ডলার কেনাবেচার অনুমতি চায় ২৩ ব্যাংকের ৬৬৬ শাখা

অনলাইন ডেস্ক :

ডলার কেনাবেচার অনুমতি চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করেছে ২৩ ব্যাংকের ৬৬৬টি শাখা। ব্যাংকের ভাষায় যেসব শাখায় বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেন হয় সেগুলোকে অথরাইজড ডিলার (এডি) শাখা বলা হয়। ডলার সংকট মোকাবিলা ও মানি চেঞ্জারের দৌরাত্ম্য কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক বরাবর এই আবেদন জানিয়েছে ব্যাংকগুলো। বিষয়টি যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, এডি শাখার অনুমোদন পেতে আবেদন করেছে ২৩ ব্যাংকের ৬৬৬টি শাখা। পর্যালোচনা শেষে এসব শাখার অনুমোদন দেওয়া হবে।

যদিও দেশের বেশির ভাগ ব্যাংকেরই এডি শাখা রয়েছে। তবে সেই শাখার সংখ্যা সীমিত। বর্তমান ডলার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সম্প্রতি ব্যাংকগুলোর কাছে এলাকাভিত্তিক তালিকা চায় বাংলাদেশ ব্যাংক। নতুন এডি শাখার আবেদনের শেষ সময় ছিল ১৭ আগস্ট। সেই নির্দেশনার ভিত্তিতে ২৩টি ব্যাংক আবেদন করেছে বলে জানা গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, বর্তমানে ডলার কেনাবেচার জন্য শুধু ২০০ অনুমোদিত ডিলার বা এডি শাখা ও ২৩৫টি মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের অনুমতি রয়েছে। অবৈধ মানি চেঞ্জারের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। ফলে নগদ ডলার কেনাবেচার জন্য মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানের ওপরই বেশি নির্ভর করতে হয় প্রবাসী বাংলাদেশি, বিদেশি পর্যটকসহ সাধারণ গ্রাহকদের। এছাড়া ব্যাংক থেকে ডলার কিনতে এনডোর্সমেন্ট বাধ্যতামূলক হলেও খোলাবাজারে সেই বাধ্যবাধকতা নেই। ফলে মানি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো নগদ ডলারের বাজারে একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে রেখেছে। বর্তমানে আন্তঃব্যাংকের সঙ্গে খোলাবাজারে ডলারের দামের পার্থক্য প্রায় ১৫ টাকা।

আর ব্যাংকের চেয়ে খোলাবাজার রেট অনেক বেশি হওয়ায় হুন্ডিতে টাকা পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পর্যবেক্ষণেও ডিজিটাল হুন্ডি চাঙা হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এছাড়া বিমানবন্দর দিয়েও সরাসরি ডলার পাচার করা হচ্ছে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাই খোলাবাজারের ডলারের লেনদেন ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যাংকের শাখায় বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার কিনতে খরচ করতে হচ্ছে ৯৫ টাকা। অর্থাৎ বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারি আমদানি বিল মেটাতে এই দরে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে। নিয়ম অনুযায়ী এটাই ডলারের আনুষ্ঠানিক দর।

এদিকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলার সংরক্ষণ করে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করার প্রমাণ পাওয়ায় ৮ আগস্ট দেশি-বিদেশি ৬টি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধানকে অপসারণ করতে নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক এবং বিদেশি খাতের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। এসব ব্যাংকের এমডিকেও শোকজ করা হয়েছে।

এছাড়া ডলারের কারসাজি রোধে খোলাবাজার ও এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোয় ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করছে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের এই নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। কারসাজির অপরাধে কিছু মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত করাসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলা হয়েছে। এরই অংশ হিসাবে পাঁচ মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি ৪৫টিকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।

শোকজের যথাযথ উত্তর দিতে পারলে এসব মানি এক্সচেঞ্জের লাইসেন্সের বিষয়ে বিবেচনা করা হবে। অভিযানে আরও ৯টি প্রতিষ্ঠানকে সিলগালা করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স না নিয়ে এতদিন ব্যবসা করে আসছিল।

ওদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য অনেক বেড়ে যায়। ফলে কয়েক মাস ধরে আমদানি ব্যয়ে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ ঠিক রাখতে গিয়ে প্রচুর ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যার কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গেছে। গত বছর আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করা রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)