শ্যামনগরে হিন্দু স¤প্রদায়ের জমি জবরদখল, জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন
নিজস্ব প্রতিবেদক;
সাতক্ষীরার যুগ্ম জেলা জজ ও মহামান্য হাইকোর্টে বয়নামা জাল প্রমাণিত হওয়ার পরও কৌশলে বর্তমান জরিপে রেকর্ড করে নেওয়ায় শ্যামনগর উপজেলার বয়ারসিং গ্রামের ১০টি হিন্দু পরিবারের বসতবাড়ি, দুর্গামন্দির, কালিমন্দির, গাছগাছালিসহ ৮১ বিঘা জমি জবরদখলের চেষ্টা চালানো হয়েছে। লুটপাট ও ভাঙচুরে বাধা দেওয়ায় চারজন নারীসহ নয়জনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। মামলার ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও মূল হোতারা রয়ে গেছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
গ্রেপ্তার না হওয়া আসামীদের আইনে সোপর্দ করে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সোমবার সকাল ১০টায় নবাকী- বুড়িগোয়ালিনি সড়কে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। মানববন্ধনে বয়ারসিংহ গ্রামের শতাধিক হিন্দু নারী ও পুরুষ অংশ নেন।
মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন পবিত্র বিশ্বাস, রাজ্যেশ্বর সরকার, রাজীব বিশ্বাস, সুকুমার বিশ্বাস, তপোবন বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাম রঞ্জন বিম্বাস, সতীবালা বিশ্বাস, আরতী বালা বিম্বাস, বিনোদিনি বিশ্বাস, রেখা বিশ্বাস, খোকন বিশ্বাস, কাজল বিশ্বাস ও গোপাল বিশ্বাস।
বক্তারা বলেন, বয়ারসিং গ্রামের বাউল বিশ্বাসের তালবাড়িয়া মৌজার সাবেক ৬৫৪, ৬৫৫ ও ৯৫৯ দাগের ২৯ একর জমি ভূলবশতঃ এসএ রেকর্ডে সরকারি ১/১ খতিয়ানভুক্ত হয়। ওই জমিতে বাউল বিশ্বাসের ১০ জন ওয়ারেশ বসবাস করে আসছে। সেখানে রয়েছে একটি দুর্গা মন্দির, কালি মন্দিরসহ অসংখ্য গাছগাছালি। এসএ রেকর্ড সংশোধনের জন্য বাউল বিশ্বাসের ওয়ারেশ ধীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসসহ ৬জন সাতক্ষীরা যুগ্ম জজ দ্বিতীয় আদালতে দেঃ ২৩/১১ নং মামলা দায়ের করেন। রাষ্ট্রকে বিবাদী করা হয়।
১৯৫১ সালে উপজেলার কাশিমাড়ি গ্রামের খালেক গাজী ওই জমি নিলাম কিনেছেন দাবি করে মামলায় পক্ষভুক্ত হয় তার ১১জন ওয়ারেশ ও শরীক। ২০১৪ সালের ৫ মে যুগ্ম জেলা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক রিপতি কুমার বিশ্বাস খালিক গাজীর নিলামের কাগজ জাল বলে রায় দেন। ওই আদেশের বিরুদ্ধে খালেক গাজীর ওয়ারেশ সামছুর রহমান গাজী ও তার শরীকরা মহামান্য হাইকোর্টে গেলে ২০১৫ সালের ৪ আগষ্ট আদালত আপিল খারিজ করে দেন। কিন্তু জাল নিলামের কাগজপত্র ব্যবহার করে আর্থিক প্রভাব খাটিয়ে বর্তমান মাঠ জরিপে রেকর্ড করে নেন খালেক গাজীর ওয়ারেশরা।
এই রেকর্ড মূলে সামছুর গাজীর জামাতা আওয়ামী লীগ নেতা গাবুরার জিএম শফিউল আযম লেনিনের মদতে বাউল বিশ্বাসের ওয়ারেশদের দখলীয় জমি জবরদখল করার চেষ্টা করে আসিছল কাশিমাড়ির সামছুর গাজী, রাজ্জাক গাজী, সেলিম মাহমুদ, আশিকুর রহমান, ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বয়ারসিংহ গ্রামের মুছা ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৮ ডিসেম্বর পবিত্র বিশ্বাসসহ ১০জনের বসতঘর, রান্না ঘর, গোয়ালঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে সামছুর রহমানের ওয়ারেশসহ কয়েকজন। জবরদখল, ভাঙচুর ও লুটপাটে অংশ নেয় একই গ্রামের সন্ত্রাসী মুছা ও তার বাহিনীর সদস্যর।
ভাঙচুর ও লুটপাটে বাধা দেওয়ায় কাজল রানী বিশ্বাস, খোকন বিশ্বাস ও সুষমা বিশ্বাসসহ নয়জন জখম হয়। প্রথমাক্ত তিনজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপপাতালে বর্তি করা হয়। এ ঘটনায় পবিত্র বিশ্বাস বাদি হয়ে পরদিন থানায় ১৮ জনের নামস উলেখ করে মামলা করেন। পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। অপর তিন আসামী আদালতে হাজির হয়ে জামিন পেলেও সোনা গাজী, সিরাজুল গাজী ও আলী গাজীসহ মূল আসামীরা গত ১৫ দিনেও গ্রেপ্তার হয়নি। তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক সাহাবুর রহমান জানান, পলাতক থাকায় তাদেরকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হচ্ছে না।