জেলা পরিষদ নির্বাচন : পদহীন বিদ্রোহীদের নিয়ে বিপাকে আওয়ামী লীগ

অনলাইন ডেস্ক :

জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের পদহীন নেতা এবং আগের বিদ্রোহীদের নিয়ে বিপাকে আওয়ামী লীগ। ২৭ জেলায় চেয়ারম্যান পদে দলটির সাবেক নেতা এবং বর্তমানে পদহীন এমন বিদ্রোহীরা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া বিগত নির্বাচনে যারা বিদ্রোহী হয়ে বিজয়ী হয়েছিলেন, তাদের অনেকেই এবারও নির্বাচনের মাঠে আছেন। দলীয় পদ না থাকায় এসব প্রার্থীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ কম।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ যুগান্তরকে বলেন, কিছু লোক থাকবেই, যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবে না। তবে আমরা কিন্তু গতবারের বিদ্রোহীদের এবার দলীয় মনোনয়ন দেইনি। কয়েকজন বিজয়ীও হয়েছিলেন, তাদেরও বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে তাদের বিরুদ্ধে আর কী ব্যবস্থা নেব? এছাড়া যারা দলের পদে নেই তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে আমরা এবার যেমন তাদের মনোনয়ন দেইনি। এবার যারা বিদ্রোহী থাকবে তাদের আগামীতেও দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে না। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদেও তাদের রাখা হবে না বলেও জানান তিনি।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে ইতোমধ্যেই ২৭ জন চেয়ারম্যানসহ মোট ১১৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৬৮ জন সাধারণ সদস্য এবং ১৯ জন সংরক্ষিত সদস্য রয়েছেন। অন্যদিকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর চেয়ারম্যান পদ থেকে ৩২ জন, সংরক্ষিত সদস্যপদ থেকে ৬৯ জন ও সাধারণ সদস্য পদ থেকে ৩২৮ জন প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। শেষ পর্যন্ত ৩৪ জেলায় চেয়ারম্যান পদে ৯০ জন এবং সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ২২১৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

জানা গেছে, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় চেয়ারম্যান পদে ১৯টি জেলা পরিষদে একক প্রার্থী ছিলেন। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় সেটা বেড়ে ২২ জনে দাঁড়ায়। সর্বশেষ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার শেষে এ সংখ্যা আরও বেড়ে দাঁড়াল ২৭ জনে। তারা ভোট ছাড়াই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছে। তিন পার্বত্য জেলা বাদে দেশের ৬১টি জেলা পরিষদের বাকি পদগুলোতে আগামী ১৭ অক্টোবর ভোটগ্রহণ হবে।

এর আগে ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত দেশে প্রথমবারের মতো জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ২১ জন, সাধারণ সদস্য ১৬৬ জন ও সংরক্ষিত সদস্য ৬৯ জন বিনাভোটে জয়ী হয়েছিলেন। সে বছর তিনটি পদে মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন ৩৯৩৮ জন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২৭ জেলায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ছাড়া বাদবাকি ৩৪ জেলা পরিষদে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে আইনি জটিলতায় নোয়াখালী ও চাঁদপুর জেলায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। বাকি ৩২ জেলার মধ্যে শেরপুর, সুনামগঞ্জ, রাজবাড়ী, রংপুর, কক্সবাজার থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ কেন্দ্রে পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে। বাকি জেলাগুলোতে আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বিদ্রোহী প্রার্থীদের এখনো বোঝানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

জানা গেছে, বিগত জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হয়ে ১১ জন জয়ী হয়েছিলেন। এর মধ্যে সাতক্ষীরায় গতবারের বিদ্রোহীকে এবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। বাকিদের মধ্যে পিরোজপুর ছাড়া প্রায় সবাই এবারও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। ফলে এবারও বেশ কয়েকটি জেলায় বিদ্রোহীদের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দলের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা হলেন-ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাবেক চেয়ারম্যান (বিদ্রোহী) শফিকুল আলম। মাগুরায় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জিয়াদ মিয়া ও সাবেক যুবলীগ নেতা রাজন। সাতক্ষীরায় আওয়ামী লীগ সমর্থক খলিলুল্লাহ ঝড়ু, ময়মনসিংহে সৈনিক লীগের হামিদুল ইসলাম, নেত্রকোনায় আওয়ামী লীগের নেত্রী জুথি। শেরপুরে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবীর রোমান, সাবেক সহসভাপতি জাকারিয়া বিষু, বগুড়ায় আওয়ামী লীগ সমর্থক আবদুল মান্নান, রাজশাহীতে জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক আক্তারুজ্জামান, দিনাজপুরে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম এবং যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ চৌধুরী।

নরসিংদীতে আ.লীগের বিদ্রোহী মনির হোসেন ভূঁইয়া, গাজীপুরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী এসএম মোকসেদ আলম, ফরিদপুরে স্বতন্ত্র সাহাদাত হোসেন, রাজবাড়ী জেলায় পাংশা পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি দীপক কুমার কুন্ডু, রংপুরে বিদ্রোহী প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মোছাদ্দেক হোসেন, কক্সবাজার জেলায় জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নুরুল আবছার, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি শাহিনুল হক মার্শাল। কিশোরগঞ্জ জেলায় যুবলীগের আশিক জামাল এলিন ও আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের হামিদুল আলম চৌধুরী, চুয়াডাঙ্গায় যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক আরিফুল আলম রঞ্জু, খুলনায় বিএমএ (খুলনা)-এর সভাপতি ডা. বাহারুল আলম ও আহমেদ দাড়া প্রমুখ।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের এক নেতা জানান, জেলা পরিষদ নির্বাচনটা অন্যান্য নির্বাচনের মতো এতটা জমজমাট হয় না। তবে দলগতভাবে আওয়ামী লীগ সব নির্বাচনকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করে। তিনি বলেন, বিগত দিনে বিদ্রোহীদের সতর্ক করা হয়েছে। এবারও বিদ্রোহীদের সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা যোগাযোগ করছেন। তবে কিছু কারণে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়া যাচ্ছে না। ফলে এখন যারা মাঠে রয়েছেন তাদের প্রায় সবাই শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকবেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)