মুজিব শতবর্ষের ঘর নিয়ে ব্যবসা, বঞ্চিত প্রকৃত অসহায় ও ভূমিহীনরা

শ্যামনগর প্রতিনিধি:
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা গৃহহীনদের দেওয়া উপহারের যথাযথ সুবিধা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। যাচাই বাছাই তালিকা তৈরি থেকে শুরু করে ঘরের নির্মাণকাজ পর্যন্ত প্রত্যেক ধাপে চরম অনিয়ম লক্ষ্য করা গেছে। নিয়মানুযায়ী যারা ভূমিহীন, গৃহহীন ও যাদের ১ থেকে ১০ শতাংশ জমি আছে এই দুই ধরনের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষকে এই ঘর উপহার দেয়ার কথা থাকলেও বাস্তব প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ আলাদা। শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নে মুজিব শতবর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের তালিকায় অসংখ্য অনিয়ম দেখা গেছে। প্রকল্পের ডিজাইন ও নিয়ম কোনটাই মানা হয়নি।
কোন কোন জায়গা থেকে মোটা অংকের অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। প্রকৃত যারা এই ঘরের দাবিদার তারা অর্থের অভাবে পাচ্ছেন না ঘর অন্যদিকে সমাজের মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্তরাও এই ঘরের সুবিধা পাচ্ছেন। বুড়ি গোয়ালিনী ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার পরিদর্শনে মুজিব শতবর্ষের উপহারের ঘর পেয়েছেন মুনসুর সরদার। কদমতলা গ্রামের জনাব আলী সরদারের ছেলে তিনি। প্রায় এক বিঘা জায়গার মধ্যে দুই রুমের একটি ছাদ বিশিষ্ট পাকা বাড়ি তার। শুধু তাই নয় রান্নাঘর, গোয়ালঘর পাকা। তবে অধিকাংশ জায়গায় সরকারি খাস বলে জানান তিনি। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো মুনছুর সরদারের দুই ছেলের মধ্যে এক ছেলে ঢাকা ও অন্যজন থাকেন কুয়েত।
ঠিক মুনসুর সরদারের বিপরীতে আরো একটি ঘর পেয়েছেন আবুল হোসেন তার অবস্থাও নেহাত কম নয়। বর্তমান সরকার বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের বিপুলসংখ্যক ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল, অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসিত করছে। পুনর্বাসনের আওতায় আসা মানুষ যাতে উন্নত জীবনযাপন করতে পারে, সেজন্যও যথাযথ কর্মসূচি গ্রহণ করে চলেছে।
পুনর্বাসিত পরিবারের মানুষ যদি তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে, তাহলে তা দেশের সার্বিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সরকারের এমন যুগান্তকারী পদক্ষেপকে ভূলুণ্ঠিত করছে কিছু অসাধু অর্থলোভী মানুষ। বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়ন সমুদ্র ও সুন্দরবন উপকূলবর্তী হওয়ায় এলাকার মানুষ অনেকটা দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ঘর থেকে বঞ্চিত এসমস্ত অসহায় পরিবার। যারা এই সুবিধা ভোগ করছে তাদের জমি জায়গা, ঘরবাড়িসহ সবকিছুই আছে। সমাজের অনেক মানুষের প্রশ্ন আসল ভূমিহীনরা কেন সরকারি পূনর্বাসনের এই সুবিধা পাচ্ছে না ?
মুজিব শতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘরের তালিকার নাম উঠাতে সক্ষম হয়েছে অচিন্ত্য। বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের মাদিয়া গ্রামের তেজেন্দ্রনাথের ছেলে অচিন্ত্য মন্ডল (৩৮)। ২৫ শতাংশ ভিটার উপরে দুই রুমের একটা ঘর নিয়ে তার বসবাস। আছে রান্নাঘর ও ঠাকুরঘর। শুধু তাই নয় এস এ খতিয়ান ২৭৮,দাগ নং ৮৮৭,৮৮৮,৮৮৯ ও ৮৯০ দাগে ৭৯ শতাংশ জমি আছে অচিন্তের বাবা তেজেন্দ্রনাথের।
অচিন্ত্য তারই একমাত্র ছেলে হওয়া সত্ত্বেও ভূমিহীনদের দেওয়া ঘরের ইট বালু পৌঁছে গেছে তার বাড়িতে। কিভাবে পেলেন এমন প্রশ্নের জবাবে অচিন্ত্য বলেন, আমার বিপক্ষে যে তথ্য প্রমাণ দিয়েছে সেটা সঠিক নয়। জমির ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে অচিন্ত্য বলেন জমি নদীভঙ্গনে চলে গিয়েছে কতটুকু আছে আমি জানিনা। অথচ এই অচিন্ত্য বুড়িগোয়ালিনী ভূমি অফিসের গত ছয় থেকে সাত বছর জমি জায়গা সংক্রান্ত কাজ করে আসছে।
বুড়িগোয়ালিনী ভূমি কর্মকর্তা কামাল হোসেনের কাছে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মোবাইল ফোনে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। অফিসে দেখা করতে বলেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আক্তার হোসেন বলেন, আমি বিষয়টি আজকেই দেখছি। অনিয়ম পাইলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তবে দুঃখজনক হলো, সরকারের এমন গুরুত্বপূর্ণ ও মানবিক প্রকল্পের কর্মকাণ্ডেও এর আগে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সরকারি অর্থে নির্মিত ভূমিহীন, গৃহহীন মানুষের জন্য নির্মিত ঘরের মান নিয়ে ইতিপূর্বে প্রশ্ন উঠেছে। এসব ঘরের মান যাতে ঠিক থাকে, সেজন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারের এসব প্রকল্প দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে আশার সঞ্চার ঘটিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামী দিনে দেশে বৃষ্টি-বন্যা-ঝড়-এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের তীব্রতা আরও বাড়বে। কাজেই ভূমিহীন, গৃহহীন মানুষের জন্য নির্মিত ঘরগুলো যাতে টেকসই হয়, সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।
সমাজের প্রান্তিক মানুষের জন্য যেসব নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি নেওয়া হচ্ছে, সেগুলোর পরিধি বাড়ানো দরকার। এক্ষেত্রে যাতে দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি না হয়, তা নিশ্চিত করা দরকার। বস্তুত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সরকার যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, সেগুলোর লক্ষ্য অতিদরিদ্র মানুষের স্বাভাবিক জীবনধারা সমুন্নত রাখা। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নামে বরাদ্দ অর্থে যাতে অন্য কেউ ভাগ বসাতে না পারে, তা নিশ্চিত করা সম্ভব না হলে দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। করোনার কারণে দরিদ্র মানুষ নানা জটিলতার সম্মুখীন হয়েছে।
এ অবস্থায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে প্রকৃত ভূমিহীন, গৃহহীন ও অসচ্ছল মানুষ যাতে উপকৃত হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। চলতি কোটায় বুড়িগোয়ালিনী ও মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নে যথাক্রমে ১৫ ও ২৫ টি ঘরের তালিকা হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। উপজেলা প্রশাসন তালিকা অনুযায়ী পরিদর্শন করলে আরো অনেক ঘটনা বেরিয়ে আসবে বলে দাবি সচেতন মহলের।
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)