সাতক্ষীরা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. আল মাহমুদ পলাশের বিরুদ্ধে মামলা
রঘুনাথ খাঁ:
কখনো এনজিও কর্মী, কখনো বঙ্গবন্ধু পেশাজীবী পরিষদ নেতা আবার কখনো কৃষক লীগের নেতা পরিচয়ে অসহায় মানুষকে অনলাইন ব্যবসায় ঢুকিয়ে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরা জজ কোর্টের আইনজীবী ও কামাননগর দক্ষিণপাড়ার আবু আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ পলাশের বিরুদ্ধে। নিরুপায় হয়ে পাঁচ লাখ টাকা প্রতারনার অভিযোগে ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে গত বুধবার সাতক্ষীরা সদর থানায় প্রতারণার মামলা করেছেন শহরের পলাশপোলের নাজমা খাতুন।
পলাশপোলের মোঃ আলম এর স্ত্রী নাজমা খাতুন জানান, কামাননগর দক্ষিণপাড়ার ইয়াকুব আলী গাজীর ছেলে সাতক্ষীরা জজ কোর্টের আইনজীবী আবু আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ পলাশ (৪৫)নিজেকে বঙ্গবন্ধু পেশাজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতেন। ঘনিষ্টতার কথা বলতেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলামের সঙ্গেও। এর আগে তিনি বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির যুব সংগঠণের নেতা ও বেসরকারি সংস্থা সুশীলনের চাকুরি করতেন। করতেন ডেসটিনিও। তার সঙ্গে পরিচয় সূত্রে একপর্যায়ে তাকেও বঙ্গবন্ধু পেশাজীবী পরিষদের সদস্য করিয়ে নিয়ে পরিচয়পত্র দেওয়া হয়। পরে আল মাহমুদ পলাশ জেলা কৃষক লীগের নেতা বনে যান।
নাজমা আরো বলেন, ‘বিশ্ববাজার বাইওটেক’ অনলাইন মার্কেটিং এ বিশেষ সইবধার কথা বলে আল মাহমুদ পলাশ তাকেসহ পরিবারের সদস্যদের নামে পাঁচটি আইডি খুলিয়ে দেন। পাঁচটি আইডি বাবদ তাকে পাঁচ হাজার টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয় চার হাজার টাকা। ওই টাকা থেকে তাকে নগদ এক হাজার টাকাও দেন পলাশ। অনলাইন ব্যাংকের কমিশন ১২০ টাকা হলে তা তোলা যাবে এমন কথা বলে তাকে একটি ব্যাংকে স য়ী হিসাব খুলতে বলা হয়। লাভের আশায় তিনি নিজের ১৮জন পরিচিতদের নিয়ে একের পর এক আইডি খুলেছেন। প্রথম দিকে তিনি কমিশন বাবদ পেয়েছেন এক হাজার ৫৬০ টাকা। ৩০০ আইডি পার হয়ে যাওয়ায় তাকে কোম্পানীর শেয়ারহোল্ডার করে দেওয়ার কথা বললেও আল মাহমুদ পলাশ তাকে করে দেনননি। এমনকি নিজের স্বামীর মোজাইক টাইলস বিক্রি করে ও অন্যদের দিয়ে আইডি খুলিয়ে তিনি চার লাখ ৮০ হাজার টাকা জমা দেন পলাশের কাছে। পরে পলাশ তাকেসহ অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা বন্ধ করে দেন। বারবার তাগিদ দিয়েও টাকা ফেরৎ না পাওয়ায় তিনি গত ২০ মে শেষ বারের মত পলাশের বাড়িতে টাকা চাইতে গেলে তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপরপরই তিনি জানতে পারেন যে ‘বিশ্ববাজার বাইওটেক’ কোম্পানীর ঢাকা প্রধান কার্যালয়ের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা প্রতারণার অভিযোগে র্যাব এর হয়ে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। তখন নিরুপায় হয়ে তিনি সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মহোদয়ের শরনাপন্ন হন। পুলিশ সুপারের নির্দেশে তিনি গত ২৬ মে আল মাহমুদ পলাশের বিরুদ্ধে ৬৮ নং প্রতারণার মামলা করেন। মামলায় তিনি ১৬ লাখ টাকা প্রতারণার শিকার অনিমেষ কুমার ঘোষাল, নয় লাখ টাকা করে প্রতারণার শিকার নূর হোসেন ও আব্দুস সবুর, দুই লাখ ১০ হাজার টাকা প্রতারণার শিকার বিলাল হোসেন ও এক লাখ ৮০ হাজার টাকা প্রতারণার শিকার সাগর হোসেনের নাম সাক্ষী হিসেবে উলেখ করেছেন।
নাজমা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, তিনি বর্তমানে কিডনি রোগে আক্রান্ত। স্বামীর টাইলস মিস্ত্রীর কাজও বন্ধ হওয়ার উপক্রম। ফলে দু’ সন্তানের পড়াশুনা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। মামলার আগে বিষয়টি আল মাহমুদ পলাশকে জানালেও তিনি কোন সহানুভুতি দেখাননি। উপরন্তু গত ২৯ মে তিনি সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম হুমায়ুন কবীরের আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে বিচারক মীমাংসা ছাড়া জামিন না দেওয়ার কথা বলায় অ্যাড. এম শাহ আলম, অ্যাড. তোজাম্মেল হোসেন তোজামসহ ২০ জনেরও বেশি আইনজীবী তার জামিন আবেদন ফিরিয়ে নেন। এরপরও আল মাহমুদ পলাশ এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। পলাশ সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষকে অন লাইন ব্যবসায় মোটা অংকের লাভ দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা প্রতারণা করেছেন।
এ ব্যাপারে আল মাহমুদ পলাশের সঙ্গে শনিবার বিকেলে তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক মোঃ শফিউল ইসলাম বলেন, আল মাহমুদ পলাশের অবস্থান সম্পর্কে জানার জন্য তারা ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। সূযোগ পেলেই তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।