স্কুল-কলেজে পড়েননি, অভিনয় দিয়েই কিংবদন্তি শাবানা

নিউজ ডেস্ক:

বাড়ির সবার কাছে তিনি রত্না। দুরন্তপনায় নিজে মেতে থাকেন, মাতিয়ে রাখেন সবাইকে। বাবা-মা তাকে ভর্তি করান ঢাকার গেন্ডারিয়া হাই স্কুলে। কিন্তু রত্নার চঞ্চলা মন, পড়াশোনায় বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। মাত্র ৯ বছর বয়সেই তাই স্কুলের গণ্ডি ছেড়ে দেন তিনি।

পঞ্চাশ-ষাটের দশকের প্রেক্ষাপটে তার গল্পটাও হতে পারত অন্যসব মেয়ের মতো। পড়াশোনায় যেহেতু ইতি, সুতরাং কিশোর বয়সে বিয়ে। কিন্তু তার জন্য বিধাতা রেখেছিলেন আকাশসম সাফল্যের পরিকল্পনা। সেটাই ধীরে ধীরে ফলে গেল।

স্কুল-কলেজের গণ্ডি না পেরিয়েও জীবনে বিস্ময়কর সাফল্য পেয়েছেন সেই রত্না। যাকে গোটা বাংলাদেশের মানুষ শাবানা নামে চেনে, ভালোবাসে। আজ ১৫ জুন কিংবদন্তি এই অভিনেত্রীর জন্মদিন। বিশেষ দিনটিতে তার প্রতি শ্রদ্ধা।

শাবানার আসল নাম আফরোজা সুলতানা রত্না। চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ডাবুয়া গ্রামে তার জন্ম। তবে বেড়ে ওঠা ঢাকায়। ১৯৬২ সালে মাত্র ১০ বছর বয়সে শিশুশিল্পী হিসেবে সিনেমায় আত্মপ্রকাশ করেন শাবানা। সেই সিনেমার নাম ছিল ‘নতুন সুর’। তখনও তার শাবানা নামটি আসেনি। রত্না নামেই অভিনয় করতেন।

shabana
সিনেমার দৃশ্যে শাবানা

কিংবদন্তি নির্মাতা এহতেশাম ছিলেন শাবানার চাচা। তার মাধ্যমেই সিনেমায় আসেন তিনি। ১৯৬৭ সালে এহতেশাম পরিচালিত উর্দু সিনেমা ‘চকোরী’তে কেন্দ্রীয় নারী চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান। এই সিনেমাতেই রত্না থেকে তার নাম শাবনা রাখেন এহতেশাম।

দীর্ঘ ঝলমলে ক্যারিয়ারে শাবানা অভিনয় করেছেন প্রায় ৩০০ সিনেমায়। এর মধ্যে রয়েছে বহু দর্শকনন্দিত, ব্যবসাসফল সিনেমা। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ‘ভাত দে’, ‘অবুঝ মন’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘দোস্ত দুশমন’, ‘সত্য মিথ্যা’, ‘রাঙা ভাবী’, ‘বাংলার নায়ক’, ‘ওরা এগারো জন’, ‘বিরোধ’, ‘আনাড়ি’, ‘সমাধান’, ‘জীবন সাথী’, ‘মাটির ঘর’, ‘লুটেরা’, ‘সখি তুমি কার’, ‘কেউ কারো নয়’, ‘পালাবি কোথায়’, ‘স্বামী কেন আসামি’, ‘দুঃসাহস’, ‘পুত্রবধূ’, ‘আক্রোশ’ ও ‘চাঁপা ডাঙার বউ’ ইত্যাদি।

শাবানাকে বলা হয় বাংলাদেশের সিনেমায় সবচেয়ে সফল ও জনপ্রিয় অভিনেত্রী। পরবর্তী প্রজন্মের নায়িকারা তাকেই আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করেন। অনবদ্য অভিনয়ে দর্শকদের যেমন মুগ্ধ করেছেন, তেমনি পুরস্কারের পাল্লাও ভারি করেছেন শাবানা। কেবল অভিনেত্রী হিসেবেই তিনি ৯ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়া প্রযোজক হিসেবে একবার এবং সর্বশেষ আজীবন সম্মাননাও পেয়েছেন এই নন্দিত অভিনেত্রী। জাতীয় পর্যায়ে এত বেশি পুরস্কার আর কোনো অভিনেত্রী অর্জন করতে পারেননি।

shabana
শাবানা

এছাড়াও তিনি প্রযোজক সমিতি পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার, আর্ট ফোরাম পুরস্কার, নাট্যসভা পুরস্কার, কামরুল হাসান পুরস্কার, নাট্য নিকেতন পুরস্কার, ললিতকলা একাডেমি পুরস্কার ও কথক একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

ব্যক্তিগত জীবনে শাবানা বিয়ে করেছেন ওয়াহিদ সাদিককে। তাদের বিয়ে হয় ১৯৭৩ সালে। তাদের ঘর আলো করে আসে দুটি কন্যা ও একটি পুত্র সন্তান। সংসার সামলেও সিনেমায় একের পর এক চমক দেখিয়েছেন শাবানা। কিন্তু ১৯৯৭ সালে অজানা কারণে আচমকা ঢালিউড থেকে বিদায় নেন শাবানা। এরপর ২০০০ সালে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে চলে যান। বর্তমানে সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করেন তিনি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)