কালিগঞ্জে বিজয় মেলায় রক্তচোষা লটারী বন্ধের নির্দেশ জেলা প্রশাসকের
নিজস্ব প্রতিবেদক :
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা সদরের বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ আব্দুস সামাদ স্মৃতি সংঘের মাঠে বিজয় মেলা উপলক্ষে রক্তচোষা লটারী “ওঠাও বাচ্চা” বন্ধের নির্দেশ দেওয়ার পরও মানছেন না লটারী পরিচালক ও মেলা আয়োজন কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় জনসাধারণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
কালিগঞ্জর একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, গত ৩০ ডিসেম্বর রাত সাতটায় কালিগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাষ্টার নরীম আলী মুন্সির সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এনামুল হোসেন ছোট এর সঞ্চলনায় এক মাস সাত দিনব্যাপি বিজয় মেলার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী ডাঃ আ.ফ.ম রুহুল হক। জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদনের প্রেক্ষিতে গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর এক মাস সাত দিনের এ মেলার চালানোর অনুমতি দেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নেজারত শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট (এনডিসি) বাপ্পি দত্ত রণি।
৩০ ডিসেম্বর থেকে অনুমোদন পাওয়া মেলায় যাত্রাপালায় নগ্ন নৃত্য, লটারী, জুয়া ও হাউজি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অথচ কালিগঞ্জসহ সাতক্ষীরার ক্ষমতাসীন দল ও তার অঙ্গ সংগঠণের নেতা, কয়েকজন বড় মাপের জনপ্রতিনিধি কালিগঞ্জের তিনটি সাংবাদিক প্রতিষ্ঠান, সাতক্ষীরার চারটি সাংবাদিক প্রতিষ্ঠান, ছোট -বড় খুচরা অন লাইন সাংবাদিক ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই প্রতিদিন এ রক্তচোষা জুয়া চলে আসছিল।
গত এক সপ্তাহের পুরষ্কার হিসেবে প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে চার লাখ টাকার পুরষ্কার দেওয়া হতো। অথচ প্রতিদিন ২২ থেকে ২৫ লাখ টাকার টিকিট বিক্রি হতো। সেক্ষেত্রে এক মাস সাত দিন মেলা চললে প্রথম ৮ দিনের ১০ টাকা টিকিট ও পরবর্তী একমাসের বিক্রিত টিকিট মূল্য থেকে পুরষ্কার মূল্য, ইজিবাইক, প্রচারকারি, ডেকরেটরসহ আনুষঙ্গিক খরচ বাদ দিয়ে মোট ৬০ কোটি টাকার বাণিজ্য করার মিশন ছিল আয়োজক কমিটির।
এ লটারীর প্রলোভনে পড়ে মটর সাইকেল পাওয়ার আশায় টিকিট কিনতে যেয়ে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ ক্রমশঃ নিঃস্ব হয়ে পড়ছিল। এ নিয়ে জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনকে অবহিত করলে লটারী বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে রবিবার সাংবাদিকদের জানানো হয়। । সোমবার বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
কালিগঞ্জ বাজারগ্রাম রহিমাপুরের ওমর ফারুক, নাজিমগঞ্জ বাজারের আবু নাছিম, পূর্ব নারায়ণপুরের সদানন্দ বিশ্বাস, মৌতলার আসগার আলীসহ কয়েকজন জানান, প্রতিদিনের ন্যয় সোমবার সকাল থেকে লটারী বিক্রির জন্য মাইকিং বন্ধ ছিল। তবে ফুলতলা মোড়, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ওয়াহেদুজ্জামানের বাড়ির মোড়, বাসটার্মিনাল, মৌতলা বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে এক বা একাধিক ব্যক্তি গোপানে লটারী বিক্রি করছিলেন। দুপুর একটা বাজতে না বাজতেই আবারো ইজিবাইকে করে মাইকিং শুরু হয়।
জানতে চাইলে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রচারকারি জানান, লটারীর ব্যবস্থাপক এ মেলায় দেড় মাস খেলা চালাবেন এমন আশা নিয়ে প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করার নামে মোটা অংকের টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এ ছাড়া উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের বিভিন্ন সাংবাদিক প্রতিষ্ঠান, অন লাইনের সাংবাদিক ও ক্ষমতাসীন দলের মূল সংগঠণ ও অঙ্গ সংগঠণের কয়েকজন নেতা কর্মীদের পিছনে অনেক টাকা বিনিয়োগ করেছেন।
হঠাৎ করে রবিবার রাতে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লটারী বন্ধ করার জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ আয়োজক কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে সোমবার সকাল থেকে মাইক বন্ধ রেখে কৌশলে লটারী বিক্রি করা হচ্ছিল। লটারী বন্ধ করতে হলে বিনিয়োগকৃত টাকা ফেরৎ না পাবেন না এমন আশঙ্কা দৃঢ় হলে দুপুর একটা থেকে আবারো ইজিবাইকে মাইকিং করে লটারী বিক্রি শুরু করা হয়েছে। বিকেল তিনটা পর্যন্ত এ নিয়ে কোন আপত্তিকর ঘটনা ঘটেনি।
এ ব্যাপারে লটারী পরিচালক মানিক শিকদার সোমবার দুপুর আড়াইটায় সাংবাদিকদের জানান, লটারী বন্ধের নির্দেশ পেয়েছেন তিনি। তবে লটারী চলছে এটাও বলা যাবে না আবার চলছে না এটাও বলা যাবে না। যাতে লটারী চালানো যায় সেজন্য সবধরণের চেষ্টা চলছে।
সামাদ স্মৃতি সংঘের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হামিদ বলেন, লটারীর প্রচার হচ্ছে এটা তার জানা নেই।
কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রহিমা সুলতানা বুশরা জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে রবিবার রাতেই লটারী বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপরও লটারির টিকিট মাইকিং করে বিক্রি করা হচ্ছে জানতে পারলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বাপারে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোঃ হুমায়ুন কবীর সোমবার দুপুর দুটোর দিকে সাংবাদিকদের জানান, গত রাতে মেলায় লটারী বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।