উপকূলে আধা নিবিড় পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষে সাফল্য
নিজস্ব প্রতিনিধি:
উপকূলীয় এলাকায় চিংড়ি চাষে সম্ভাবনা দেখাচ্ছে আধা নিবিড় পদ্ধতির চিংড়ি চাষ। সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে চলতি বছর আধা-নিবিড় (সেমি ইনটেনসিভ) পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ি চাষ করে সফল হয়েছেন ওই এলাকার চিংড়ি চাষীরা। সাধারণ পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করে যে উৎপাদন হয়, তার চেয়ে প্রায় ৩০ গুণ বেশি চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে আধা নিবিড় পদ্ধতিতে বলে জানান মৎস্য চাষীরা।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, জেলার উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের ২৫ জন চিংড়ি চাষি আধা নিবিড় পদ্ধতিতে চাষ করে সফল হয়েছেন। কমিউনিটি বেজড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ফিশারিজ অ্যান্ড একুয়াকালচার ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ, মৎস্য অধিদপ্তর, জাতিসংঘের খাদ্য এবং কৃষি সংস্থার যৌথ এক প্রকল্পের মাধ্যমে উৎসাহিত হয়ে এ চাষে মনোনিবেশ করেন তারা। এ পদ্ধতিতে একটি এক বিঘা মৎস্য ঘেরে প্রায় ১২ হাজার চিংড়ি পোনা ছাড়া যায়। যা প্রায় ৪ মাসের মাথায় বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে। গত বছর থেকে এই পদ্ধতিতে উপকূলের কিছু চাষি চিংড়ি চাষ শুরু করেছেন। যা উৎপাদিত হয়েছে পূর্বের তুলনায় দ্বিগুন। সনাতন পদ্ধতিতে যেখানে হেক্টরপ্রতি ৩০০-৫০০ কেজি চিংড়ি উৎপাদন হতো, সেখানে আধা নিবিড় পদ্ধতিতে উৎপাদন পাঁচ হাজার কেজি ছাড়িয়ে যায়।
শ্যামনগরের আধা নিবিড় চিংড়ি চাষি মিজানুর রহমান জানান, প্রাথমিক ভাবে তিনি এ চাষ শুরু করেন। প্রথমে ভয় কাজ করলেও পরবর্তীতে তা কেটে গেছে। পূর্বের চাষ পদ্ধতির থেকে তিনি বেশি উৎপাদন পেয়েছেন। যা উৎপাদন হয়েছে রীতিমত স্থানীয়দের মাঝে সাড়া পড়েছে বলে জানান তিনি।
দেবহাটা এলাকার চিংড়ি চাষি মাহমুদুল হক লাভলু বিশ্বাস জানান, তাদের এ সাফল্য দেখে এ অঞ্চলের চিংড়ি চাষীরা অল্প জমিতে অধিক উৎপাদনের আশায় আধা নিবিড় পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে শ্যামনগর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তুষার মজুমদার জানিয়েছেন, আধা নিবিড় পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করলে সব খরচ বাদ দিয়ে বছরে চাষিরা দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা লাভ করতে পারবেন বিঘাপ্রতি।
এ প্রসঙ্গে খুলনা বিভাগীয় মৎস্য কর্মকর্তা (সহকারী পরিচালক) রাজ কুমার বিশ্বাস বলেন, বাগদা চাষে এখন প্রধান সমস্যা হচ্ছে বাগদার পোনা টিকিয়ে রাখা। তবে আধা নিবিড় পদ্ধতিতে সঠিক নার্সিংয়ের মাধ্যমে পোনার মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব। গতানুগতিক পদ্ধতি পরিহার করে উপকূলের চিংড়ি চাষীরা আধা নিবিড় পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষে অনেক বেশি লাভবান হওয়ায় চিংড়ি চাষে নতুন এক সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।