কর্মসূচি পালনে বিরোধী দলকে ছাড় দেবে সরকার

নিউজ ডেস্ক:

রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে বিরোধী দলকে ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে মতামত দিয়েছে নিরাপত্তাসংক্রান্ত জাতীয় কমিটি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত উচ্চপর্যায়ের এই কমিটির বৈঠকে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখা এবং দেশের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় এমন মতামত দেওয়া হয়েছে।

সোমবার তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে উৎসবমুখর পরিবেশে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সেই সঙ্গে চালের কোনো মজুতদার ও নাশকতাকারীকে ছাড় দেওয়া হবে না জানিয়ে তাদের হুঁশিয়ার করেন।

বৈঠকে দেশের খাদ্য পরিস্থিতি, বাজারদর, মজুতদারি, ঢাকার যানজট, রোহিঙ্গা ইস্যু, যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন কমিটির সদস্যরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য উদ্ধৃত করে যুগান্তরকে জানিয়েছে-বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেছেন, গণতান্ত্রিক দেশে ভিন্ন মত থাকবে।

ভিন্ন পথ থাকবে। নিজেদের বক্তব্য রাখার, মিটিং-মিছিল করার অধিকার সবার আছে। এসব কর্মকাণ্ডে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। কারও বিরুদ্ধে কোনো হয়রানিমূলক পদক্ষেপ সরকার নেবে না।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। কিন্তু রাজনীতির নামে ২০১৩-১৪ সালের মতো জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর, সহিংসতা, নাশকতা হলে আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।

নাশকতাকারীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। রাজনীতি এবং নাশকতাকে এক করা যাবে না বলেও হুঁশিয়ার করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করা হবে। কোনো নাশকতাকারীকেই ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি জানান, করোনা পরিস্থিতি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে।

দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে অনেক পণ্য আমদানি করতে হবে। যেসব পণ্য আমদানি করা দরকার, সেগুলোর তালিকা তৈরি করতে হবে। এ সময় ভারত থেকে গম আমদানিতে সাম্প্রতিক বিধিনিষেধের বিষয় আলোচনায় উঠে আসে।

তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক দেশের ওপর নির্ভর না করে বিকল্প দেশের সন্ধান করতে হবে। কারও ওপর নির্ভর করে বসে থাকলে হবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। সারা পৃথিবী, বিশেষ করে ইউরোপ-আমেরিকার অবস্থা ত্রাহিত্রাহি। সেখানে মুদ্রাস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আমাদের দেশেও এর ধাক্কা এসে লেগেছে।

এ পরিপ্রেক্ষিতে দ্রব্যমূল্য সহনশীল রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে যত রকম কায়দাকানুন, কলাকৌশল অবলম্বন সম্ভব, সবই করা হচ্ছে। তিনি বলেন, যেসব পণ্য আমাদের আমদানি করতে হবে, সেগুলোর তালিকা দ্রুত করতে হবে।

কোন দেশে থেকে কোন পণ্য আমদানি করব, তা নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কথা বলতে হবে। ওইসব পণ্য বাংলাদেশে আসার পর আমদানিকারক, পাইকারি এবং খুচরা বাজারে যাতে মূল্যের খুব বেশি তারতম্য না হয়, এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে।

আমদানি করা পণ্য যাতে কেউ মজুত করতে না পারে, এ বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। কালোবাজারি ও অবৈধ মজুতদাররা কারসাজি করে যেন মূল্য বাড়াতে না পারে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

এ সময় দেশের একটি বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠীর এক কর্ণধারের নাম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের মানসম্পন্ন ওষুধ বিদেশে পাঠিয়ে দেয়। দেশের জন্য রাখে অপেক্ষাকৃত নিুমানের ওষুধ। তারা চালও মজুত করে। কত টাকা তাদের দরকার?

এ সময় তিনি চালের বাজার ঠিক রাখার জন্য চলমান অভিযান অব্যাহত রাখার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, চাল-তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে কেউ কোনো ধরনের কারসাজি করার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বৈঠকে যানজট নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোড়ে মোড়ে এখন যে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে, এর জন্য মানুষকে ভোগান্তি সহ্য করতে হচ্ছে। এ সময় প্রশ্ন উত্থাপন করে তিনি বলেন, ট্রাফিক পুলিশ কী করছে?

পুলিশের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি তাদের আরও তৎপর হওয়ার নির্দেশ দেন। শেখ হাসিনা বলেন, মেট্রোরেল এবং এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজ যেসব এলাকায় শেষ হয়েছে, এর নিচের রাস্তাগুলো ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে।

অব্যবহৃত রাস্তা বেশিদিন এভাবে ফেলে রাখা যাবে না। রাস্তা আরও চওড়া করার ব্যাপারেও বলেন তিনি। ভিআইপি সড়কে কীভাবে রিকশা চলাচল করে এবং ট্রাফিক পুলিশ কি তা দেখতে পায় না, এ প্রশ্নও করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু নিয়ে শুরু থেকেই ষড়যন্ত্র চলছিল। এখনো ষড়যন্ত্র চলছে। সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই দেশীয় অর্থায়নে এ সেতু হয়েছে।

দেশি-বিদেশি যেসব শক্তি দেশীয় অর্থায়নে পদ্মা সেতু চায়নি, তাদের অনেকেরই এখন গাত্রদাহ হচ্ছে। গাত্রদাহের বশবর্তী হয়ে যেন কেউ নাশকতা করতে না পারে, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব ইউনিটকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন তিনি।

সূত্র আরও জানায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জন্য একটি জাতীয় সমস্যা হলো রোহিঙ্গা ইস্যু। আমরা রোহিঙ্গাদের বলব মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিক। তাদের প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক এবং দ্বিপক্ষীয় সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে-এটাই বাংলাদেশ প্রত্যাশা করে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অগ্রণী ভূমিকা পালনের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।

সকাল ১০টায় শুরু হয়ে বৈঠক শেষ হয় দুপুর ১টায়। এ বৈঠকে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব, সেনাবাহিনী প্রধান, নৌবাহিনী প্রধান, বিমানবাহিনীর প্রতিনিধি, পররাষ্ট্র সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব, প্রতিরক্ষা সচিব, অর্থ বিভাগের সচিব, আইন সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসআই) মহাপরিচালক, ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্সের মহাপরিচালক, এসএসএফ মহাপরিচালক, র‌্যাবের মহাপরিচালক, এসবি প্রধান এবং বাংলাদেশ রাইফেলসের মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)