গুজরাটে সেতু ধসে নিহত বেড়ে ১৪১, এখনও চলছে উদ্ধারকাজ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

ভারতের গুজরাটে ব্রিটিশ আমলের ঐতিহাসিক ঝুলন্ত সেতু ধসে নিহত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪১ জনে। এ ঘটনায় আরো অনেকে গুরুতর আহত হওয়ায় নিহত বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।

রোববার (৩০ অক্টোবর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় মোরবি জেলায় মাচ্চু নদীর উপর ওই ঝুলন্ত সেতুটি কয়েকশ মানুষ নিয়ে হুড়মুড়িয়ে ধসে পড়ে।

সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, সে সময় সেতুতে থাকা অনেকেই ছিটকে নদীতে পড়ে যান। সোশাল মিডিয়ায় আসা ভিডিওতে ভেঙে পড়া সেতু থেকে মানুষকে ঝুলে থাকতেও দেখা যায়।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পর থেকে ১৭৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। আরো অনেকে নিখেঁজ রয়েছেন, তাদের সন্ধানে নদীতে তল্লাশি চলছে।

আহমেদাবাদ থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল ১৯ শতকে, ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সময়। স্থানীয়দের কাছে জুল্টো পুল নামে পরিচিত ২৩০ মিটার দীর্ঘ ওই সেতুতে অনেকেই বেড়াতে যান।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, সাত মাস বন্ধ রেখে সংস্কার কাজ সেরে মাত্র চার দিন আগেই গুজরাটের নববর্ষের দিন খুলে দেওয়া হয়েছিল সেতুটি। কেন সেটি ভেঙে পড়ল তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে গুজরাট প্রশাসন।

সেতু ধসের খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে যান প্রশাসনের কর্মকর্তারা; শুরু হয় উদ্ধার কাজ। রাজ্য সরকারের শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী ব্রিজেশ মের্জা বলেন, “সংস্কারের কাজ মাত্র গত সপ্তাহেই শেষ হল। আমরাও স্তম্ভিত। বিষয়টা আমরা অবশ্যই দেখব।”

এদিকে স্থানীয় পৌর কর্তৃপক্ষের প্রধান সন্দ্বীপসিং জালা বলেছেন, সংস্কার শেষে সেতুটি খুলে দেওয়ার আগে ঠিকাদার প্রশাসনের অনুমতি নেয়নি।

গুজরাটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্ষ সঙ্ঘভী বলেছেন, এ ঘটনায় একটি ফৌজদারি মামলা করা হয়েছে। পাশাপাশি পাঁচ সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি করা হয়েছে তদন্তের জন্য।

দুর্ঘটনার সময় সেতুর ওপর পাঁচ শতাধিক মানুষ ছিল বলে জানানো হয়েছে কয়েকটি খবরে। সে সময় সেতুর উপরে অনেকে ছট পূজা করছিলেন। বহু নারী ও শিশু ছিল তাদের মধ্যে।

প্রতীক ভাসাভা নামের একজন স্থানীয় একটি টেলিভিশনকে বলেন, দুর্ঘটনার সময় তিনি সেতুর উপরে ছিলেন। পানিতে পড়ে যাওয়ার পর সাঁতরে তীরে ওঠেন। কয়েকটি শিশুকেও তিনি নদীতে পড়ে যেতে দেখেছেন।

“আমি তাদের কয়েকজনকে আমার সাথে টেনে আনতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তারা ডুবে গেছে কিংবা ভেসে গেছে।”

সুকরাম নামের আরেকজন বলেছেন, অনেক মানুষের চাপে সেতুটি যখন ভেঙে পড়ে, তখন একজন আরেকজনের উপরে গিয়ে পড়ে।

সোশাল মিডিয়ায় আসা কিছু ভিডিওতে দুর্ঘটনার সময়ের বিশৃঙ্খলার চিত্রও এসেছে। সেখানে দেখা যায় ধসে পড়ার আগে সেতুটি দুলতে শুরু করেছিল। যে কেবলের ওপর সেতুটি ঝুলছিল, সেগুলো ছিঁড়তে শুরু করলে অন্ধকার নদীতে ভেঙে পড়ে সেতুটি। তখনও অর্ধেক ঝুলে থাকা সেতুর উপরের দিকে ওঠার চেষ্টা করছিলেন অনেকে।

গুজরাট ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিজের রাজ্য। রোববার ওই দুর্ঘটনার সময় তিনি গুজরাটেই ছিলেন। মর্মান্তিক ওই ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন তিনি।

নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য দুই লাখ রুপি এবং আহতদের জন্য ৫০ হাজার রুপি সহায়তার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে ভারতের কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)