি চিহ্নিত করে তা উদ্ধার করতে আজ উচ্ছেদ অভিযান চলেছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)