রাত পোহালেই স্বপ্ন ছোঁয়ার মাহেন্দ্রক্ষণ

নিউজ ডেস্ক:

একটা সেতু। একটা স্বপ্ন; আর সেই স্বপ্নের নাম পদ্মাসেতু। তবে এখন আর সেটি স্বপ্ন নয়, বাস্তব। এ স্বপ্ন দেখা শুরু হয়েছিল প্রায় দুই যুগ আগে। ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর এর নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর ৮ বছরের মাথায় স্বপ্ন সত্যি হল। এবার অপেক্ষার পালা শেষ, এগিয়ে চলার পালা শুরু। দেশের ২১ জেলার মানুষ গুণছেন সেই নবযুগের মহেন্দ্রক্ষণ।

আগামীকাল (শনিবার, ২৫ জুন) উদ্বোধন হবে স্বপ্নজয়ের পদ্মাসেতুর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুর মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে দুই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেতুর উদ্বোধন করবেন। গাড়ি চলাচলের জন্য সেতু উন্মুক্ত হবে রোববার ভোর ৬টায়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ঘিরে পদ্মার দুই পাড়ে এখন সাজ সাজ রব। মুন্সীগঞ্জের মাওয়া, শরীয়তপুরের জাজিরা ও মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা এলাকা ব্যানার-ফেস্টুনে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। সড়কের দুই পাশে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলো নিয়ন আলোয় আলোকিত হয়েছে। এসব এলাকার মানুষের মধ্যেও এক রকম উৎসবের আমেজ বয়ে যাচ্ছে। তারা গর্বিত তাদের এলাকায় দেশের টাকায় নির্মিত সবচেয়ে বড় অবকাঠামো নির্মাণ হওয়ায়।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে পদ্মাসেতুর উদ্বোধন করবেন, এ জন্য দুই পাড়ে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বলা যায়, পুরো এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখা হয়েছে। এনএসআই, এসবি, ডিবি, র‌্যাব-পুলিশসহ সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সদা তৎপর রয়েছেন।

পদ্মাসেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ঘিরে ঢেলে সাজানো হয়েছে ওই এলাকাকে। মাওয়া প্রান্তে ঢাকা থেকে যাওয়ার পথে বুড়িগঙ্গা দ্বিতীয় সেতু থেকেই রাস্তার দুই ধার সাজানো হয়েছে। বড় বড় ব্যানার ও সাইনবোর্ড শোভা পাচ্ছে। আর ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ে এক্সপ্রেসওয়ের একেবারে শুরু থেকে মাওয়া ঘাট পর্যন্ত রাস্তার দুই ধারে ওয়াল এবং আশপাশের বড় বড় বেশ কিছু ভবনে আলোকসজ্জা করা হয়েছে।

এদিকে মাওয়া প্রান্তে পদ্মাসেতুর একেবারে গোড়ায় স্থাপন করা হয়েছে একটি বড় মঞ্চ ও প্যান্ডেল। পুরো প্যান্ডেলটি ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। র‌্যাবের মহাপরিচালক  সভাস্থলটিও পরিদর্শন করেছেন।

জাজিরা প্রান্তে মূল জনসভাস্থলটিকে ঢেলে সাজানো হয়েছে। এখানে মূল যে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে সেটি করা হয়েছে পদ্মাসেতুর স্প্যানের আদলে। শনিবার এ মঞ্চে দাঁড়িয়েই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তৃতা দেবেন। আশা করা হচ্ছে, এখানে দশ লাখেরও বেশি মানুষের সমাগম ঘটবে। এ বিশাল সংখ্যক মানুষের আগমন উপলক্ষে পুরো সভাস্থল প্রস্তুত করা হয়েছে। সভাস্থলে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে মানুষকে বসতে দেওয়া হবে। এজন্য বাঁশ দিয়ে আলাদা করে ঘিরে দেওয়া হয়েছে।

পদ্মাসেতুর (মূল সেতু) দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। দুই প্রান্তের উড়ালপথ (ভায়াডাক্ট) ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। সব মিলিয়ে সেতুর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। পদ্মাসেতু প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। পদ্মাসেতু প্রকল্পের টাকায় সেতুতে রেল চলাচলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এখনও রেললাইন বসানো শুরু হয়নি।

দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলাকে সারাদেশের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করবে স্বপ্নের পদ্মাসেতু। এ সেতুর মাধ্যমে মোংলা বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের সঙ্গে রাজধানী এবং বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপিত হবে। চলাচল সহজ করার পাশাপাশি অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে পদ্মাসেতু।

সমীক্ষা অনুযায়ী, পদ্মাসেতু প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে ১ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধি পাবে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ।

২০০১ সালের ৪ জুলাই পদ্মাসেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সেতুর কাজ কয়েক বছর এগোয়নি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসার পর থেমে থাকা পদ্মাসেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০১২ সালে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিল করে। ২০১৩ সালের ৪ মে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর মূল সেতুর নির্মাণ ও নদী শাসন কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এরপর ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে বসানো হয় প্রথম স্প্যান। ২০০৭ সালে একনেকে পাস হওয়া পদ্মাসেতু প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। ২০১১ সালে ব্যয় বাড়িয়ে করা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে দ্বিতীয় দফা সংশোধনের পর ব্যয় দাঁড়ায় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। বর্তমানে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)